1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চেক ডিজঅনারের মামলার লাভ-ক্ষতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ নভেম্বর ২০২২

চেক ডিজঅনারের মামলা আর করা যাবে না-হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

https://p.dw.com/p/4K0a9
ঢাকার একটি ব্যাংকে লেনদেনের ব্যস্ততা (ফাইল ফটো)
ঢাকার একটি ব্যাংকে লেনদেনের ব্যস্ততা (ফাইল ফটো)ছবি: Mortuza Rashed/DW

এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব না পাওয়া গেলেও আইন বিশ্লেষক ও ব্যাংকাররা বলছেন ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে ব্ল্যাংক চেক রাখে তার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই৷  এই রায়ে সেটা বন্ধ হবে যা ইতিবাচক৷

তারা বলছেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত না দিলে অর্থ ঋণ আদালতে মামলার বিধান আছে৷  আর ঋণের বিপরীতে তো জামানত দিতে হয়৷ কিন্তু ব্যাংকগুলো অধিক নিরাপত্তার জন্য ব্ল্যাংক চেক রাখে৷ ফলে ব্যাংক অর্থঋণ আদালত ও চেক ডিসঅনার এই দুই ধরনের মামলা করতে পারে৷ কিন্তু ব্যাংক চেক রেখে সেখানে টাকার অংক বসিয়ে তা ডিনঅনার করিয়ে মামলা করা সংবিধান ও আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ এতে ব্যাংক ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতারণার সুযোগ থাকে৷

হাইকোর্টে বিচারপতি মো. আশরাফল কামালের একক বেঞ্চ বুধবার তার পূর্নাঙ্গ রায়ে ব্যাংকসহ কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন থেকে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবেনা বলে আদেশ দিয়েছেন৷ হাইকোর্ট এই রায়ের পাশাপাশি চেক ডিজঅনারের সব ধরনের মামলা স্থগিত রাখতে বলেছেন৷

মূল সমস্যা ব্ল্যাংক চেক

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন," এখানে মূল সমস্যা হলো হলো ব্ল্যাংক চেক৷ ব্যাংকগুলো যেকোনের ক্ষেত্রে ব্ল্যাংক চেক রেখে দেয়৷ এই প্র্যাকটিসটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে৷ ব্যাংকের হাতে ঋণের বিপরীতে দুইটি হাতিয়ার থাকে ব্ল্যাংক চেক এবং জামানত৷ কিন্তু ব্ল্যাংক চেক আইন ও সংবিধান সমর্থন করে না৷ আদালত সুশাসনের কথা ভেবে এই রায়টি হয়তো দিয়েছেন৷”

অন্যদিকে এই চেক ডিজঅনারের মামলা আর করতে পারায় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ আদায়ে ক্ষতির মুখে পড়বে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন," অসুবিধার দিক হলো আগে ব্যাংক সহজেই চেক ডিজঅনারের মামলা করে জেলে পাঠাতে পারত৷ এখন সেটা পাঠাতে পারবেনা৷ ব্যাংকগুলো ওটাকে সহজ মনে করত৷ কিন্তু এখন অর্থঋণ আদালতে যেতে পারবে৷ আর ব্যাংকগুলোকে এখন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে জামানতের বিষয়টি আরো ভালোভাবে দেখে ঋণ দিতে হবে৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," চেক নিয়ে নানা ধরনের প্রতারণার সুযোগ আছে৷ তবে আমাদের দেশে আইনের সুযোগ নিয়ে আরো অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারণার সুযোগ আছে৷”

‘ব্যাংক যে ব্ল্যাংক চেক রাখে তা কোনোভাবেই আইন সম্মত নয়’

ব্যাপক প্রতারণা হয়

বাংলাদেশের আইনে চেক ডিজঅনার মামলায় শাস্তি হলো এক বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিন গুণ পরিমাণ অর্থদন্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে৷ আর এই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে জরিমানার অর্ধেক টাকা জমা দিয়ে আপিল করতে হবে৷ এই মামলাটি জামিন অযোগ্য৷

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক বিচারক আজিজুর রহমান দুলু বলেন, চেক বলতে চেক দাতার লিখিত চেককেই বুঝায়৷ কিন্তু ব্যাংক যে ব্ল্যাংক চেক রাখে তা কোনোভাবেই আইন সম্মত নয়৷ ব্ল্যাংক চেক রাখাও একটি অপরাধ৷ তার কথা," ব্যাংগুলো আসলে এই চেকের মামলা দিয়ে নিরীহদের হয়রানি করে৷ দেশে যারা বড় বড় ঋণ খেলাপি তাদের  বিরুদ্ধে আমরা কোনো চেক ডিজঅনারের মামলা দেখি না৷ তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবহার করে ঋণ নেয়৷ আর ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার সময় ঠিকমত জামানত দেখে যেনতেনভাবে ঋণ দেয়৷  ফলে তারা অর্থ ঋণ আদালতে প্রতিকার তেমন পায় না৷ তারা যদি ঋণ দেয়ার নীতিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে তাহলে অর্থঋণ আদালতেই দ্রুত প্রতিকার পাওয়া সম্ভব৷ মানুষকে জেলে পাঠানো নয়, অর্থ উদ্ধারই মামলার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত৷”

আর সিপিসির অর্ডার ৩৭ রুল-২ ব্যবহার করেও তাতে ডিজঅনার হওয়া চেকের টাকা দ্রুত উদ্ধার করা যায় বলে জানান তিনি৷

তিনি জানান," এই চেক ডিজঅনারের মামলা নিয়ে অনেক প্রতারণা আছে৷ একজন চুক্তি করে আরেকজনের কাছ থেকে এক কোটি টাকা নিলো৷ সঙ্গে ব্ল্যাংক চেকও দিলো৷ ওই ব্যক্তি টাকা শোধের পরও ব্ল্যাংক চেকে টাকার পরিমান বসিয়ে ও তারিখ দিয়ে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারে৷ কারণ ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর ছাড়া আর কিছুই থাকেনা৷ এরকম অনেক মামলা হয়েছে৷”

আইনের পরিবর্তন আনতে হবে

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থ সংক্রান্ত আইনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন," ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত নিচ্ছে৷ তার ওপর আবার ব্ল্যাংক চেক নিচ্ছে৷ এটার প্রয়োজন আছে কী না সেই বিতর্ক আগেই ছিলো৷ এখন হাইকোর্টের রায়ে বলা হলো চেক ডিজঅনারের মামলা করা যাবে না৷ ফলে ব্যাংক আর ব্ল্যাংক চেক নিতে পারবেনা৷ কোনো ক্ষেত্রেই ব্ল্যাংক চেক নেয়া যাবে না৷”

তবে তিনি বলেন," এর আগে আপিল বিভাগের একটি নির্দেশনা আছে ডিজঅনারের মামলা এবং অর্থ ঋণ আদালতের মামলা একসঙ্গে চলতে পারবে৷ তবে একটির রায় হলে অন্যটি চলবে না৷ এখন দেখা যাক হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে টেকে কী না৷ টিকলে আইনে পরিবর্তন আনতে হবে৷”

কিন্তু এই চেক ডিজঅনারের মামলা নিয়ে অনেক হয়রানি ও প্রতারণা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতারণা বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ কাজে দেবে৷ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক ব্যক্তি তার বাড়ি বিক্রি করার জন্য আরেক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন যে তিনি তিন মাসের মধ্যে বাড়িটি বিক্রি করে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পাবেন৷ এজন্য তাকে আগাম চেক দেয়া হলো৷ কিন্তু ওই ব্যক্তি তিন মাসের মধ্যে বাড়ি বিক্রি করে দিতে পারলেন না৷ অথচ উল্টো চেক ডিজঅনারের মামলা করে দিলেন৷

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখন সাড়ে পাঁচ লাখের মত চেক প্রতারণার মামলা বিচারাধীন আছে৷