1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চুক্তি নিয়ে সঙ্কট: মাঠে থাকবে না ইস্টবেঙ্গল?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ জুলাই ২০২১

কর্পোরেটের ফাঁদে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের লাখ লাখ সমর্থকের আবেগ। বিনিয়োগকারীর শর্তে চুক্তি করতে রাজি নয় লাল হলুদের শাসক গোষ্ঠী। তা হলে কি ইস্টবেঙ্গল আগামী মৌসুমে মাঠে নামতে পারবে না?

https://p.dw.com/p/3xqwm
Bangladesch Fußball Kalkutta Protest
ছবি: Payel Samanta/DW

ইউরোপের ধাঁচে ভারতেও পেশাদার ফুটবল লিগ চালু হয়েছে। ইন্ডিয়ান সকার লিগের অন্যতম আকর্ষণ সেই ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান। কিন্তু বিনিয়োগকারী বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সংকটে লাল হলুদ শিবির। কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে উত্তাল ময়দান থেকে নেট দুনিয়া। ক্লাবের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন সমর্থকরা। চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। দ্বিধাবিভক্ত সমর্থকদের একাংশ আছেন ক্লাব শাসকদের পাশেই।

ইস্টবেঙ্গলের স্পনসর শ্রী সিমেন্ট। তাদের সঙ্গে ক্লাব কর্তাদের সংঘাত সদ্য সামনে এসেছে। বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত হলেও এখনো চুক্তিতে সই করেনি ইস্টবেঙ্গল। এর ফলে দল গঠনের কাজে হাত দেয়নি শ্রী সিমেন্ট। কেন এই অচলাবস্থা? কর্তাদের বক্তব্য, ইনভেস্টরের টার্মশিটের সঙ্গে মূল চুক্তির বিস্তর ফারাক। এই চুক্তিতে সই করলে ক্লাবটাই বিক্রি হয়ে যাবে। বিনিয়োগকারী যে শর্তে চুক্তি করতে বলছেন তাতে ক্ষুণ্ন হবে সভ্য, সমর্থকদের স্বার্থ। কী সেই শর্ত? ক্লাবের কার্যকরী সমিতির সদস্য, প্রাক্তন সভাপতি ডা. শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সভ্য-সমর্থকরা ক্লাবে ঢুকতে পারবেন না। ইস্ট বেঙ্গল প্রাঙ্গণে সভ্যরা সমর্থকরা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন এবং শাস্তি পাবেন। এখন সভ্য সমর্থকদের ক্লাব হলে এই সমস্ত নিয়ম চালু করা যায় না। তাও আমরা বলেছিলাম একসঙ্গে বসে কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু ওরা আগে সই করতে বলছেন।”

‘আমরা বলেছিলাম একসঙ্গে বসে কথা বলা যেতে পারে’

যদিও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একটা বড় অংশ দ্রুত এই অনিশ্চয়তার অবসান চাইছেন। ইবিআরপি, ইস্টবেঙ্গল আল্ট্রাস নামে সমর্থকদের সংগঠন ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তাদের দাবি, দ্রুত শ্রী সিমেন্টের চুক্তিতে সই করুক ক্লাব। নইলে ইস্টবেঙ্গল এ বার আইএসএল, কলকাতা ফুটবল লিগ খেলতে পারবে না। এই অংশকে জবাব দিচ্ছেন শাসক গোষ্ঠীর সমর্থকরা। তাদের দাবি, অন্যায় শর্তের সামনে নতিস্বীকার করা যাবে না। এর ফলে শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব ঘিরে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।

এই দুই পক্ষের সমর্থকরা এখন যুযুধান। একুশে জুলাই, বুধবার ক্লাবের কাছাকাছি দুই শিবির প্রায় মুখোমুখি হতে বসেছিল। পুলিশ দুই তরফের সমর্থকদের ভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করে রুখে দেয়। স্লোগান চলতে থাকে, তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়। এক পক্ষের সর্মথকরা ক্লাবের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। 'সাইন এন্ড রিজাইন' শীর্ষক আন্দোলনে দাবি তোলা হয়, দ্রুত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি সেরে পদ ছাড়তে হবে কর্তাদের। লাল-হলুদের এই জমায়েতে নজর কেড়েছে নীল-সাদা ব্যান্ড। সূত্রের খবর, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সমর্থকরা কব্জিতে নীল-সাদা ব্যান্ড বেঁধেছিলেন। তাঁরা ক্লাবের স্বার্থ বুঝে চুক্তি করার পক্ষপাতী। তা হলে কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের জন্যই এই নীল-সাদা? তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করা হচ্ছে? জমায়েতে উপস্থিত সর্মথকেরা অবশ্য দাবি করেছেন, এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ লাঠি চালায়। যদিও পুলিশ লাঠি চালানোর কথা স্বীকার করেনি।

প্রসূন ব্যানার্জি

ইস্টবেঙ্গলের এই সংকটকে কীভাবে দেখছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান? আদ্যন্ত মোহনবাগানি, ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন তারকা ও সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ইস্টবেঙ্গল শুধু ক্লাব কর্তা বা কয়েক হাজার সমর্থকের ব্যাপার নয়, পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে আছে এই ক্লাব। ওদের এই সংকট শিগগিরই কেটে যাবে বলে আশা করি। প্রয়োজনে ওদের পাশে দাঁড়াতে রাজি। কিন্তু আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকায় সরাসরি এগোতে পারছি না।” ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে দিয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান মহামেডান কোনো টুর্নামেন্টে না খেললে তার জৌলুস কমে যায়। যদি লাল-হলুদ দলকে আইএসএল-এ না পাওয়া যায়, তা হলে ফুটবলের ক্ষতি। আশা করি তেমন পরিস্থিতি হবে না।”

এ বিষয়ে প্রসূনের বক্তব্য, "আমরা টাকা ছাড়াই খেলেছি। কিন্তু টাকাও দরকার। তাই স্পনসর থাক। সেই সঙ্গে আবেগও মর্যাদা পাক।” লাল-হলুদ সমর্থকদের আবেগ আপাতত বিশ বাও জলে। চুক্তি নিয়ে জটিলতা ক্রমশ গভীর হচ্ছে।