বিশেষ খাতিরের বিপদ
২৮ মে ২০১৩লি কোচিয়াং যে শুধু প্রথমে জার্মানি সফর করছেন, এমন নয়৷ এ যাত্রায় তিনি গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নে শুধুমাত্র জার্মানি সফর করছেন৷ চীনের কাছে জার্মানি হলো ইউরোপে আলাপচারিতার প্রথম ঠিকানা৷ ইইউ-তে সংরক্ষণনীতি মাথা চাড়া দেওয়ার উপক্রম করলে, বেইজিং বার্লিনেই আশ্বাস খোঁজে৷ ইইউ-এর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক বিরোধ বাধলে জার্মানিরই সর্বাধিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা৷ কেননা চীন ইতিমধ্যে জার্মানির তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী হয়ে উঠেছে৷
চীনে জার্মান পণ্যের চাহিদা পূর্বাপর অটুট, যে কারণে জার্মানি মোটামুটি বহাল তবিয়তেই ইউরো সংকটের ধাক্কা সামলে উঠতে পেরেছে৷ কাজেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে আপাতত চীন থেকে আমদানিকৃত সোলার প্যানেলের উপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল স্বভাবতই তার বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেছেন৷ অপরদিকে এই ইউরো সংকটে ত্রাণকর্তা হিসেবেও বেইজিং-এর একটা ভূমিকা থাকতে পারে, বলে বার্লিনের ধারণা৷ সেই ইউরো সংকট চীনের পক্ষেও খুব স্বাস্থ্যকর নয়, কেননা চীনে উৎপাদিত পণ্যের সবচেয়ে বড় গ্রাহকরা এই ইউরোপে বসে৷ এবং সংকটে সেই গ্রাহকরা তাদের ফরমায়েশ কমালে, সুদূর চীনে কারখানা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷
চীন ও জার্মানির মধ্যে তথাকথিত ‘সংলাপ' চলেছে অন্তত ৬০ রকমের – গুণেছেন বিশেষজ্ঞরা৷ চীনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াং-এর সফর আবার প্রমাণ করল যে, উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে না৷ সেই সম্পর্ক এখন এতটাই গভীর যে ক্ষেত্রবিশেষে ‘‘বিশেষ সম্পর্কের'' কথাও বলা হয়ে থাকে৷ কিন্তু সে ‘‘বিশেষ সম্পর্ক'' জার্মান অথনীতির পক্ষে যতই অর্থকরী হোক না কেন, তা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ চীনা নীতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা নিয়ে চিন্তার কারণও আছে বৈকি৷
চিন্তা মূলত এই নিয়ে যে, অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিভাজন আনা সম্ভব হয়, তাহলে ইউরোপ কোনোদিনই তার যথাযুক্ত রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবে না৷ অন্যদিকে যতদিন পর্যন্ত না ইইউ একটি যৌথ চীনা নীতিতে আসতে পারছে, ততদিন অন্তত বার্লিনকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে খানিকটা তাল মিলিয়ে চলতে হবে, আলাপ-আলোচনা করতে হবে৷ একমাত্র এভাবেই ইউরোপ বহির্বিশ্বে তার মূল্যবোধ প্রদর্শন করতে পারবে, বোধগম্য করে তুলতে পারবে৷