চিরকুমার ক্যাথলিক পাদ্রিদের বিয়ের প্রশ্ন
২৫ মার্চ ২০১০
ক্যাথলিক ধর্মে পাদ্রিদের বিয়ে করার নিয়ম নেই৷ প্রশ্ন উঠেছে, যৌন আকাঙ্খা মেটানোর জন্যই কি এই ধর্মযাজকদের কেউ কেউ চড়াও হতেন শিশু-কিশোরদের ওপর ? এখন পাদ্রিদের বিয়ে করা এবং না করা নিয়ে উঠেছে বিতর্ক৷ ভ্যাটিক্যানের মুখপাত্র ফেদেরিকো লম্বার্দি জানান, ‘‘ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কিছুর মূলে রয়েছে খুবই ছোট একটি সমস্যা৷ তা হল ক্যাথলিক পাদ্রিদের বাধ্যতামূলক চিরকুমার থাকার নিয়ম ৷ এ কারণেই এসব যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে বলে তাঁরা মনে করছেন৷ এ ধরণের প্রশ্ন নিয়ে এলোমেলো আলোচনা না করে চিন্তা ভাবনা করে দেখা উচিৎ৷ আমার মনে হয়, চেষ্টা করলে হয়তো এ দুটির মধ্যে একটি যোগসুত্র আমরা বের করতে পারবো৷ সমাধানও হয়তো পাবো৷''
হামবুর্গের বিশপ ইয়োখেন ইয়াশকে ‘পাদ্রিদের চিরকুমার থাকা'- র বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ তিনি মনে করেন, বিবাহিত পাদ্রি গির্জা, সমাজ জীবন বিষয়ে জ্ঞান দানে সহায়ক হবেন আর তাতে গির্জারই মঙ্গল হবে৷ গির্জার জন্য বিবাহিত পাদ্রিরা সুফল বয়ে আনতে পারবে৷ পরিবার কী, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কী - তার প্রতি পাদ্রিরা নিজেদের একাত্ব করতে পারবে৷
জার্মান ক্যাথলিকদের কেন্দ্রিয় কমিটিতে রয়েছেন আলিয়স গ্লুক৷ বিবাহিত পাদ্রি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘‘ আমি আশা করছি বিবাহিত পাদ্রিদের জন্য নতুন করে দ্বার উন্মুক্ত করা যাবে৷ কিন্তু যৌন নিগ্রহ বন্ধ করতে পাদ্রিদের বিয়ে করতে হবে - সেটা আমি বিশ্বাস করি না৷''
চার্চ-এর কর্তৃত্বের সমালোচনাকারী সংস্কার আন্দোলন, ‘‘ভিয়ার জিন্ড কির্শে '' -এর মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান ভাইজনার এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘বিয়ে করলেই যে কোন পাদ্রি কোন শিশুর ওপর যৌন নিগ্রহ চালাবে না তা বলা যায় না৷ এটা কোন সমাধান নয়৷ কিন্তু, ‘একজন পাদ্রিকে চিরকুমার থাকতে হবে' এর অর্থ হল - নারী এবং যৌন আকাঙ্খাকে জোর করে দূরে সরিয়ে রাখা৷''
পোপের প্যাস্টোরাল চিঠি যথেষ্ঠ নয়
আয়ারল্যান্ডে নিগ্রহের শিকার হওয়া শিশুদের সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অন্তত চারটি গ্রুপ৷ এসব গ্রুপের জোর দাবি স্বয়ং পোপকে এসব শিশু-কিশোরদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে৷ পোপের লেখা চিঠিতে সন্তুষ্ট নয় তারা৷
জার্মানির মিউনিখ শহরের একজন মনস্তত্ববিদ ভের্নার হুথ এক পাদ্রির কথা জানিয়েছেন, যার চিকিৎসা করেন তিনি৷ ঐ পাদ্রি ১২ বছর ধরে শিশুদের ওপর যৌন নিগ্রহ চালিয়েছিল বলে অভিযোগ৷ ভের্নার হুথ বলেন, ‘‘আমি যখন তাঁর চিকিৎসা করছিলাম, তিনি কখনও পুরোপুরি সহযোগিতা করেনি৷'' বার্তা সংস্থা এপিকে টেলিফোনে এক সাক্ষাৎকারে হুথ আরো জানান, ‘‘ঐ রেভারেন্ড কোন ধরণের থেরাপি চালিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন৷ তিনি যে নিরীহ শিশুদের ওপর যৌন নিগ্রহ চালিয়েছেন সেকথাও পুরোপুরি অস্বীকার করতেন৷ তিনি সবসময় মনে করতেন তিনি নিজেই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন৷''
ভের্নার হুথ আরো জানান, ১৯৮০ সালে শিশুদের ওপর যৌন নিগ্রহের পর বাবা-মায়েরা অভিযোগ করায় ঐ পাদ্রিকে এসেন শহর থেকে মিউনিখে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷ ১৯৮৬ সালে আবারো একই অভিযোগ আনা হয় হুলারমানের বিরুদ্ধে৷ হুলারমানকে মিউনিখ থেকে আবারো পাঠানো হয় ফ্রাইজিং শহরে৷
প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক