1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাকায় পিষ্ট শিশুর জীবন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ মে ২০২২

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রায় ২০ ভাগই শিশু৷ গত প্রায় আড়াই বছরে দেড় হাজারেরও বেশি শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে৷ তাদের অধিকাংশের জীবন যায় যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে৷

https://p.dw.com/p/4BrEx
Bangladesh Dhaka Straßenunfall
ফাইল ফটোছবি: bdnews24

এইভাবে মাসে গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৬০টি শিশু৷ দিনে দুইটি শিশু রাস্তা পারাপারে পিষ্ট হয়ে বা যাত্রী হিসেবে মারা যাচ্ছে তারা৷ তাদের বয়স এক মাস থেকে ১৮ বছরের মধ্যে৷
বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া এবং বাড়ির পাশের সড়কে খেলতে গিয়েই শিশুরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে বেশি৷ আর গ্রামের সড়কগুলো তাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ৷ তাদের গবেষণা বলছে,  শিশুরা রাস্তা পারাপারের সময় যানবাহনের ধাক্কা বা চাকায় পিষ্ট হয়ে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়৷ তাদের সংখ্যা মোট নিহতের শতকরা ৬১.৬৫ ভাগ৷ স্থান বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি শিশু নিহত হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসার পথে, তাদের সংখ্যা শতকরা ৪৩.৬৬ ভাগ, বসত বাড়ির আশপাশে সড়কে খেলাধুলার সময় নিহত ১১.৫২ ভাগ৷ সড়ক বিবেচনায় সর্বোচ্চ শিশু নিহত হয় গ্রামীণ সড়কে, শতকরা ৫৩.১ ভাগ আর শিশুদের প্রধান শত্রু ইজিবাইক, নসিমন- করিমন ও ভটভটি জাতীয় যানবাহন৷ এইসব যানবাহনেই প্রায় ৭০ ভাগ শিশু নিহত হয়৷
তাদের গবেষণা বলছে ২০২০ থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল  পর্যন্ত ২৮ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৬৭৪ টি শিশু নিহত হয়েছে৷
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন," গ্রামীণ সড়কে এবং মহাসড়কে শিশুরা দুর্ঘটনার শিকার বেশি হওয়ার কারণে তারা চিকিৎসা তেমন পায় না৷ বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার তেমন ব্যবস্থা না থাকায় আহত শিশুদের মৃত্যু বাড়ছে৷ গ্রামীণ জনপদসহ সড়ক মহাসড়কে এখন অননুমোদিত যানবাহন ইজিবাইক ও নসিমন-করিমনের দৌরাত্ম্য ফলে শিশুরা তাদের শিকারে পরিণত হচ্ছে৷''
তিনি বলেন," বাংলাদেশে সার্বিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ সড়কের অবস্থা খারাপ, যানবাহনের অবস্থা খারাপ , চালক ও মালিকদের অবস্থা খারাপ৷ এর সার্বিক উন্নয়ন হলে পরিস্থিতিরও উন্নয়ন হবে৷ কিন্তু তারপরও শিশুদের জন্য আলাদাভাবে কিছু করার আছে৷ তিনটি বিষয় খুব স্পষ্ট যে শিশুরা খেলতে গিয়ে, রাস্তা পার হতে গিয়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়৷ আর তাদের অধিকাংশই গাড়ির ধাক্কায় বা চাপা পড়ে নিহত হয়৷
তার কথা," স্কুল কলেজের সামনে শিশুদের নিরাপত্তার জন্য উন্নত সড়ক ব্যবস্থাপনা ও সড়ক নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করা যায়৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাস্তার পাশে৷ শহরে শিশুরা মূল সড়কেই নামতে বাধ্য হয়৷ গ্রামেও তারা সড়কের পাশেই থাকে৷ এগুলো ভেবে দেখার বিষয় আছে৷ আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে শিশুদের সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা৷ অভিভাবকদেরও দায়িত্ব আছে৷ ট্রাফিক পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে৷ এটা খুবই দুঃখজনক যে জাতির জন্য সম্ভাবনাময় শিশুরা যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে জীবন দিচ্ছে৷ ক্ষতিপুরণের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই উদ্যোগ নেই অবৈধ যানবাহন বন্ধ হচ্ছে না৷''
বিশ্লেষকেরা মনে করেন,  পরিবহণ ব্যবস্থা শিশুবান্ধব হওয়া প্রয়োজন৷ তথ্য উপাত্ত বলছে যানবাহনের বেপরোয়া গতির শিকার হচ্ছে শিশুরা৷ তারা খেলতে গিয়ে, রাস্তা পার হতে গিয়ে জীবন দিচ্ছে বেশি, যাত্রী হিসেবে তার চেয়ে কম৷ তাই তাদের জন্য সড়ক সবার আগে নিরাপদ করা প্রয়োজন৷ আর তা করতে হলে চালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ন৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ঘরবাড়ি একদম মূল রাস্তার পাশে করা উচিত না৷ সড়ক মহাসড়কে রাস্তার ট্রাফিক সাইন সঠিকভাবে থাকা দরকার, সড়কের বাঁকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷

এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ

সাইদুর রহমান

প্রয়োজনীয় জায়গায় গতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন,"শিশুরা প্রধানত সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় রাস্তা পার হতে গিয়ে বা রাস্তার পাশে অবস্থানের সময়৷ এখন উন্নত বিশ্বে সড়কে জেব্রা ক্রসিং আছে৷ সেখানে পথচারীর অগ্রাধিকার৷ আমাদের এখানে কিছু জেব্রা ক্রসিং আছে কিন্তু চালকেরা সেটা মানেননা৷ কেউ জেব্রা ক্রসিং ধরে পার হতে গেলে তাকে চাপা দেয়া হয়৷ কোনো গাড়ি থামে না৷ শিশুদের রাস্তা পারাপারে সময় ওইসব দেশে বিশেষ সতর্কতার ব্যবস্থা আছে৷ আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেও তাদের জন্য সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, এখানে সেটা নেই৷
তার কথা, "সড়কের বেপরোয়া গতির পিছনে আছে পরিবহণ মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফার লোভ৷ তার শিকার হচ্ছে শিশুসহ পথচারী ও যাত্রীরা৷ এটা দেখার কেউ নেই৷ সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই৷ এসব নিয়ে কাজ করতে গেলে সরকারের কাছে টাকা থাকেনা৷ কিন্তু পিকে হালদারে মত, নর্থ সাউথের মত লোকেরা দেশের টাকা খেয়ে ফেলে, দেশে বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলারের মত অর্থ চুরিচামারি হয়৷ কিন্তু রোড সেফটি নিয়ে কাজ করার টাকা পাওয়া যায় না৷

তার কথা,"ব্যাপক সচেতনতার কাজ করতে হবে৷ গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সবখানে শিশুদের জানাতে হবে কীভাবে রাস্তা পারাপার হতে হয়৷ চালকদের শিশুদের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করতে হবে৷ নয়তো সড়কে শিশুদের মৃত্যু বাড়তেই থাকবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য