ঘানার নির্মম ইতিহাসের ৪০০ বছর
আফ্রিকায় পশ্চিমা দেশগুলোর দাস বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র ছিল ঘানা৷ দেশটির অনেক স্থাপনা আজও সেই নির্মম ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়, চলতি বছর যার ৪০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে৷
লজ্জার স্মৃতি
কেইপ কোস্ট দূর্গ৷ এটি এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের একটি৷ নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাসোসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ধরে আনা মানুষদের ঘানার যে ৪০টি দুর্গে এনে বন্দি করা হত, এটি তার একটি৷ এখানে তাদের জড়ো করে জাহাজে পাঠিয়ে দেয়া হত অ্যামেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে, যেখানে তাদের দাস হিসেবে বিক্রি করত ব্যবসায়ীরা৷
বন্দী নির্যাতন কেন্দ্র
কেইপ কোস্ট দুর্গে আফ্রিকানদের শেকলবন্দি করে অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে আটকে রাখা হত৷ সেখানে শোবার কোনো জায়গা থাকত না৷ ছিল না স্যানিটেশনের ব্যবস্থা৷ দিনের পর দিন বন্দি মানুষদের বর্জ্যে মেঝে ভেসে যেত৷ জাহাজে তুলবার আগে এই পরিবেশে তাদের তিন মাস পর্যন্তও কাটতে হত৷
মৃত্যুকক্ষ
বন্দি পুরুষদের মধ্যে যারা বিদ্রোহ করত তাঁদের ঠাঁই হত এমন কক্ষে৷ অসহনীয় গরম, খাদ্য, পানি আর সূর্যের আলো ছাড়া সেই কক্ষেই দিনের পর দিন আটকে থেকে তাঁদের মৃত্যু হত৷ অবাধ্য নারীদের দুর্গের উঠোনে ফেলে পেটানো হত, শেকল বন্দি করে খোলা আকাশের নীচে ফেলে রাখা হত৷
সামরিক শক্তি
এসব কামান ব্রিটিশ দাস ব্যবসায়ীদের সামরিক শক্তির প্রমাণ দিচ্ছে৷ ১৪০ বছর তারা কেইপ কোস্ট দুর্গকে দাস বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করেছে৷ সতেরো থেকে উনিশ শতকের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকার ৩০ লাখ মানুষকে বন্দি করে দাস হিসেবে এখান থেকে জাহাজে করে পাঠানো হয়েছে আটলান্টিকের অপর পাড়ে৷
ডেনিশ দূর্গ
ফোর্ট ক্রিশ্চিয়ান্সবুর্গ৷ ওসু দুর্গ নামেও এটি পরিচিত৷ ঘানার রাজধানী আকরার ওসু পৌরসভায় এর অবস্থান৷ দুর্গটি তৈরি করেছিল ডেনিশরা৷ প্রথমে তারা স্বর্ণ বাণিজ্যের জন্য আসলেও পরে দাস ব্যবসা শুরু করে৷ সেই ব্যবসা এতটাই রমরমা হয়ে ওঠে যে মূল দুর্গটির আকার পরবর্তীতে চারগুণ বিস্তৃত হয়৷
যেখান থেকে আর ফেরা যায় না
এই দরজা দিয়ে বের করে শেকলবন্দি মানুষদের প্রথম উঠানো হত নৌকায়, তারপর মাঝ সমুদ্রে ভেড়ানো জাহাজে৷ দীর্ঘযাত্রার অমানুষিক নির্যাতনের প্রতি দশজনের চারজনই মৃত্যুবরণ করত৷ আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে যারা বেঁচে থাকত তারা আর কখনোই ফিরতো না তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে৷
ডেনিশ লজ্জা
ভল্টা নদীর পূর্বে অবস্থিত কেটায় ফোর্ট প্রিনজেনস্টেইনের ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিকের দাস বাণিজ্যে ডেনিশদের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেয়৷ ১৭৯২ সালে অবশ্য এই দেশটিই প্রথম দাস বাণিজ্যের অবসান ঘোষণা করে৷ পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে ১২০,০০০ জন দাস পাঠানোর সঙ্গে জড়িত থাকার লজ্জাজনক ইতিহাসটি তাতে ম্লান হয়নি৷
বন্দিশালা
ঘানার রাজধানী আকরায় এই ভবনের অবস্থান৷ কোথাও কিছু লেখা না থাকলেও এটি দাস বাণিজ্যের এক ঐতিহাসিক স্থান৷ ১৬৭৩ সালে ব্রিটিশরা এটি তৈরি করেছিল৷ এখানেও তারা দাস হিসেবে ধরে আনা মানুষদের বন্দি করে রাখত৷ দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও বন্দিশালা হিসেবে এটি থেকে যায়৷ ২০০৮ সাল পর্যন্তও ভবনটি জেলখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷
ইউরোপের অন্ধকার অধ্যায়
ঘানার কেইপ উপকূলে ১৪৮২ সালে এলমিনা দুর্গটি স্থাপন করা হয়েছে৷ এটি সাব সাহারা আফ্রিকায় ইউরোপীয় ধাঁচের সবচেয়ে পুরাতন স্থাপনা৷ পর্তুগিজরা নির্মাণ করলেও পরবর্তীতে ডাচরা সেটি দখল করে৷ ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোম্পানি এলমিনা দুর্গের মাধ্যমে বছরে ৩০,০০০ জন দাস পাঠাত, যার অবসান হয় ১৮১৪ সালে৷