গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
পরপর দুই দিন আগুন লেগেছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপের শরণার্থী শিবিরে। প্রচুর শরণার্থী থাকতেন ওই শিবিরগুলিতে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাঁদের বাসস্থান। কিন্তু এই আগুন ও শরণার্থীদের নিয়ে উঠছে অনেক প্রশ্ন।
ইউরোপের সব চেয়ে বড় শিবির
গ্রিসের এই শরণার্থী শিবির হলো ইউরোপের সব চেয়ে বড় শিবির। প্রায় ১৩ হাজার শরণার্থী ছিলেন এখানে। গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে তাঁদের রাখা হয়নি। লেসবস দ্বীপেই ছিল তাঁদের শিবির। ইউরোপে যাঁরা আশ্রয় নিতে চান, তাঁরাই প্রথমে আসতেন গ্রিসে।
পাঁচ বছর ধরে ছিলেন শরণার্থীরা
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই শিবিরগুলিতে ছিলেন শরণার্থীরা। ২০১৫-১৬তে তাঁরা সব চেয়ে বেশি এসেছিলেন ইরাক ও সিরিয়া থেকে। অন্য দেশ থেকেও এসেছেন। কিন্তু এতদিনেও তাঁদের গ্রিসের মূল ভূখণ্ড বা ইউরোপের অন্য দেশে আশ্রয় জোটেনি। পড়ে থাকতে হয়েছে একটি দ্বীপে।
ছোট জায়গায় অনেক শরণার্থী
গ্রিসের ওই শরণার্থী শিবিরে ছিলেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। গাদাগাদি করে। মানবাধিকার সংগঠনের মতে, ওখানে হাজার তিনেক মানুষ ভালোভাবে থাকতে পারেন। সেখানে চারগুণ বেশি মানুষকে রাখা হয়েছিল। ফলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল।
লকডাউনের কড়াকড়ি
সম্প্রতি ওই শিবিরে থাকা এক শরণার্থীর করোনা ধরা পড়ে। তারপর শুরু হয় লকডাউনের কড়াকড়ি। ক্ষোভ আরো বাড়ে। শরণার্থীদের মতে, ওই জায়গায় কোয়ারান্টিনে থাকা সম্ভবই নয়।
আগুন লাগার পর
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আর শরণার্থীরা যে যা পেরেছেন, তাই হাতে নিয়ে পালাচ্ছেন জায়গা ছেড়ে। তাঁদের মাথার উপর ছাদও আর থাকল না।
রাত কাটছে রাস্তায়
শরণার্থীদের রাত কেটেছে রাস্তায়। সপরিবারে রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন তাঁরা। অনেকে বসে। একসময় কঠিন অবস্থার মধ্যে দেশ ছেড়ে আসতে হয়েছিল। এতদিন শিবিরে ছিলেন। সেটাও পুড়ে গেল। খাবার নেই, জল নেই, নবজাতকের জন্য দুধ নেই। ভয়ঙ্কর অবস্থা।
আগুন লাগার কারণ
কী করে আগুন লাগল এই শরণার্থী শিবিরে? স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্ট বলছে, শরণার্থীরাই শিবিরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা লকডাউনের কড়াকড়ি নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। বছরের পর বছর ওই শিবিরে কাটাতে হচ্ছে বলে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছিল। পরে প্রশাসনও জানিয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছিল।
সাহায্যের হাত
আগুন লাগার পরেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস। জার্মানি ও ফ্রান্স ৪০০ বাচ্চাকে নেবে বলে জানিয়েছে। নেদারল্যান্ড ১০০ জন বাচ্চাকে। জার্মানির চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, এটা হলো প্রাথমিক পদক্ষেপ। যে অপ্রাপ্তবয়স্করা একা, তাঁদের আশ্রয় দেবে জার্মানি। জার্মানির রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া এক হাজার জন শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে চায়।
আপত্তি দক্ষিণপন্থীদের
জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি এ ভাবে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের দাবি, শরণার্থীরা নিজেরাই শিবিরে আগুন ধরিয়েছেন। এরপর তাঁদের ওখানেই থাকতে হবে। গ্রিসের দ্বীপে আবার তাঁদের জন্য শিবির তৈরি করে দেয়া হোক। এ ভাবে জবরদস্তি করে তাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় পাবে, এটা মানা যায় না বলে জানিয়েছে এই চরম দক্ষিণপন্থী দল।
রেডক্রসের দাবি
রেডক্রস বলেছে, যে শরণার্থীরা খোলা আকাশের তলায় আছেন, তাঁদের অবিলম্বে উদ্ধার করুক ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গ্রিসের দ্বীপে শরণার্থীরা খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দ্রুত তাঁদের গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা উচিত বলে তারা মনে করে।