1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গো-রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ব্যর্থ মোদী?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৬ জুলাই ২০১৭

গো-রক্ষার নামে সমানে চলেছে গণপিটুনি ও হত্যাকাণ্ড৷ কিন্তু কেন এ সব ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না সরকার? প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে এ প্রশ্ন ভারতের সুশিল সমাজের৷ ওদিকে গবাদি পশুর ব্যবসার ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত৷

https://p.dw.com/p/2gXFn
ছবি: AP

গো-রক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী মোদী এ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি শব্দই খরচ করেছেন৷ গোমাংস বা গো-ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা মেনে নেওয়া যায় না৷ তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুধু এ কথাই শুনতে চাওয়া হয়নি৷ জানতে চাওয়া হয়েছে কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে? অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর এই ধরনের হিংসা বন্ধ করতে তাঁর সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

এক এনজিও-র জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ গণপিটুনি এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে মোদী ক্ষমতায় আসার পর৷ গোটা ভারতে কয়েক সপ্তাহের ঘটনার দিকে তাকালেই ছবিটা দিনের আলোর মতো ফুটে উঠবে৷ উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডে গোরক্ষার নামে চলেছে একের পর এক হামলা এবং মানুষ খুন৷ বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে কথা বললেও তাঁর সরকার প্রকারান্তরে গো-রক্ষক বাহিনীকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে৷ গত মাসে হরিয়ানার বল্লভগড়ের কাছে ট্রেনে জুনেইদ খান নামে ১৫ বছরের এক মুসলিম কিশোরকে হত্যা করা হয়৷ একদল দুষ্কৃতি গোমাংস খাওয়া এবং গোহত্যা নিয়ে তর্কের জেরে জুনেইদকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে৷ ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকেই এই হত্যা বলে সন্দেহ৷ পুলিশ অবশ্য পরে হত্যাকারীকে মহারাষ্ট্র থেকে গ্রেপ্তার করে৷ কিন্তু এখানেই শেষ নয়৷ গত সপ্তাহেই দিল্লিতে লরিতে করে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় সাতজন শ্রমিক গোরক্ষকদের হাতে গণপিটুনির শিকার হয়৷ কয়েকজনের আঘাত গুরুতর৷

গত ২৯শে জুন ঝাড়খণ্ডের রাঁচির কাছে আলিমুদ্দিন আনসারি নামে একজন গরু ব্যবসায়ী গণপিটুনিতে প্রাণ হারান৷ ঐ মাসেই এক ডেয়ারি মালিকের ওপর শ-খানেক লোক চড়াও হয়৷ মারধর করে এবং তাঁর ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ কারণ? তাঁর ঘরের কাছে পড়েছিল একটা মরা গরু৷ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে গত ২৪শে জুন তিনজন নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে খুন করা হয়৷ অভিযোগ তাঁরা নাকি গরু চুরি করে পাচার করছিল৷ এপ্রিল মাসে আসামে আবু হানিফা এবং রিজাউদ্দিন আলি গণপিটুনিতে মারা যায়৷ সন্দেহ, তাঁরা নাকি গরু চুরি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল৷ পুলিশ অবশ্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে৷

একই ধরনের ঘটনা ঘটে রাজস্থানের আলওয়ারে৷ ৫৫ বছর বয়সি পেহলু খানকে গরু পাচারকারী সন্দেহে এমনভাবে মারধর করা হয় যে, দু'দিন পর হাসপাতালে মারা যায় সে৷ হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন হত্যাকারীকে বাহাবা দিয়েছে বলে শোনা গেছে৷ এহ বাহ্য, মোদীর রাজ্য গুজরাটের উনা শহরের দিকে যাওয়ার রাস্তার পাশে এক দলিত পরিবারকে মরা গরুর চামড়া ছাড়াতে দেখে সেই ছবি কেউ পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়৷ গৌ-রক্ষকদের দল সেখানে পৌঁছে তাঁদের বেধড়ক পেটায়৷ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় দলিত সমাজে৷

২০১৭ সালের প্রথম ছ'মাসে গোরক্ষকদের হাতে প্রাণ হারায় ২২ জন৷ এই ঘটনা ক্রমশই বেড়ে চলেছে৷ থামার লক্ষণ নেই৷ দেশের সুশীল সমাজ অভিযোগের আঙুল তুলেছে মোদীর গৈরিক সরকারের দিকে৷ বলেছে, গোরক্ষার নামে হামলার পেছনে সরকারি প্রশ্রয় রয়েছে৷ অথচ সুপ্রিম কোর্ট হালে জবাইয়ের জন্য গরু-মোষ কেনাবেচা নিষিদ্ধ করার সরকারি নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন৷ দ্বিতীয়ত মোদী সরকারকে এটা বুঝতে হবে যে, গোমাংস ও চামড়ার ব্যবসা মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায়ের পেশা বা জীবিকা৷ সেটা বন্ধ করা অযৌক্তিক৷ এর অভিঘাত দেশের অর্থনীতির ওপরও পড়বে৷ এই নিয়ে মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীরা আওয়াজ তুললে সনাতন সংস্থা, বজরং দল, রাম সেনা, দুর্গা বাহিনী, হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির মতো হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনগুলি তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়৷

সন্দেহ নেই যে এর পেছনে সরকারের প্রশ্রয় আছে: অধ্যাপক ঘোষ

এটাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে বিচার করলেন ইন্ডিয়ান ইন্সিটিটিউট অফ সোশ্যাল স্টাডিজের অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ৷ ডয়চে ভেলে তিনি বললেন, ‘‘সন্দেহ নেই যে এর পেছনে সরকারের প্রশ্রয় আছে৷ তবে এ কথা ঠিক অনেক জায়গায় গরু জবাই করা হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে৷ তাই সেটার সংস্কার দরকার৷ কিন্তু মাংস খেতে দেবো না, বিক্রি করতে পারবে না – এটা কেমন কথা?’’

বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ঘোষ মনে করেন, বুদ্ধিজীবীদের অবস্থানও এক্ষেত্রে আলাদা৷ যেমন কুসংস্কার বা কুপ্রথা নিয়ে যখন কেউ কথা বলছেন, সেটা তিনি কুপ্রথা হিসেবেই বলছেন৷ সেটা গীতা বা মনুসংহিতায় লেখা আছে কিনা সেটা বড় কথা নয়৷ কিন্তু ‘‘মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মতে, কোরানে লেখা থাকলে সেটা কুপ্রথা বা কুসংস্কার হবে না৷ বরং না থাকলেই সেটা কুপ্রথা৷ এটাও ঠিক নয়৷ তাই প্রকাশ্যে এই নিয়ে বিতর্ক বা যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা দেওয়া হোক৷ ধর্মের সঙ্গে সবকিছু জড়িয়ে ফেললে চলে না৷’’ ডয়চে ভেলেকে তাঁর মনের কথা এভাবেই জানালেন অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ৷