1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুলশান হামলার চূড়ান্ত রায় আটকে গেছে করোনায়

১ জুলাই ২০২১

গুলশান হামলার মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয়েছে প্রায় এক বছর আগে৷তবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির শুনানিসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ না হওয়ায় হাই কোর্টের বেঞ্চ এখনও নির্ধারণ হয়নি৷

https://p.dw.com/p/3vqm5
Bangladesch Terror Polizei Restaurant Holey Artisan Bakery
ছবি: Getty Images/AFP

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্টরা এর জন্য করোনাভাইরাস মহামারীকে দায়ী করেছেন৷ অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ বছরই শুনানির জন্য ‘সর্বোচ্চ' চেষ্টা চালাবেন তিনি৷

দেশে নজিরবিহীন ওই হামলার পঞ্চম বার্ষিকীর আগের দিন বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে আছে৷মামলার পেপারবুক রেডি হয়ে গেছে৷ যেহেতু এটি ডেথ রেফারেন্সের মামলা৷ ডেথ রেফারেন্সের মামলাগুলো তালিকা অনুযায়ী শুনানির জন্য আসে৷ কোভিডের কারণে মামলাগুলো শুনানির জন্য উঠতে দেরি হচ্ছে৷''

তবে বিচারিক আদালতেখালাস পাওয়া একজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি৷

মামলাটির গুরুত্ব তুলে ধরে আমিন ‍উদ্দিন বলেন, কতিপয় বিপথগামী মানুষ কতিপয় তরুণকে বিপথে নিয়ে এ ধরনের কাজ করিয়েছিল৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে৷

পাঁচ তরুণ জঙ্গি রোজার ঈদের এক সপ্তাহ আগে পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়েছিল সেই রেস্তোরাঁয়৷ তারা জবাই ও গুলি চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে৷ হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা৷ পরে কমান্ডো অভিযানে ওই জঙ্গিদের হত্যা করা হয়৷ গুলশান হামলার পর জঙ্গিদমন অভিযান গতি পায়৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ার পাশাপাশি শীর্ষনেতাদের প্রায় সবাই মারা যান৷

হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় রায়ে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আদালত সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়৷ একজন খালাস পান রায়ে৷ রায় ঘোষণার পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার ডেথ রেফারেন্স ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত থেকে হাই কোর্টে আসে৷

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাই কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পেপারবুক প্রস্তুত আছে৷ কিছু আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ হলে ডেথ রেফারেন্সটি শুনানির জন্য বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷''

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(২)(অ) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করেছিলেন ৷ আরও দুটি ধারায় তাদের কয়েকজনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ৷

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন ৷

মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়ে বিচারক তার রায়ে বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে আসামিরা ‘জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ' ঘটিয়েছে ৷ সাজার ক্ষেত্রে তারা কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না ৷

হামলা থেকে মামলা

বিশ্বজুড়ে উগ্রপন্থার প্রসারের মধ্যে বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন কিছু হামলা ঘটলেও জঙ্গিরা তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটিয়েছিল হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে ৷ তার আগ পর্যন্ত এই ধরনের হামলার দৃশ্য কেবল টেলিভিশনেই দেখে আসছিল বাংলাদেশের মানুষ ৷

গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হলি আর্টিজান বেকারির সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ৷ বিদেশিদের নিয়মিত আনাগোনা এবং শিথিল নিরাপত্তার কারণেই ওই রেস্তোরাঁকে জঙ্গিরা হামলার জন্য বেছে নিয়েছিল বলে মনে করা হয়৷

এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই হামলার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে চলে আসে৷ তখনও অনেকে হলি আর্টিজানের ভেতরে কার্যত জিম্মি হয়ে ছিলেন৷

রুদ্ধশ্বাস রাত পেরিয়ে ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা নামে অভিযানে; ‘থান্ডারবোল্ট' নামের সেই অভিযানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়েন৷ ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় মোট ১৩ জনকে৷ এরপর দুই বছরে হামলায় জড়িত আরও অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন৷ গুলশান হামলার তদন্তে মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও তাদের মধ্যে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার আটজনকেই কেবল বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়৷

দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন৷

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়৷ রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য শুনে বিচারক রায় দেন৷

এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)