গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি: অতীত-বর্তমান
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে৷ পোশাক খাতই দেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল শিল্প খাত৷ অথচ এই খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বারবার নামতে হয় রাস্তায়৷
শুরুতে মাত্র ৬৩০ টাকা
পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয়৷ ওই সময় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৬৩০ টাকা৷
দশ বছরে বাড়ে ৩০০ টাকা
১৯৯৪ সালে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুরি করা হয় ৯৩০টাকা৷ এরপর ১২ বছর এই খাতে কোনো বেতন কাঠামো ঘোষিত হয়নি৷
দুই দশক পর হাজারের ঘরে বেতন!
গত ৪০ বছর ধরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বাইরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আয়ই প্রধান৷ অথচ এই খাতে মজুরি এখনো কম৷ ২০০৬ সালে ন্যূনতম বেতন হাজারের ঘর স্পর্শ করে৷ ১৯৯৪ সালের ঘোষিত ৯৩০ টাকা ২০০৬ সালে বেড়ে হয় ১ হাজার ৬৬২ টাকা৷
প্রায় দ্বিগুণ, কিন্তু অপ্রতুল
২০১০ সালে মজুরি বাড়িয়ে করা হয় তিন হাজার টাকা৷ কিন্তু তখন ন্যূনতম ৮ হাজার টাকার দাবি ছিল শ্রমিকদের৷
২০১৩ সালেও প্রত্যাশার চেয়ে কম
২০১৩ সালের জুন মাসে গঠিত মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের মূল মজুরি নির্ধারণ করে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা৷ দ্রব্যমূল্য বাড়লেও শ্রমিকরা ২০১০ সালের দাবি অনুযায়ীও মজুরি পায়নি৷
২০১৮ সালে ১১ গ্রেডের বেতন কাঠামো
গত বছর নতুন করে পোশাক শ্রমিকদের বেতনের ১১টি গ্রেড করা হয়৷ এর মধ্যে শ্রমিকদের জন্য সাতটি ও কর্মচারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয় চারটি গ্রেড৷ শ্রমিকদের প্রথম গ্রেডে মজুরি ধরা হয় ১৭ হাজার ৫১০ টাকা৷ এর মধ্যে শিক্ষানবিশ গ্রেডও রয়েছে৷ শিক্ষানবিশ শ্রমিকরা মাসে পাঁচ হাজার ৯৭৫ টাকা পাবেন৷
কী হয় এ বেতনে!
শ্রমিকদের সপ্তম গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার টাকা৷ এর মধ্যে মূল মজুরি চার হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া দুই হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা৷ তবে বলা বাহুল্য, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি বা বর্তমান মজুরি কাঠামোকে পোশাক শ্রমিকরা সঙ্গতিপূর্ণ মনে করছেন না৷
টাকার অংকে মজুরি বেড়েছে মাত্র ২৭১ টাকা
বাংলাদেশ মজুরি বোর্ডের আইন অনুযায়ী মূল মজুরি প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ে৷ পাঁচ বছর পরপর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনার আইনও রয়েছে৷ সে অনুযায়ী সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের ২০১৩ সালের মূল ছিল ৩ হাজার ৮২৯ টাকা৷ আর এখন নতুন মূল মজুরি ঘোষিত হলো ৪ হাজার ১০০ টাকা৷ অর্থাৎ, এই গ্রেডের মজুরি বেড়েছে ২৭১ টাকা মাত্র!
অন্য খাতের মজুরি
২০১৮ সালে চামড়া খাতে নতুন যে মজুরি কাঠামো ঘোষিত হয়েছে তাতে সর্বনিম্ন গ্রেডের শ্রমিকদের মোট মজুরি ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা৷ শিপব্রেকিং খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ১৬ হাজার টাকা৷ অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যানামেল শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ৮ হাজার ৭০০ টাকা৷ পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে অনেক কম৷
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ শ্রম ও কর্ম সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ঘোষিত সর্বশেষ গার্মেন্টস শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকগণের নিম্নতম মজুরি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজের (বিলস)