1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাঁজার পরিমিত ব্যবহার বৈধ হোক, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

২০ সেপ্টেম্বর ২০১০

এবার নীতিনির্ধারকদের কাছে অন্যকিছু নয়, গাঁজার বিনোদনমূলক ব্যবহারের অনুমতিপত্র চাইতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের নামকরা মাদক গবেষকরা৷

https://p.dw.com/p/PGMj
গাঁজায় সুখটান দিচ্ছেন এক নারীছবি: AP

বার্মিংহামে ব্রিটিশ সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন এ অধ্যাপক রোজার পার্ট গাঁজা ব্যবহারের অনুমতিপত্র দেওয়ার আহবান জানাতে যাচ্ছেন৷ পার্টের আশা, এই বিষয়টির একটি মৌলিক সমাধান বিবেচনা করা হবে৷ কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, গাঁজা নিয়ে অপরাধ বিষয়ক যে নীতিমালা রয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজে আসছেনা৷ অন্যদিকে সরকার বলছে, নীতিমালা শিথিল করলেও তা তেমন কোনো কাজ দেবেনা৷

গাঁজাকে অবৈধ মাদক হিসেবে পূর্বে গৃহীত নীতিমালাটিকে শিথিল না করার প্রবণতা দেখা গেছে সরকারের মধ্যে৷ কারণ এই বিষয়েই বিতর্কের জের ধরে বিগত সরকারের মাদক বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা অধ্যাপক ডেভিড নাট কে বরখাস্ত করা হয়েছিলো৷

আবার্ডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গাঁজা জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ বিশেষজ্ঞ পার্টউই'ও অধ্যাপক নাটের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন৷ তাঁরা দুজনই মনে করছেন গাঁজা নিয়ে বর্তমান যে নীতিমালা রয়েছে তা ভালোর চেয়ে খারাপই করছে বেশি৷ পার্টউই বিবিসি কে বলেছেন, ‘‘আমি এটার ক্ষতির মাত্রা হ্রাসের কথা বলছি৷''

তিনি বলছেন, গাঁজা অবৈধ হওয়ার কারনে এই মুহূর্তে স্কুলের বাচ্চারা একে ঘিরে প্রচুর ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাচ্ছে৷ তারা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে যাচ্ছে৷ অপরাধীদের সঙ্গে মিশছে এবং প্রায়ই আইনের বেড়াজালে আটকে পড়ছে৷ গাঁজা সহজেই হাতে না পাওয়ায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেও তারা৷

অধ্যাপক পার্টউই বলছেন, এই বাস্তবতায় নীতিনির্ধারকদের নতুন করে এ বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিত৷ গাঁজাকে নেশা হিসেবে নয়, বিনোদনের জন্য পরিমিত মাত্রায় ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি কমিটিও গঠন করতে পারে সরকার৷

Cannabispflanze
গাঁজা গাছের চারাছবি: DW

তিনি আরও বলেন, পরিমিত মাত্রায় গাঁজা ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত সরবরাহকারীকে অনুমতিপত্র দেওয়া উচিত৷ খোলা বাজারে কীভাবে এর বিপনন ব্যবস্থা করা হবে তা নিয়ে ভাবতে হবে, যাতে এটি ব্র্যান্ডেড পণ্যে পরিণত হয় এবং বিষয়টা যতদূর সম্ভব নিরাপদ হয়৷ আর একে বৈধ পণ্য করা হলে তখন আর গাঁজাকে সিগারেটের আকারে বিক্রি করা যাবেনা৷

তিনি বলেন, গাঁজাকে এমনভাবে তৈরি করা উচিত তা যেন ফুসফুসের ক্ষতি না করে৷ এটাকে এমনভাবে তৈরি করা যেতে পারে যেন একে পোড়াতে না হয়, তাপ দিলেই বাষ্প আকারে বের হয়৷ তাহলে ক্যান্সার হতে সাহায্য করে এমন যে উপাদানটি গাঁজা পোড়ানোর ফলে সৃষ্টি হয়, সেটিকে বাদ দেওয়া সম্ভব হবে৷ এছাড়া একুশ বছরের কম বয়সীদের এরজন্য অনুমতি দেওয়া উচিত হবেনা বলেও তাঁর অভিমত৷

আগের সরকারগুলো এটিকে বৈধতা দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে৷ এমনকী ২০০২ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ব্লুকেঁট একে বি গ্রুপের মাদক থেকে পরিবর্তন করে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর সি গ্রুপের মাদকের মধ্যে আনলেও ২০০৯ সালে আবার একে আগের অবস্থায় অর্থাৎ বি গ্রুপে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷

অধ্যাপক বললেন, এর পরিনতিতে কী ঘটছে? দেখা যাচ্ছে, কাগজ-কলমে একে নিষিদ্ধ করে দিলেও প্রকৃতপক্ষে তা ঘটছেনা৷ এর মাধ্যমে নানারকম ক্ষতির অবকাশ থেকে যাচ্ছে৷ তাই বলতে চাই, গাঁজার ক্ষতিটাকে কমানো হোক৷

পার্টউই এর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক মুখপাত্র বলছেন, স্পষ্ট প্রমান আছে যে, গাঁজা আসলে একটি ক্ষতিকর মাদক৷ মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিতে যেটি স্বল্প ও দীর্ঘকালীন প্রভাব ফেলে৷ এমনকী হঠাৎ মাঝে মধ্যে এর সামান্য ব্যবহারও যাদের রক্তসঞ্চালন সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে৷

গাঁজাকে বৈধ করে দেওয়াটা সঠিক কোনো পন্থা বলে বিশ্বাস করেনা সরকার৷ আমাদের কথা পরিষ্কার৷ আমরা মাদকের ব্যবহার কমাতে চাই৷ মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা করতে চাই এবং চাই মাদকাসক্তরা চিরদিনের জন্য মাদক ছেড়ে দিক৷

প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়