1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গরিবের জন্য খাবারের উদ্যোগেও পুলিশের বাধা

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা পরিস্থিতিতে বামপন্থিরা জেলায় জেলায় অনাহারে, অর্ধাহারে থাকা মানুষদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন৷ এই উদ্যোগে পথ দেখিয়েছে যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিন৷

https://p.dw.com/p/3iiV2
Indien Kalkutta | Linke Parteien verteilen Essen für arme Teile der Bevölkerung
ছবি: Payel Samanta/DW

ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে একটানা লকডাউন বিশ্বজুড়ে আর্থিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে৷ ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়৷ বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে লকডাউনে৷ কাজকর্ম বন্ধ থাকায় উপার্জন হারিয়েছেন অসংখ্য শ্রমিক-কর্মচারী৷ এঁদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাম ছাত্র-যুবরা যৌথ রান্নাঘরের কর্মসূচি নিয়েছে৷ এই কর্মসূচিতে নিয়মিত একটি জায়গায় রান্না করে তা বণ্টন করা হচ্ছে গরিব, খেটে-খাওয়া মানুষদের মধ্যে৷

এই উদ্যোগে পথ দেখিয়েছে সিপিএমের যাদবপুর এরিয়া কমিটি৷লকডাউন শুরু হওয়ার পরপরই তারা খুলেছে শ্রমজীবী ক্যান্টিন৷ ২ এপ্রিল থেকে হাঁড়ি চড়েছে রান্নাঘরে৷ এখন নিয়মিত কমবেশি ৭০০ মানুষের হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন দলীয় কর্মীরা৷ ৭০ জনকে দেওয়া হয় বিনামূল্যে৷ বাকিদের কাছ থেকে নেয়া হয় প্যাকেট প্রতি ২০ টাকা৷ রোজ সকালে কয়েকশো মানুষের লাইন পড়ে যায় খাবার সংগ্রহ করতে৷ এই ক্যান্টিনের অন্যতম আয়োজক, সিপিএমের সর্বক্ষণের কর্মী সুদীপ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লকডাউন শুরু হওয়ার পর যাদবপুর এলাকার শ্রমজীবী মানুষদের রোজগার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়৷ তাঁদের হাতের সঞ্চয় খুব দ্রুত ফুরিয়ে গিয়েছিল৷ ওঁদের কথা ভেবেই এই যৌথ রান্নাঘরের পরিকল্পনা৷’’

‘সাধারণ মানুষই খরচ জোগাচ্ছে’

ক্যান্টিনের খাবারের প্যাকেট থাকে ২০০ গ্রাম চালের ভাত৷ সঙ্গে নিরামিষ তরকারি৷ কখনো বা ডিমের ঝোল৷ আবার অনেক সময় অনুদানের অর্থে মাছ-মাংস, মিষ্টি, কেকও থাকে প্যাকেটে৷ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বাম কর্মীদের উদ্যোগে একই ধাঁচে জনসেবা শুরু হয়েছে৷ কোথাও নাম হয়েছে নাগরিক হেঁশেল, কোথাও বা লালমাটির রান্নাঘর৷ বহু সহৃদয় ব্যক্তি এগিয়ে আসছেন অনুদান দিতে৷ সুদীপ বলেন, ‘‘আমরা এতদিন ক্যান্টিন চালাচ্ছি নিজেদের পকেট বা দলীয় তহবিল থেকে কোনো টাকা খরচ না করে৷ সাধারণ মানুষই আমাদের খরচ জোগাচ্ছে৷ এই সংকটে আত্মকেন্দ্রিকতা ছেড়ে সমষ্টিগতভাবে বেঁচে থাকার আনন্দ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷’’

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে লাল পতাকা হাতে পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরছেন সিপিএম কর্মীরা৷ চালাচ্ছেন স্যানিটাইজেশন-এর কাজ৷ সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে অন্য ধরনের জনসংযোগের পরিকল্পনা বামেদের৷ যদিও এর সঙ্গে নির্বাচনকে গুলিয়ে ফেলতে চান না দলীয় বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বামপন্থিরা ভোটের লক্ষ্যে জনসেবা করেন না৷ জ্যোতি বসু ১৯৪৬ সালে রাস্তায় নেমে খিচুড়ি বিলি করেছিলেন৷ তখন জনসমর্থন কতটা ছিল বামেদের? ভোট ৭ শতাংশ থাকলেও যা, ৭০ শতাংশ থাকলেও একই কাজ করব আমরা৷’’

আমাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে: অভিজিৎ দে

নাগরিক রান্নাঘর চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বাম কর্মীদের৷ কলকাতার অদূরে নিউ ব্যারাকপুরে পুলিশ-প্রশাসন কর্মসূচি ভেস্তে দিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা৷ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে খাদ্য বণ্টনের কর্মসূচি কয়েকদিন চালানোর পর বন্ধ করে দিতে হয়৷ সিপিএমের ওয়ার্ড সম্পাদক অভিজিৎ দে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ এসে আমাদের কাজে বাধা দেয়৷ বলে, আমরা লকডাউনের নিয়ম ভেঙেছি৷ সেজন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করা হয়েছে, পুলিশের নির্দেশ অমান্য করা, ফুড লাইসেন্স ছাড়া খাবার বিলি করার অভিযোগে৷ গ্রেপ্তারি এড়াতে জামিন নিয়েছি৷’’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বামেদের কাছে আগামী বিধানসভা নির্বাচন অগ্নিপরীক্ষা৷ তাদের ভোটপ্রাপ্তির হার তলানিতে ঠেকেছে গত লোকসভা নির্বাচনে৷ সেই কারণে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নীতির বিরোধিতায় পুরোনো কায়দায় রাজনৈতিক প্রচারের পাশাপাশি সিপিএম এই সঙ্কটকালে একেবারে তৃণমূল স্তরে জনসংযোগের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে৷ বামেদের আশা, পুরোহিত ভাতা থেকে দলিত অ্যাকাডেমি নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, আলোচনায় রয়েছে রামমন্দির থেকে চিনা আগ্রাসন, তখন এ ধরনের কর্মসূচি মানুষের মনোযোগ কাড়তে পারে৷ তরুণ সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কমিউনিস্ট পার্টি মানুষের জন্য কাজ করে, ভোটের জন্য নয়৷ নাগরিকরা আমাদের কাজ দেখছেন, বাকিদের ভূমিকাও দেখছেন৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন, নির্বাচনে কাকে সমর্থন করবেন৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান