গণতন্ত্রের মানসকন্যা সু চি কি মুক্তি পাবেন?
৩০ অক্টোবর ২০১০আবারও শোনা যাচ্ছে যে আসছে ৭ নভেম্বর নির্বাচনের পরে মুক্তি দেওয়া হবে মিয়ানমারের বিরোধী দলের নেত্রী সু চি-কে৷ দেশের জন্যে দেশের মানুষের জন্যে নিজের ব্যক্তিগত জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তিনি৷ দেশে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে মৃত্যুপথযাত্রী প্রিয়তম স্বামীকেও শেষ দেখা দেখতে পারেননি৷ দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছেন তাঁর বাবাও৷ হ্যাঁ বলছি, গণতন্ত্রের প্রতিমূর্তি নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী, মিয়ানমারের বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেত্রী অং সান সু চি-র কথা৷
১৯৯০ সালে মিয়ানমারের নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি জয়লাভ করলেও, দেশটির সামরিক শাসকরা তাঁকে দেশের দায়িত্ব নিতে দেয়নি৷ সেই থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে আটক রাখা হয় সু চি কে৷ এখন শোনা যাচ্ছে আসছে ৭ নভেম্বর নির্বাচনের পরে মুক্তি দেওয়া হবে সু চি-কে৷ কিন্তু এই কথার মধ্যে সত্যতা কতোটুকু আছে তা কেউ জানে না৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়া এবং নির্বিঘ্নে নির্বাচন শেষ করার জন্যেই মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা আবারও এই চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছেন৷
সু চির মুক্তি পাবার যে খবরটি শোনা যাচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন এবং মিডিয়া ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ড. গিতিআরা নাসরিনের সঙ্গে৷ তিনি বললেন, ‘‘অনেক মেধাসম্পন্ন এই নারী জীবনের এক তৃতিয়াংশই গৃহবন্দী হয়ে কাটিয়ে দিলেন৷ যিনি ১৯৯০ সালের গণভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন এবং যাঁর প্রধানমন্ত্রী হবার কথা ছিল মিয়ানমারের৷ যিনি সবসময় মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন তিনিই আটক৷ এর চেয়ে বড় ট্রাজেডি আর কী হতে পারে? তিনি যদি মুক্তি পান তাহলে তা সবার জন্যেই হবে আনন্দের৷''
গণতন্ত্রের দাবিতে তাঁর অহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং পরিবর্তন আনার চেষ্টার জন্যে ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় তাঁকে৷ বিশ্বের আরেকজন শান্তি সংগ্রামী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মত সু চিও জয় করেন শান্তিতে নোবেল৷ কিন্তু তারপরেও মিয়ানমারের শামরিক শাসকদের কঠোর হাত এবং ঘৃন্য মনোবৃত্তির এতোটুকু পরিবর্তন আসেনি৷ বিশ্ব এবং বিশ্ব নেতাদের চাপের মুখেও, মুক্তি দেবো দেবো করেও, মুক্তি দেয়নি গণতন্ত্রের এই মানসকন্যাকে৷ গড়িয়ে গেছে বছরের পর বছর৷ চলতি বছরের জুন মাসে ৬৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হলো সু চির৷ ভক্তরা তাঁর জন্মবার্ষিকী পালন করলেও তিনি ছিলেন গৃহবন্দি৷
নেতৃত্ব নিয়ে সু চির চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে ড. গিতিআরা নাসরিন বললেন, ‘‘নেতৃত্ব নিয়ে ড. সু চির একটি বিখ্যাত সমালোচনা আছে৷ তিনি দেখেছেন, যে, যাঁরা জনগনের নেতা, জনগনের সাথেই তাঁদের যোগাযোগ সবচেয়ে কম৷ এটি তাঁরই কথা, তিনি দুঃখ করে বলেছিলেন৷ আমরা যারা মানুষের মুক্তি চাই, পৃথিবীতে গণতন্ত্র আসুক - সেটা চাই, তাঁদের সবার সামনে তিনি একটা অনেক বড় দৃষ্টান্ত৷ তাঁর একটা বক্তৃতা আছে, ‘ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার'৷ তাঁর একটা লাইন আমার সবসময় মনে হয়, যেখানে তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতা আমাদের নষ্ট করে না, ভয়ই আমাদের নষ্ট করে৷ তার মানে উনি বলতে চেয়েছেন, ভয়ের জন্যেই আমরা কম্প্রমাইজ করি, নিজেদের ভয় থেকেই আমরা অনেক কিছু মেনে নিই৷ এবং যার ফলেই মুক্তি বাধাগ্রস্থ হয়, গণতন্ত্র বাধাগ্রস্থ হয়৷''
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক