খুলেছে মিরপুর চিড়িয়াখানা
করোনার ফলে সাত মাস বন্ধ থাকার পর নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা৷ ১৩৩ প্রজাতির প্রায় তিন হাজার প্রাণী সমৃদ্ধ এই বিনোদনকেন্দ্রটিতে আবার বাড়ছে ভিড়৷
পূর্বপ্রস্তুতি
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিনোদনকেন্দ্রটিকে দর্শনার্থীদের সামনে নতুন রূপে হাজির করতে কর্তৃপক্ষের ছিল বাড়তি প্রস্তুতি৷ এর অংশ হিসেবে স্থাপনাগুলো রং করা, পরিচ্ছন্নতা এবং জীবাণুনাশক ছেটানোকে প্রাধান্য দেন তাঁরা৷
এসেছেন জ্বর নিয়ে
গায়ে ১০২ জ্বর নিয়ে মিরপুর ১ থেকে চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখতে এসেছেন গাড়িচালক আবুল সর্দার৷ করোনা মহামারির সংক্রমণরোধে দর্শনার্থীদের তাপমাত্রা মাপার সময় বিষয়টি নজরে আসে৷ পরে অবশ্য তাঁকে আর ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি৷
বিনামূল্যে প্রবেশ
মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রতি মাসের প্রথম রোববার দর্শনার্থীদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে৷ এর বদৌলতে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ঢল নামে৷ কর্তৃপক্ষ জানায়, এই করোনাকালীন সময়ে দিনে ৪-৫ হাজার মানুষ আসলেও ছুটির দিনে ১০-১২ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে৷
একের ভিতরে দুই
চিড়িয়াখানার একটি অংশে বানানো হয়েছে শিশুপার্ক৷ পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু না হলেও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে৷ দীর্ঘদিন পর বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে এসে অনেককেই সুযোগটির সদ্ব্যবহার করতে দেখা গেল৷
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিনোদন
গুদারাঘাটের তাহসিনুল কোরআন মাদ্রাসা থেকে ২ জন শিক্ষকের তত্বাবধানে ২৪ জন শিক্ষার্থী চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুল-মাদ্রাসা নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর বিনোদনের প্রয়োজন থাকলেও বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে এই সুযোগের কিছুটা অভাব আছে বলে তিনি মনে করেন৷
খাবার নিয়ে প্রবেশ নিষেধ
চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সময় দর্শনার্থীদের খাদ্যদ্রব্য সাথে নেওয়া নিষেধ৷ বিকল্পব্যবস্থা হিসেবে ভিতরে কয়েকটি ক্যাফে তৈরি করা হয়েছে৷ কিন্তু ক্যাফেগুলোর খাবারের মান ও মূল্য নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ পাওয়া যায়৷
যদিও নিষেধ
প্রতিটি খাঁচার সামনে প্রাণীদেরকে বাহির থেকে কিছু না খাওয়ানোর বিষয়ে সতর্কতামূলক নির্দেশনা থাকলেও অনেককেই দেখা গেল সে নির্দেশ মানছেন না৷ কেন খাওয়াচ্ছেন হরিণগুলোকে, এই প্রশ্ন করাতে একজন উত্তর দিল ‘‘ভাই, মায়া লাগে’’৷
পুকুরে মাছ ধরার ব্যবস্থা
প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার চিড়িয়াখানার ভিতরে যে কোন ব্যক্তি শখের বশে মাছ ধরতে পারেন৷ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বাবদ তাঁকে পরিশোধ করতে হবে দুই হাজার টাকা৷ এই পুকুরে কার্পজাতীয় মাছই বেশি বলে জানালেন মাছ ধরতে আসা একজন ব্যক্তি৷
অন্যতম আকর্ষণ হাতি
স্থলভাগের সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতি৷ তাই প্রাণীটিকে এক নজর দেখতে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই৷ করোনার আগে হাতি এবং ঘোড়ার পিঠে দর্শনার্থীদের চড়ার ব্যবস্থা থাকলেও আপাতত সে সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে৷
একটু জিরিয়ে নেওয়া যাক
১৮৬ একরের বিশাল আয়তনের চিড়িয়াখানাটি ঘুরে দেখতে গিয়ে দর্শনার্থীরা প্রায়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েন৷ তাঁদের বিশ্রামের জন্য তৈরি করা হয়েছে একাধিক বিশ্রামাগার৷ পরিবার পরিজন নিয়ে আসা অনেকেই শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় এখানে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন৷
উঁচু ঘাড়ওয়ালা জিরাফ
ডাঙ্গায় বসবাসরত প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু ঘাড় জিরাফের৷ প্রাপ্তবয়স্ক একটি পুরুষ জিরাফের ঘাড় ১০-১২ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ তাই জিরাফের খাঁচায় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা মানুষদের ভিড় লেগেই থাকে৷
আছে ভোগান্তি
চিড়িয়াখানার বাহিরে বিভিন্ন গন্তব্যের গণপরিবহণগুলোকে যাত্রী নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়৷ এসব পরিবহণের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ বহুদিনের৷ অনেক যাত্রীই অভিযোগ করেন, পরিবহণ শ্রমিকদের দ্বারা তাঁদেরকে প্রতিনিয়তই মৌখিক ও শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়৷