1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালিপকেটে বিশ্বভ্রমণ!

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়২৭ অক্টোবর ২০১৪

এক জার্মান এবং এক তুর্কি যুবক বিশ্বপরিক্রমার পরিকল্পনা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে পথে, কিন্তু তাদের পকেটে কানাকড়িটিও নেই৷ তা সত্ত্বেও গত দেড় মাসে নটি দেশ ওদের ঘোরা শেষ!

https://p.dw.com/p/1Dc25
The world in 80 days - Weltreise
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay

জুল ভার্ন-এর বিখ্যাত কাল্পনিক ভ্রমণ কাহিনী ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়র্ল্ড ইন এইটি ডেজ'-এর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে৷ সেই কাহিনীর নায়ক, বিত্তবান বৈজ্ঞানিক ফিলিয়াস ফগ মাত্র ৮০ দিনে গোটা পৃথিবী পরিভ্রমণের এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী সফরে রওনা হয়েছিলেন৷ এবার এই একুশ শতকের দুই বিশ্ব পরিব্রাজকের সঙ্গে আলাপ করুন৷ মিলান বিলমান এবং মুয়ম্মর ইলমাজ৷ ২৭ বছরের মিলান মিউনিখ শহরে থাকেন৷ আর জন্মসূত্রে তুর্কি ৩৯ বছর বয়সি মুয়াম্মরের নিবাস ফ্রান্স৷

পর্যটকদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার একটি ওয়েব-আড্ডায় ওঁদের আলাপ৷ যার পর মুয়ম্মর কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে আসেন জার্মানি, থাকেন মিউনিখে মিলানের বাড়িতে৷ তখনই ওরা বোঝেন, ওঁদের দুজনের মধ্যে নানা বিষয়ে পছন্দের মিল আছে৷ ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং একদিন ওঁরা ঠিক করেন, জুল ভার্নের উপন্যাসের নায়কের মতই ওঁরাও ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণের একটা চেষ্টা করবেন৷ তবে ওই কল্পকাহিনীর নায়কের সঙ্গে ওঁদের একটা জায়গাতেই অমিল৷ ফিলিয়াস ফগ রীতিমত বড়লোক ছিলেন, আর ওঁদের পকেটে ফুটো পয়সাটিও নেই!

ঠিকই পড়লেন৷ মিলান বিলমান এবং মুয়ম্মর ইলমাজ এটাই ঠিক করে পথে বেরিয়েছেন যে স্রেফ লোকের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর ভরসা করে, স্থানীয় মানুষের বদান্যতায় ট্রেন, বাস বা বিমানের টিকিট জোগাড় করে ওঁরা বিশ্বভ্রমণ করবেন৷ অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে বুঝি! তা হলে শুনুন, কপর্দকহীন অবস্থায় বেনারস থেকে, ট্রেনের অসংরক্ষিত জেনারেল কামরার মেঝেতে বসে ১৫ ঘণ্টা সফর করে কলকাতা এসেছিলেন দুজনে৷ তার পর ওঁরা যখন ভাবছেন, ওঁদের পরের গন্তব্য থাইল্যান্ডে কী করে পৌঁছবেন, তখন দীপাবলি উৎসবের উপহারের মতোই ওঁদের হাতে এসেছে ব্যাংককের দুটি বিমান টিকিট৷ সৌজন্যে শহরের এক শিল্পপতি অমিত সারাওগি৷

শ্রী সারাওগি ওঁদের কথা প্রথমে পড়েন খবরের কাগজে, তার পর কৌতূহলী হয়ে ওঁদের ফেসবুক পাতায় গিয়ে জানতে পারেন অর্থের অভাবে কলকাতায় ওঁদের যাত্রা থমকে যাওয়ার কথা৷ ‘স্টাক ইন ক্যালকাটা' – মিলান আর মুয়াম্মর নিজেদের ওয়েবসাইটে আর ফেসবুকে লিখেছিলেন৷ অমিত সারাওগি নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে প্রথমে ওঁদের ডিনার খাওয়ান, তার পর সেই রাতে ব্যাংককের প্লেন ধরাতে রওনা করিয়ে দেন নিজের গাড়িতে৷

The world in 80 days - Weltreise
কলকাতায় মিলান বিলমান এবং মুয়ম্মর ইলমাজছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay

কলকাতায় দুই ভূপর্যটককে স্বেচ্ছায় অতিথি করেছিলেন ক্যালকাটা ওয়াক সংস্থার কর্ণধার ইফতিকার এহসান৷ তাঁর সঙ্গেও ওঁদের আলাপ হয়ে যায় নেহাত ঘটনাচক্রে এবং শহরে দুটো দিন ওঁদের থাকা-খাওয়া এবং কলকাতা ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব ইফতিকারই নিয়েছিলেন৷ এমন ঘটনা মিলান এবং মুয়াম্মরের সঙ্গে বারবারই ঘটেছে৷ ইরান থেকে ওঁরা যখন পাকিস্তানের দিকে যাচ্ছেন, বহু লোক সাবধান করেছিল যে, যেওনা, মারা পড়বে৷ তবু ওঁরা সাহস করে গিয়েছিলেন এবং সাধারণ লোকের থেকে অসাধারণ আতিথেয়তা পেয়েছেন৷ কেউ নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন, কেউ খেতে দিয়েছেন, আবার কেউ সঙ্গে নিয়ে কিছুটা রাস্তা এগিয়ে দিয়েছেন৷

Porträt - Sirsho Bandopadhyay
ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: privat

এভাবেই ফ্রান্স থেকে অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান এবং ভারত হয়ে দুই যুবক এখন থাইল্যান্ডে৷ শুরু করেছিলেন ৯ সেপ্টেম্বর সকাল নটা নয় মিনিটে, প্যারিস থেকে৷ পথে প্রতিবন্ধকতা প্রচুর এসেছে, থমকে যেতে হয়েছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত আবার যাত্রা শুরু হয়েছে৷ থাইল্যান্ডের পর সিঙ্গাপুর এবং সেখান থেকে আমেরিকা গিয়ে বিশ্বভ্রমণ শেষ করবেন দুজনে৷ পেশায় আলোকচিত্রী এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা মুয়াম্মর ইলমাজ প্রচুর ছবি তুলছেন তাঁদের এই অভিনব বিশ্বভ্রমণের৷ মিলান বিলমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ছাত্র, তাঁর ভাণ্ডারে জমা পড়ছে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা৷

আশা করাই যায়, জুল ভার্নের অমর উপন্যাসের মতই আরও একটি বিশ্বপরিক্রমার আধুনিক উপাখ্যান লিখবেন দুজনে৷ তবে এবার এর কাল্পনিক ভ্রমণবৃত্তান্ত নয়, লেখা হবে বাস্তবের মহাকাব্য, স্পর্ধিত যৌবনের স্বপ্ন ছুঁতে পারার কাহিনি৷