1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাবার নিয়ে অভিনব প্রদর্শনী

১৮ জুলাই ২০১৯

দিনে দিনে খাদ্যের বৈচিত্র্য বেড়েই চলেছে৷ বদলাচ্ছে আমাদের খাদ্যাভ্যাসও৷ কিন্তু এই বিবর্তন সম্পর্কে মানুষ কতটা সচেতন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ এক অভিনব প্রদর্শনীতে মানুষের লাগামহীন খাদ্যাভ্যাসের নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3MESA
ছবি: FOOD: Bigger than the Plate/Sponsored by BaxterStorey/M. Zee

কথায় বলে ‘তোমার খাদ্যই তোমার পরিচয়'৷ খাবার এখন আর শুধু ক্ষুধা মেটানোর উপকরণ নেই৷ খাদ্যের স্বাদ ও তা উপভোগ করার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে৷ কী খাওয়া উচিত বা অনুচিত, সেটিও চর্চার বিষয়৷ আমরা কী খাই, কীভাবে খাই, সমাজে আমাদের অবস্থানও তার উপর অনেকটা নির্ভর করে৷ খাদ্যগ্রহণকে ঘিরে নানা রকম বিধিনিয়ম, শিষ্টাচার, নীতিমালা তৈরি হয়েছে৷ সবকিছু বুঝে উঠতে সম্ভবত ৭ বার জন্ম নিতে হবে৷

‘ফুড – বিগার দ্যান দ্য প্লেট' নামের প্রদর্শনীতে হানি ও বানি নামের ভিয়েনার দুই শিল্পী খাবার টেবিলের আদবকায়দা তুলে ধরেছেন৷ ব্রিটেনের কমেডি গোষ্ঠী মন্টি পাইথনের অনুকরণে তৈরি তাঁদের ভিডিওতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে কাঁটাচামচের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ শিল্পী হিসেবে মার্টিন হাবলেস্ট্রাইটার (বানি) বলেন, ‘‘আমরা ৫০ কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক সত্তা৷ সবাই ইংল্যান্ডের রানির মতো খাবার চেষ্টা করেন৷ এ এক সম্পূর্ণ অর্থহীন প্রচেষ্টা৷ সাংস্কৃতিক নিয়মনীতি আমাদের জীবনে বিশাল প্রভাব রাখে৷’’ হানি নামে পরিচিত শিল্পী সনিয়া স্টুমারার মনে করেন, ‘‘এটাই আমাদের সৃষ্টিকর্মের বার্তা৷ সংস্কৃতির আপেক্ষিকতা একটু মেনে নিয়ে দেখুন, সবকিছু একদম অন্যরকম হতে পারে৷’’

খাবার নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে এক প্রদর্শনী

লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে এই প্রদর্শনী দর্শকদের খাদ্য সম্পর্কে একেবারে নতুন ধরনের ভাবনাচিন্তা করতে কার্যত বাধ্য করে৷ আত্মবিধ্বংসী ভোগের প্রবণতা, লাগামহীন মাংসের লোভ, শোষণমূলক বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া – এমন সব বিষয় দর্শকদের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে৷ মিউজিয়ামের কিউরেটর ক্যাথরিন ফ্লাড বলেন, ‘‘খাদ্য মোটেই ঐতিহ্যগত শিল্পের এমন কোনো উপকরণ নয়, যা চিরকালের জন্য গ্যালারিতে সংরক্ষণ করা হয়৷ খাদ্যকে কোনো একটি ছাঁচে ফেলা যায় না৷ খাদ্য আসলে বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, মনস্তত্ত্বের বিষয়৷’’

কিছু বস্তু সত্যি বেশ বিস্ময়কর হয়ে উঠেছে৷ যেমন এই গরুগুলির মুখের বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তি দেখলে স্টেকপ্রেমি মানুষের বিবেকদংশন হতে বাধ্য৷

মুরগিদের ক্ষেত্রে আরও ভালোভাবে নজর দিতে হয়৷ তাদের শরীরের অবশিষ্ট অংশের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে, যে অরগ্যানিক পদ্ধতিতে পালিত মুরগির হাড়ের গুঁড়া থেকে আরও ভালো সেরামিক উপাদান পাওয়া যায়৷

Ausstellung FOOD: Bigger than the Plate
ছবি: FOOD: Bigger than the Plate/Sponsored by BaxterStorey/Nick Matthews

‘আরও কম মাংস খাও’৷ এই বুলিকে হাতিয়ার করে নেদারল্যান্ডসের শিল্পী কারোলিন নিবলিং অসাধারণ সৃজনশীলতার সঙ্গে মাংসপ্রিয় মানুষকে প্রলোভন দেখান৷ কারোলিন বলেন, ‘‘নানা ধরনের শাকসবজি যোগ করে এভাবে মাংসের অংশ কমানো যায়৷ তা সত্ত্বেও মানুষ সামান্য মাংস খাবার আনন্দ নেন৷ বিকল্প হিসেবে মেটে ও বেরি ফল দিয়ে সসেজ তৈরি করতে পারেন৷ ফলে মাংসের অংশ ২৫ শতাংশ কমে যায়৷ আমরা এই হার আরও দ্রুত কমাতে পারলে তার বড় প্রভাব দেখা যাবে৷ মাংসের নকল বা ল্যাবে মাংস তৈরি করার তুলনায় তা আরও কার্যকর হবে৷’’

এই মাশরুম বা ছত্রাক কিন্তু সম্পূর্ণ নিরামিষ৷ মিউজিয়ামের নিজস্ব রেস্তোরাঁয় তৈরি কফির অবশিষ্ট গুঁড়ার উপর সেগুলি গজিয়েছে৷ দর্শকরা এমন ছত্রাক চাষের প্রক্রিয়ার প্রণালী সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন৷

ফুড ল্যাবে ছোট আকারের যে সব খাবার পরিবেশন করা হয়, তা খেয়ে পেট না ভরলেও নতুন কিছু আইডিয়া পাওয়া যেতে পারে৷ যে কেউ নিজের পছন্দমতো অথবা পরিবেশসম্মত শর্ত অনুযায়ী উপকরণ বেছে নিতে পারেন৷ পাচকরা সেই আবদার অনুযায়ী খাদ্য তৈরি করে দেন৷

ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের কিউরেটাররা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করার ও খাদ্য চক্র বোঝার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন৷ আমরা যাই খাই না কেন, তা শেষ পর্যন্ত এখানে গিয়ে পড়ে৷ এই প্রদর্শনী ক্ষুধার তুলনায় খাবার নিয়ে ভাবনাচিন্তার স্পৃহা অনেক বাড়িয়ে তোলে৷

অলিভার গ্লাসেনাপ/এসবি