1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যালিফোর্নিয়া ভাইরাস সম্পর্কে যা জানা গেছে

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন হলো ক্যালিফোর্নিয়া ভাইরাস। সে সম্পর্কে লিখছেন জুলফিকার আব্বানি।

https://p.dw.com/p/3pwpe
করোনাকালে নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য জগিং। ক্যালিফোর্নিয়ার ছবি। ছবি: Jeff Chiu/AP Photo/picture alliance

প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, এই লেখা যখন লিখছি, তখনো তথাকথিত ক্যালিফোর্নিয়া ভাইরাস নিয়ে বৈজ্ঞানিকরা খুবই কম জানেন। এই ভাইরাস সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এই স্ট্রইন অন্যগুলির তুলনায় খুবই দ্রুত ছড়ায় এবং আরো ভয়ঙ্কর। তাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে আরো ভালো করে চিকিৎসা ও যত্নের দরকার।

এই ভাইরাস সম্পর্কে যা কিছু জানা গেছে, তা প্রি-প্রিন্টের একটি রিপোর্ট থেকে। লেখাটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রি-প্রিন্ট হলো সেই রিপোর্ট বা সমীক্ষা যেখানে প্রাথমিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা হয়। তবে সেই রিপোর্ট বৈজ্ঞানিকরা খতিয়ে দেখেননি বা বলা যায় রিপোর্টের রিভিউ হয়নি। সাধারণত, এই ধরনের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকরা চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্তে আসেন না।

তাই এই রিপোর্টে যা বলা হয়েছে, সেই তথ্যগুলি এখনো সমর্থিত নয়।

যা জানা গেছে

আমরা জানি যে, ক্যালিফোর্নিয়া করোনাভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয় অ্যামেরিকার দক্ষিণের এই রাজ্যে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটা করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন।

কিন্তু এই নতুন প্রকারের ভাইরাসেরও দুইটি প্রকারভেদ আছে। একটি অন্যটার থেকে কিছুটা আলাদা। এই দুই ধরনের নাম হলো বি.১.৪২৭ এবং বি..১.৪২৯। তবে প্রি-প্রিন্ট সমীক্ষায় লেখকরা এগুলিকে ক্যাল.২০সি বলে অভিহিত করেছেন। এই গবেষকরা সকলেই লস এঞ্জেলসের সেডারস-সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত।

যে সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলি বিশ্লেষণ করে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, ক্যাল.২০সি করোনার একটা নতুন স্ট্রেইন।

USA | 500.000 Covid-19-Todesopfer | Stay-Home-Parole in Kalifornien
সরকার বাড়িতে থাকার নির্দেশ জারি করার পর ক্যালিফোর্নিয়ায় শুনশান রাস্তা। ছবি: Valerie Macon/AFP/Getty Images

করোনার নতুন স্ট্রেইন এর আগে ব্রিটেনে পাওয়া গেছে, যার নাম বি.১.১.৭। এই স্ট্রেইন অত্যন্ত ছোঁয়াচে। গবেষকরা লিখছেন, লস এঞ্জেলস ও ক্যালিফোর্নিয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো স্ট্রেইনের জন্য করোনার প্রকোপ অত্যন্ত বেশি তা বলা যাবে না।  শুধু এই টুকু বলা যেতে পারে, এই অঞ্চলে করোনার প্রকোপ এবং ক্যাল.২০সি স্ট্রেইন দুইটিই বেড়েছে।

ক্যাল.২০সি কেন আলাদা?

২০২০ সালের জুলাইতে এই স্ট্রেইন লস এঞ্জেলসে এবং অক্টোবরে ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখা যায়। তারপর থেকে এই স্ট্রেইনের প্রকোপ বেড়েছে। গবেষকদের দাবি, করোনায় রোগীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ এই স্ট্রেইনে আক্রান্ত।

ফলে বিষয়টি একটু জটিল হয়ে যাচ্ছে, যা আমরা সহজ করে ব্যাখ্যা করব।

কোভিড ১৯ ক্লাস্টারের দুইটি সাব গ্রুপ হলো ২০জি ও ২০সি। উত্তর অ্যামেরিকায় ২০জি ক্লাস্টারের ভাইরাসের প্রকোপ বেশি।

এল৪৫২আর হলো ভাইরাস স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন। স্পাইক প্রোটিন হলো সেই জিনিস যা মানুষের শরীরের কোষে সংক্রমণ ঘটায়।

নতুন মিউটেশন এই স্পাইক প্রোটিনকে আরও সহজভাবে মানুষের শরীরের কোষে ভাইরাল রিসেপটরে ঢুকে যেতে সাহায্য করে। রিসেপটরকে সাধারণত গেটওয়ে বা প্রবেশদ্বার বলা হয়, যেখান দিয়ে ভাইরাসটি শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ঘটায়।

এই এল৪৫২আর স্পাইক প্রোটিনকে বেশ কিছু অ্যান্টিবডি থামাতে পারে না। তবে গবেষকরা লিখেছেন, ক্যাল.২০সি কতটা সংক্রামক ও তাকে অ্যান্টিবডি কাবু করতে পারে কি না, তা এখনো অজানা।

ভাইরাস বদলায়

সার্স-কোভিড ভাইরাস নানা ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ২০২০-র জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে এই ভাইরাসের নতুন প্রকার দেখা যায়, তার নাম ডিজি১৪জি। মূল স্ট্রেইনের থেকে এটি আলাদা। উহানে ২০১৯ সালে করোনার সংক্রমণের পিছনে ছিল মূল স্ট্রেইনটি। এরপর নতুন স্ট্রেইন বিশ্বজুড়ে ছড়াতে থাকে।

২০২০-র অগাস্ট বা সেপ্টেম্বরে ডেনমার্ক একটি স্ট্রেইন চিহ্নিত করে, যা মিংকগুলির সংক্রমণ ঘটাচ্ছিল। এই স্ট্রেইনের নাম দেয়া হয় ক্লাস্টার ৫। ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্য(বি.১.১.৭) ও দক্ষিণ আফ্রিকায়(বি.১.৩৫২) নতুন স্ট্রেইন দেখা দেয়। তা দ্রুত ছড়াতে থাকে। জাপান ও ব্রাজিলেও নতুন স্ট্রেইন দেখা যায়।

যাঁরা বিশেষজ্ঞ নন, তাঁদের বুঝতে একটু অসুবিধা হতে পারে, কারণ, নাম দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো আন্তর্জাতিক রীতি নেই। নেচার পত্রিকায় সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

তবে ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, সব ভাইরাসই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায়।

এই অবস্থায় একটা কথা মনে রাখা ভালো, আপনার এলাকায় যে স্ট্রেইন থাকুক না কেন, শুধু এটা মনে রাখবেন, নিজেকে ও অন্যদের সুরক্ষিত রাখার জন্য যা করা দরকার, তা করতেই হবে।  সেখানে ঢিলেমি থাকা উচিত নয়।

জুলফিকর আব্বানি/জিএইচ