1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যামেরুনে মেয়েদের ‘বড়’ হতে বাধা

১৬ আগস্ট ২০১০

আফ্রিকা মহাদেশে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে মেয়েদের ওপর চলে নানা ধরণের অমানুষিক নির্যাতন৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদ তাদের মধ্যে একটি৷ উত্তর আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ খুবই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়৷

https://p.dw.com/p/OoUH
আফ্রিকার মেয়েদের ওপর চলে নানা ধরণের অমানুষিক নির্যাতনছবি: picture-alliance/ dpa

ক্যামেরুনে রয়েছে এ ধরণের আরেকটি অমানবিক প্রচলন৷ যখন কোন মেয়ে বড় হতে থাকে তখন শারীরিক বেশ কিছু পরিবর্তন স্পষ্টতই চোখে পড়ে৷ বাড়ন্ত শরীর, গলার স্বর, আচার-স্বভাবেও আসে পরিবর্তন৷ অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় শারীরিক গঠনে তারা একটু দ্রুত এগিয়ে যায়৷ আমাদের কাছে কিন্তু এটাই স্বাভাবিক৷ তবে এটা স্বাভাবিক নয় ক্যামেরুনে৷ ক্যামেরুনে মেয়েদের এই ‘বড় হওয়া' বা ‘বাড়ন্ত' বয়সকে আটকে দেওয়া হয়৷ কীভাবে ?

যখন একটি মেয়ে বড় হতে থাকে তখন তাঁর স্তনও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে৷ শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধির মধ্যে এটিও একটি৷ ক্যামেরুনে বাচ্চা মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধিকে জোর করে আটকে দেওয়া হচ্ছে৷ একটি মেয়ের বয়স যখন আট তখন আগুন গরম পাথর ঘষে দেওয়া হয় তার বুকে যেন স্তন বেড়ে উঠতে না পারে৷ এর মধ্যে দিয়ে একটি মেয়ের ‘বড় হওয়া' কে বাধা দেওয়া হয়৷ যেন কোন ছেলে মেয়েটিকে বিরক্ত না করে, কোন পুরুষ যেন তার প্রতি আগ্রহ না দেখায়৷

এমিলিয়েন, তাঁর মেয়ে – কেউই বাদ যায়নি

ক্যামেরুনের উত্তরে অবস্থিত দুয়ালা৷ সেখান থেকে কয়েক ঘন্টার পথ ইয়াবাসি৷ এমিলিয়েন দোম্বি একটি কুটিরের বাইরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন৷ কুটিরের ভেতরে তাঁর মেয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে৷ কারণ মেয়েটির বুকে গরম পাথর ঘষা হচ্ছে৷ এই মেয়েটি তাঁর সবচেয়ে ছোট৷ যতবার গরম পাথর ছোঁয়ানো হচ্ছে ততবারই মেয়েট আর্ত চিৎকার করে যাচ্ছে৷ এমিলিয়েন জানান,‘আমার মেয়ের ওপর যখন এধরণের কিছু করা হয় তখন সত্যিই আমার ভীষণ কষ্ট হয়৷ আমি সহ্য করতে পারি না৷ কিন্তু আমার কিছুই করার নেই৷ এই গ্রামে প্রতিটি মেয়ের জন্যই ‘স্তন' একটি সমস্যা৷

Marktplatz in Kumba in Kamerun
ক্যামেরুনে মেয়েদের বাড়ন্ত বয়সকে আটকে দেওয়া হয়ছবি: DW

এমিলিয়েনের বয়স বর্তমানে ৩৫৷ কিন্তু তাঁকে দেখতে আরো অনেক বেশি বয়স্ক মনে হয়৷ এমিলিয়েন পরাজয় মেনে নিয়েছেন জীবনের কাছে৷ তিনি এখন মনে করেন মেয়ে হয়ে জন্মানো তাঁর উচিত হয়নি৷ তিনি তাঁর কুটির ছেড়ে বের হননা বললেই চলে৷ কেননা তাঁর শারীরিক পরিবর্তন তিনি অন্য কাউকে দেখাতে চাননা৷ অনেক ছোট বেলায় তাঁর বুকেও গরম পাথর ঘষে দেওয়া হয়েছিল৷ তাঁর গলার নিচ থেকে পেট পর্যন্ত শুধুমাত্র পোড়া, কালো দাগ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না৷ এমিলিয়েন বললেন, ‘‘আমি যখন খুব ছোট তখন আমার মা গরম পাথর আমার বুকে ঘষে দিত৷ প্রতিদিনই এমনটা চলতে থাকে যতক্ষণ না স্তন মিশে যেয়ে একেবারে হাড়ের সঙ্গে লেগে যাচ্ছে৷ অমানুষিক শারীরিক কষ্ট বোঝানোর মত নয়৷ সেই কষ্ট এবং ব্যাথা কখনোই যায় না৷''

কোন যুক্তিতে, কোন ভিত্তিতে

এমিলিয়েনের কুটিরের সামনে বসে রয়েছে এমিলিয়েনের মা আনে কোয়েডি৷ তিনি কখনোই চাননি তাঁর নিজের মেয়ে এ ধরণের যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাক৷ কিন্তু হাত-পা ছিল বাঁধা, সমাজের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে এই যন্ত্রণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি৷ কোয়েডি বললেন, ‘‘একটি মেয়ের বয়স যখন আট হয় তখন থেকেই শুরু হয় নিয়মিত গরম পাথর ঘষা৷ তখন থেকেই স্তন আর বড় হতে পারে না৷ এর ফলে কোন ছেলেও কোন মেয়েকে বিরক্ত করতে পারে না৷ সে দিক থেকে মেয়েদের রক্ষা করা হয়৷''

শুধু ক্যামেরুনেই নয়, আফ্রিকার অন্যান্য দেশ, যেমন টোগো, বেনিন, নাইজিরিয়া এবং গিনি এক্যোটোরিয়ালেও লক্ষ লক্ষ মেয়ের ওপর চালানো হয় এই নির্যাতন৷ এই রীতি মেনে চলা হচ্ছে কয়েক দশক ধরে৷ এর মূলে রয়েছে বাবা-মায়ের অহেতুক ভয়৷ সেই ভয় হল, হয়তো মেয়ে কারো সঙ্গে পালিয়ে যাবে বা বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়ে পড়বে৷ এসব হবে না যদি মেয়েটি শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় না হয়৷ মেয়ে অপহরণ এবং ধর্ষণ বেড়ে গেছে ক্যামেরুনে৷ তা থামাতে পারেননি এমিলিয়েন এবং তাঁর মা – এর পরিবর্তে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মকে বাধা দেওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন তারা৷

মহিলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডেনিস কাফুন্ডা জানান এর ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা৷ এর মধ্যে একটি হল ব্রেস্ট ক্যান্সার৷ কাফুন্ডা জানান, ‘‘মেয়েদের বুকে বা স্তনে যা করা হয় তা নিরাময়ে কোন ওষুধ নেই৷ তা ঠিক করে আগের অবস্থায়ও ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই৷ এটি খুবই অমানবিক একটি কাজ৷ মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের মতই৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়