1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোলনের পাতাল রেল নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০

এমনিতেই কোলন শহরের স্বজন-পোষণের ঐতিহ্য নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করা হয়৷ কিন্তু শহরের পাতাল রেল প্রকল্পে মারাত্মক গাফিলতি ও দুর্নীতির একের পর এক ঘটনা শহরবাসীর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/M4K6
২০০৯ সালের ৩রা মার্চ ভেঙে পড়েছিল কোলনের মহাফেজখানাছবি: picture-alliance/ dpa

বড় শহর, সুন্দর পরিবহন ব্যবস্থা৷ বাস-ট্রাম-পাতাল রেল৷ দিব্যি সব কিছু ঠিকমতো চলছিল৷ হঠাৎ শোনা গেল, শহরের মাঝখানে রাস্তায় ভিড় বড় বেশী৷ জমির উপর যে ট্রাম চলে, তার গতিপথের একটা অংশ সুড়ঙ্গের মধ্য নিয়ে গেলে চাপ কমবে৷ শহরের অন্য অনেক অংশেও তো ট্রাম কিছুটা অংশে পাতাল রেলের মত চলে৷ নিন্দুকেরা প্রশ্ন তুলল, মাত্র ৪ কিলোমিটার পথ মাটির তলায় নিয়ে গেলে কী এমন সুবিধা হবে! সে কথায় কান না দিয়ে শুরু হল পরিকল্পনা, হিসেব-নিকেশ৷ তারপর ঘটা করে শুরু হল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ৷

Hochwasser in Köln
রাইনে জল বাড়লে কোলন শহরের পুরানো অংশের এমন অবস্থা হতে পারে – যেমনটা ২০০৩ সালে ঘটেছিল৷ছবি: AP

প্রায় ২ হাজার বছরের পুরানো রোমান আমলের শহর৷ পুরোনো বাড়িঘর একেবারে পরস্পরের গায়ে লাগানো৷ এর মধ্যে একটি বাড়ি শহরের মহাফেজখানা৷ শহরের ২ সহস্রাব্দের ইতিহাসের অনেক অমূল্য নিদর্শন ও তথ্য সেখানে রাখা ছিল৷ বছরখানেক আগে হুড়মুড় করে ধ্বসে পড়ল সেই বাড়ি৷ চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে গেল সেই মহামূল্যবান সংগ্রহ৷ জানা গেল, নতুন সুড়ঙ্গপথ নির্মাণে ত্রুটির কারণেই এই দুর্ঘটনা৷ প্রাণ হারালেন ২ জন মানুষ৷ দিনের বেলা দুর্ঘটনা ঘটলে মৃতের সংখ্যা কী হতে পারত, তা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়৷ জানা গেল, নির্মাণের সময় অনেক গাফিলতি হয়েছে৷ যে সংস্থা ঐ অংশে সুড়ঙ্গ তৈরি করছিল, তারা অনেক বিধিনিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের মর্জিমাফিক কাজ করেছে৷

এখানেই ঘটনার শেষ নয়৷ সম্প্রতি জানা গেছে, যে নতুন লাইনের ভূগর্ভস্থ স্টেশন তৈরি করার সময় নিয়ম অনুযায়ী যতটা ইস্পাত ব্যবহার করার কথা ছিল, তার সিংহভাগ সরিয়ে ফেলে চোরা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে৷ যতটা সিমেন্ট ব্যবহারের কথা ছিল, তাও করা হয় নি৷ সেই সিমেন্টও উধাও হয়ে গেছে৷ ফলে ভবিষ্যতের স্টেশন, রেলের সুড়ঙ্গ এবং আশেপাশের বাড়িঘরের স্থিতিশীলতা যে বিপন্ন হবে, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার কোন উপায় নেই৷ বিশেষ করে রাইন নদীর জলের স্তর যখনই বিপদ সীমার উপরে আসবে, তখন আরও বিপন্ন হবে গোটা এলাকা৷ বছরে কমপক্ষে একবার বরফ গলা জলের স্রোত রাইন নদীতে বান আনে বৈকি৷

Köln Stadtarchiv Severinstraße Reportage
শহরের রাস্তায় চলছে নির্মাণের কাজছবি: Maksim Nelioubin

বলাই বাহুল্য, শহরবাসীরা এই প্রকল্পকে ঘিরে একের পর এক মারাত্মক খবরে ভীত, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ৷ শহর কর্তৃপক্ষ যতই বিপদের আশঙ্কা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে, ক্ষোভ ততই বাড়ছে৷ প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন, শহর ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ, নির্মাণ সংস্থা, তাদের নিযুক্ত করা ঠিকাদার সংস্থা এবং তাদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ – এরা সবাই কি একসঙ্গে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে, নাকি সবাই এক বিশাল দুর্নীতির কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত? মানুষের প্রাণ নিয়ে এমন খেলা তো শুধু গাফিলতি হতে পারে না, এ তো অসংখ্য মানুষের প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা ছাড়া কিছু নয়৷ প্রতিদিনই প্রস্তাবিত এই পাতাল রেল পথে একের পর এক ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ছে৷ বিশেষজ্ঞ ও তদন্তকারীরা মহা ব্যস্ত হয়ে পথে নেমেছেন৷ এখন দেখা যাক, শেষরক্ষা হয় কি না৷


প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম