1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোরিয়া উপদ্বীপে প্রবল উত্তেজনা, বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও উদ্বেগ

২৩ নভেম্বর ২০১০

দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বীপে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে গোলা বিনিময়৷ হামলা অব্যাহত রাখার হুমকি দিল পিয়ংইয়ং৷ সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড়৷ উদ্বিগ্ন বিশ্ব সম্প্রদায়৷ উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান৷

https://p.dw.com/p/QFq4
Houses, South Korea, Yeonpyeong, North Korea, উত্তর কোরিয়া, গোলা, কোরিয়া উপদ্বীপে প্রবল উত্তেজনা
গোলা হামলার পর ঘর-বাড়িতে আগুন জ্বলছেছবি: AP

দু'দিন আগে উত্তর কোরিয়ার নতুন পারমাণবিক স্থাপনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নপিয়ং দ্বীপে হামলা চালালো উত্তর কোরিয়া৷ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটায় উত্তর কোরিয়া অবৈধভাবে গোলা ছোঁড়ে৷ ফলে আত্মরক্ষার স্বার্থে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনারাও পাল্টা গোলা চালায়৷'' তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ করে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ ‘এ' শ্রেণীর সতর্কতায় রাখা হয়েছে৷'' তবে পিয়ংইয়ং দাবি করছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সৈন্যরাই নাকি প্রথম হামলা চালিয়েছে৷

এছাড়া সৌলকে লক্ষ্য করে আরো ভয়ংকর হুমকি ছুঁড়ে দিয়েছে পিয়ংইয়ং৷ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ড থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘দক্ষিণ কোরিয়া বিতর্কিত সমুদ্র সীমার ০.০০১ মিলিমিটার অতিক্রম করলে তাদের উপর অনবরত সামরিক হামলা চালাতে থাকবে উত্তর কোরিয়া৷’’ এদিকে, দুই কোরিয়ার মধ্যে গোলাগুলি নিয়ে বিশ্বে যখন উত্তপ্ত আলোচনা চলছে তখন দক্ষিণ কোরিয়ার এক সামরিক কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেল, উত্তরের হামলা চালানোর আগেই ঐ অঞ্চলে সামরিক মহড়া চালাচ্ছিল দক্ষিণ৷ তবে তাদের দাবি, তাদের মহড়া উত্তরকে লক্ষ্য করে নয় বরং তা ছিল পশ্চিমমুখী৷ ওয়াইটিএন টেলিভিশনের খবরে বলা হচ্ছে, কমপক্ষে ৫০ টি গোলা বর্ষণ করেছে উত্তর কোরিয়া৷ উত্তেজনাপূর্ণ পীত সাগর সীমান্তের নিকটবর্তী দ্বীপে এসে পড়ে এসব গোলা৷ ফলে সেখানে কয়েক ডজন বাড়ি ধ্বংস হয়েছে৷ আকাশ ছেয়ে গেছে ঘন কালো ধোঁয়ায়৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন ঐ অঞ্চলে স্থায়ীভাবে মোতায়েন থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নৌসেনা৷ অপর ১৫ নৌসেনা এবং দুই জন বেসামরিক নাগরিকের আহত হওয়ার খবর দিয়েছে ঐ টিভি স্টেশন৷

Houses, South Korea, Yeonpyeong, North Korea, উত্তর কোরিয়া, গোলা, কোরিয়া উপদ্বীপ, উত্তেজনা
গোলা হামলার পর ঘন কালো ধোঁয়াছবি: AP

ইয়নপিয়ং দ্বীপের বাসিন্দা লি জং সিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, কমপক্ষে দশটি বাড়িতে আগুন জ্বলছে৷ তবে কালো ধোঁয়ার কারণে সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে না৷ তিনি বলেন, ‘‘লাউডস্পিকারে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যেন আমরা ঘর-বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই৷'' আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ১৯৫০-৫৩ সময়ের যুদ্ধের পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সীমান্ত উত্তেজনা৷

এদিকে, উত্তর কোরিয়ার হামলার প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষকে শান্তি বজার রাখার আহ্বান জানিয়েছে চীন৷ চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হং লি বলেন, ‘‘চীন আশাবাদী যে, উভয়পক্ষই ঐ অঞ্চলে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অবদান রাখবে৷'' উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়াও৷ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সামরিক পদক্ষেপ ভুল পথে চালিত হতে পারে৷ তাই এমন মহাবিপদ এড়াতে সম্ভব সব প্রচেষ্টা চালাতে হবে৷’’ জাপান এই পরিস্থিতির মুখে সবরকমের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছে৷ উস্কানিমূলক সংঘাতের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে উত্তর কোরিয়ার এই হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন,‘‘দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর উত্তর কোরিয়ার গোলাবর্ষণের ঘটনায় আমি খুবই উদ্বিগ্ন৷ নতুন এই সামরিক প্ররোচনা ঐ অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ৷ এই উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে৷ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ও তার সরকারের প্রতি জার্মান সরকার সমর্থন ও সহানুভূতি জানাচ্ছে৷’’

বার্লিনের বিজ্ঞান ও রাজনীতি ফাউন্ডেশনের এশিয়া বিষয়ক গবেষকগ্রুপের বিশেষজ্ঞ মারকুস টিডটেনও মনে করেন, দক্ষিণ কোরিয়ার মহড়াই সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে হামলার কারণ৷ তবে এরকম মহড়া ব্যতিক্রমী কোন ঘটনা নয়৷ তিনি অবশ্য আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি মনে করছি এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ বিশেষ করে কোরিয়া প্রসঙ্গে দুই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন সংকট যাতে আরো ছড়িয়ে না পড়তে পারে তার জন্য সক্রিয় উদ্যোগ নেবে৷’’ অন্যদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডাকার কথা জানিয়েছেন এক ফরাসি কূটনীতিক৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক