কোটি টাকার টুনা মাছ
বাংলাদেশের মাছের ঐতিহ্য বলতে আমরা ইলিশকেই বুঝি৷ তাই নববর্ষে হাজার টাকার ইলিশও খবর হয়৷ জাপানে তেমনি হয় টুনা নিয়ে৷ নতুন বছরে রীতিমতো নিলাম করে বিক্রি হয় টুনা৷ তারই কিছু নমুনা দেখে নিন ছবিতে...
টুনার দাম ৩১ লাখ ডলার!
একটা টুনা মাছের দাম কত হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে হাজার পর্যন্ত বলা যায়৷ কিন্তু একটি ২৭৮ কেজি নীল পাখার টুনা বিক্রি হয়েছে ৩১ লাখ ডলারে৷ নববর্ষে জাপানের টোকিওতে তয়োসো মার্কেটে টুনা বিক্রির নিলামে মাছটি কিনে নেন সুশি জানমাই রেস্তোরাঁ চেইনের প্রধান কিয়োশি কিমুরা৷ প্রতি কেজি টুনার দাম পড়েছে ১২ লাখ ইয়েন৷
ভালো জিনিসের দাম একটু বেশিই
‘টুনা কিং’ হিসেবে পরিচিত জাপানের রেস্তোরাঁ মালিক কিয়োশি কিমুরা বলেন, ‘‘ভালো জিনিসের দাম একটু বেশিই৷’’ যতটা আশা করেছিলেন তার চেয়ে বেশি দামেই টুনা কিনেছেন৷ তায়োসো মার্কেটের টুনা নিলামে সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার৷ এবার তার দুইগুণ৷ কিমুরা বিশ্বাস করেন, ক্রেতারা এত দাম দিয়েই টুনার স্বাদ নেবেন, কারণ, এটি বিরল স্বাদের৷
বিপন্ন নীল পাখার টুনা!
লাখ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া টুনা মাছও হুমকির মুখে বলে দাবি করছেন পরিবেশবিদরা৷ টুনা সংরক্ষণকারী পরিবেশবাদী সংগঠন পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সহব্যবস্থাপক জ্যামি গিবন বলেন, জাপানে অতিরিক্ত টুনা শিকারই এই বিরল স্বাদের নীল পাখার টুনাকে বিপন্ন করছে৷ এই নিলাম সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান তিনি৷
টিনে পাওয়া যাবে না টুনা!
শাসিমি বা কৌটার টুনা তৈরি হয় বিগ আই প্রজাতির রূপালি টুনা দিয়ে৷ টুনা সংরক্ষণকারী গবেষকরা দাবি করছেন, ২০১৮ সালে শুধু জাপানের বাজারে ৮৩ হাজার টন টুনা বিক্রি হয়েছে৷ এতে প্রজনন ব্যহত হচ্ছে৷ ফলে আগামী দুই দশকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে ‘বিগ আই টুনা’৷ টুনা শিকার কমিয়ে বছরে ৫৫ হাজার টনে নামিয়ে আনতে পারলে ২০২৮ সাল নাগাদ প্রজনন ৭০ ভাগ বাড়ানো যাবে৷
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টুনা বাজার
শুধু একটি মাছকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল টোকিওর সুকিজি টুনা বাজার৷ এই বাজারটি সুমিদা নদীর তীরে ৮৩ বছর আগে গড়ে ওঠে৷ ২০১৮ সালে এই বাজারটি বন্ধ করে তায়োসোতে স্থানান্তর করা হয়৷ এটিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় টুনা মার্কেট৷ প্রতি বছর এই মার্কেটে প্রায় ১ লাখ টন টুনা বিক্রি হয়৷ এখানে বড় বড় হিমাগারে সারি দিয়ে টুনা রাখা হয় বিক্রির জন্য৷
সামুদ্রিক খাবারের এক তৃতীয়াংশ টুনা!
বিশ্বে যত সামুদ্রিক খাবার খাওয়া হয় তার এক তৃ্তীয়াংশ পূরণ করে টুনা৷ চিংড়ি বা অন্যান্য মাছের তুলনায় টুনার ব্যবহার বেশি৷ ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও জাপানে টুনা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়৷ তবে টিনজাত টুনা খাওয়ায় এগিয়ে ইউরোপ৷ বছরে বিক্রির মোট ৫১ ভাগ টুনা ইউরোপীয়দের পেটে যায়৷ অ্যামেরিকা ৩১ শতাংশ খায় আর জাপান মাত্র ৬ শতাংশ৷ জাপানে টাটকা টুনার কদর বেশি৷
জনপ্রিয় টিনজাত টুনা ৷
টুনার কদর নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ তবে সুশি বা সাশিমির জন্য ব্যবহৃত টুনা শুধু জাপানেই খাওয়া হয়৷ বিশ্বে জনপ্রিয় টুনার তালিকায় সবচেয়ে শীর্ষে টিনজাত টুনা৷ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর এক বিলিয়ন পাউন্ড ওজনের ক্যান টুনা বিক্রি হয়৷ অর্থাৎ অ্যামেরিকানরা গড়ে ২ দশমিক ৭ পাউন্ড টুনা খায়
টুনা উৎসব
জাপানের চেরি উৎসবের মতোই টুনা উৎসবও ভীষণ জনপ্রিয়৷ প্রতি বছরই সুকিজি টুনা বাজারে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়৷ বিশেষ করে নববর্ষে টুনা নিলামের সময় অনূ্ষ্ঠিত হয় সব চেয়ে বড় উৎসবটি৷ এছাড়া জাপানি নববর্ষে অনু্ষ্ঠিত হয় আরেকটি বড় উৎসব৷ এই আয়োজনে দর্শনার্থীরা টুনা নিলাম, কাটা, প্রক্রিয়াজাত সবই দেখতে পারেন, কিন্তু কেনার সুযোগ থাকে না৷ তবে খাওয়ার জন্য নিলামকেন্দ্রের বাইরে দোকান বসানো হয়৷