কেমন কাটলো রসরাজদের পূজা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ দাসের কথিত ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ঘটে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা৷ এরপর কেটে গেছে দুই বছর৷ স্বস্তি ফিরে আসছে নাসিরনগরে, ধুমধামে হয়েছে দুর্গাপূজাও৷
দুঃসহ স্মৃতি
২০১৬ সালের অক্টোবরে নাসিরনগরে হিন্দু জনপদে দিনভর সহিংসতা চালায় দুর্বৃত্তরা৷ উপজেলা সদরের ঘোষপাড়া, দাসপাড়া, নমঃশুদ্রপাড়া, দত্তপাড়ায় কয়েকশ’ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে একযোগে হামলা চালায়৷ এ সময় তারা শতাধিক বাড়ি ঘরে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করে৷ ভেঙে ফেলে প্রাচীন গৌরমন্দির, লোকনাথ মন্দির, কালী মন্দির, মহাদেব মন্দিরসহ অন্তত ১০টি মন্দির৷ ভাঙা হয় মন্দিরের প্রতিমাও৷
ঘুরে দাঁড়িয়েছে জেলেপল্লী
দুই বছরের ভয়াবহতা কাটিয়ে আবার উচ্ছ্বলতা ফিরে পেয়েছে নাসিরনগর৷ হরিপুর গ্রামের জেলেপল্লী জুড়ে সাজ সাজ রবে আয়োজন হয়েছে দুর্গা পূজার৷ রসরাজ দাসের বাড়ির পাশের মন্দিরের দুর্গামণ্ডপেও ধুমধাম করেই হয়েছে পূজা৷
রসরাজেরও নতুন শুরু
অতীত ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে চান রসরাজ৷ জীবনযুদ্ধে তাই বেছে নিয়েছেন একজন কাছের মানুষ৷ বিয়ে করেছেন এই মাসেরই ৬ তারিখ৷ নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামের প্রমোদ চন্দ্র দাসের মেয়ে নির্মলা রানী দাস জীবনের আগামী সব লড়াইয়ে রসরাজের সঙ্গী৷
ব্যথা ভুলে নতুন সাজে
পূজা কমিটির সদস্য জগন্নাথ দাস বলেন, রসরাজ দাসের কথিত স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ভাঙা হয়েছিল শ্রী শ্রী শিব মন্দিরও৷ এই মন্দিরে একটি প্রতিমার হাত ভেঙে দেয় হামলাকারীরা৷ সেই মন্দির নতুন প্রতিমায় সেজেছে নতুন সাজে৷ মায়ের আরাধনায় তাই ছিল না কোনো কমতি৷
পুনরাবৃত্তি না হওয়ার প্রার্থনা
পরিবারের সঙ্গে এই মণ্ডপে এসেছেন শিক্ষার্থী নদী রায়৷ দেবীর সামনে প্রণামরত এই কিশোরীর প্রার্থনা, ২০১৬ সালের ঘটনা যাতে আর কখনো না ঘটে৷ ধর্ম যেন বিভেদের বদলে সম্প্রীতি বয়ে আনে৷
ঢাকের তালে মুখর পূজামণ্ডপ
একসময় সাম্প্রদায়িক শক্তির হামলায় কুঁকড়ে গিয়েছিল যে নাসিরনগর, সে নাসিরনগরে এখন ভয়মুক্ত পূজাই উদয়াপন করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা৷ পূজা মণ্ডপে ঢাকের তালে মত্ত ঢাকি৷
বিভেদ নয়, ঐক্যেই শান্তি
নাসিরনগরে মন্দিরে হামলার সময় ব্যারিকেড তৈরি করে তা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয় অনেক মুসলিম বাসিন্দা৷ মো. মিজবান মিয়া তাঁদের একজন৷ হামলা ঠেকাতে গিয়ে তিনি নিজেও পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলেন৷ কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার করাল থাবা কেড়ে নিতে পারেনি তাঁর বন্ধুত্ব৷ পুজায় বন্ধু মোহন লাল দাসকে সাহায্য করতে তাই সবার আগে এগিয়ে এসেছেন মো. মিজবান মিয়া৷
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার
বোরকা পরেই পূজা মন্ডপে এসেছেন নাসিরনগরের এই মুসলিম নারী৷ পূজার আমেজ মোবাইল ফোনে ধারণ করছেন তিনি৷ বলছেন, ‘‘তাঁরা আমাদের প্রতিবেশী, সুখে-দুঃখে পাশে তো থাকতেই হবে৷’’
হয়েছে আরতি প্রতিযোগিতাও
মা দুর্গা এবার এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে, বিদায় নিলেন পালকি চড়ে৷ মাকে বিদায় দেয়ার আগে নাসির নগর তোল্লা পাড়া মন্দিরে আরতিতে মত্ত পরিতোষ মল্লিক৷ ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টায় এক বছরের জন্য মর্ত্য থেকে বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা৷