কেমন আছে হরিদ্বারের ‘মা’ গঙ্গা?
গঙ্গাকে দেবীরূপে পুজো করার চল আদি যুগ থেকেই৷ সম্প্রতি এ নদীকে মানুষের স্বীকৃতিও দিয়েছে ভারত৷ অথচ নদীর দূষণ রোধ করা যায়নি৷ উল্টে অসচেতনভাবে ধর্মচর্চার কারণে দূষণ বেড়েই চলেছে হরিদ্বারের মতো হিন্দু ধর্মের পীঠস্থানগুলোতে৷
গঙ্গাবক্ষে আরতি
হরিদ্বারের প্রবহমান গঙ্গায় ‘হর কি পৌরি’ ঘাট৷ প্রতিদিন কয়েক হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী এ ঘাটে ‘গঙ্গাস্নান’ করেন৷ সন্ধ্যাবেলায় এখানেই অনুষ্ঠিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ গঙ্গা-আরতি, যা দেখতে বিদেশি পর্যটকরাও ভিড় জমান৷ ‘হর কি পৌরি’ ঘাটে সন্ধ্যারতির সময় হরিদ্বারের অন্যান্য ঘাটও গঙ্গা-আরতিতে মেতে ওঠে৷
দূষণের জন্য দায়ী পুজোর সামগ্রি?
গঙ্গা-আরতির পর পুজোর পরিত্যক্ত সামগ্রীতে ‘হর কি পৌরি’ ঘাটের দশা হয় ঠিক এ রকম৷ তাই দর্শনার্থীদের দিয়ে ‘মা’ গঙ্গাকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেওয়া আজকাল গঙ্গা-আরতির অবিচ্ছেদ্য অংশ৷
প্লাস্টিকের নয়, বুনো গাছের ভেলা
গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য বুনো গাছের পাতায় সাজানো ফুল, ফল, দুধ, নারকেল ও অন্যান্য সামগ্রী৷ এগুলো বিক্রি হয় প্রতিটি ঘাটেই৷ এক সময় প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ভেলাতে বিক্রি হতো এসব৷ তবে এখন দিন পাল্টেছে৷
‘মা’ গঙ্গা কি সত্যিই তুষ্ট হচ্ছেন?
সার্বজনীন গঙ্গাপুজো ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে ইতিউতি কয়েকশ’ মানুষ ‘মা’ গঙ্গাকে তুষ্ট করতে পুজোর আয়োজন করেন৷ গঙ্গায় ফুল, ফল, ধূপ ও অন্যান্য সামগ্রী ভাসিয়ে দেন তাঁরাও৷ অন্যান্য জিনিস প্রাকৃতিক হলেও, মোমদানিটা কিন্তু হয় প্লাস্টিকের বা মেটালেরই৷ তা এতে ‘মা’ কি আসলেই তুষ্ট হন?
‘পুণ্যস্নান’ এবং গঙ্গা দূষণ
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ‘পুণ্যস্নান’-ও গঙ্গা দূষণের জন্য দায়ী৷ স্নানের সময় জলে সাবান, ক্ষতিকর ডিটারজেন্ট তো যায়-ই, ফেলে রাখা জামা-কাপড়, প্লাস্টিক একটা নোংরা, অপরিষ্কার পরিবেশের সৃষ্টি করে৷ তাছাড়া গঙ্গায় ডুব দিয়ে পুণ্যস্নানের পর নদীর জলে দুধ ঢেলে পুজো দেন ভক্তরা৷ চলে বাসন মাজার কাজও৷
ফুল থেকে চুল – সবই যায় গঙ্গায়
‘মা’ গঙ্গার কাছে বাবা-মায়ের ‘মানসিক’ অনুযায়ী কোলের শিশুটির মস্তক মুণ্ডন হরিদ্বারের পরিচিত দৃশ্য৷ অর্থাৎ মাথার চুলও গিয়ে পড়ে সেই গঙ্গার জলেই৷
এভাবেই হচ্ছে আত্মার শান্তি!
গঙ্গাকে ‘মা’, ‘দেবী’ হিসেবে সেই আদিকাল থেকে পুজো করে আসছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা৷ প্রয়াত আত্মীয় পরিজনের আত্মার শান্তির জন্য গঙ্গা ঘাটে পূজার্চনা এবং ‘পিণ্ডদান’-এ হরিদ্বারে বহুল প্রচলিত৷ পিণ্ডদান করার সময় ছাই-ভস্ম, মাটি, ধূপকাটি, এমনকি মৃত ব্যক্তির জামা-কাপড়ও বিসর্জন দেওয়া হয় গঙ্গায়৷
জীবিকায় সহায়ক ধর্মবিশ্বাস
বয়স মেরেকেটে ছয় অথবা সাত৷ ‘মা’ গঙ্গার নামে হাতে পুজোর থালা ও জ্বলন্ত প্রদীপ নিয়ে ‘ভিক্ষা’ করে চুমকি, রোশনি, মুন্নিরা৷ গঙ্গাস্নানে আসা পুণ্যার্থীদের ধর্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে পেটের ভাত জোগাড় করে এরা৷
নিশ্চিন্ত দিবানিদ্রায় সাধুবাবা
গঙ্গার পাড়ে ‘ব্যোম ভোলে’ বলেই মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এই সাধুবাবারা৷ বিনিময়ে দু-এক টাকা রোজগার ওঁদের৷ এখানে এক সাধুবাবার সুখনিদ্রা, ঘাটের ধারে ধুলো-ময়লার ওপরেই৷
‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’
সকাল-বিকেল ঝাড়ু হাতে দেখা যায় এঁদের৷ সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর কর্মী ইনি৷ পুণ্যার্থীদের ফেলে যাওয়া ময়লা, প্লাস্টিকের প্যাকেট, জলের বোতল, বিড়ি-সিগারেট – সমস্তরকম নোংরা সাফ করে গঙ্গার ঘাট পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব তাঁর৷ কিন্তু, এভাবে কি ‘মা’ গঙ্গার দূষণ রোধ করা সম্ভব?