1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কী করলে আমরা ভালো বোধ করি?

১ নভেম্বর ২০১০

সুখ বোধ করার বিষয়টি আসলে নির্ভর করে পরিবার, সামাজিক কর্মকাণ্ড, ধর্ম, এবং নিজের কাজের ধরণের ওপর৷ সম্প্রতি সুখ নিয়ে চালানো এক সমীক্ষায় তাই দেখা গেছে৷

https://p.dw.com/p/PvSG
কাভি খুশি, কাভি গাম ছবির একটি দৃশ্যছবি: Presse

অনেকেই ভাবেন যে, বংশগতি বা জিনের ওপরই নির্ভর করে মানুষের সুখ বোধের ব্যাপারটি৷ আসলে কিন্তু তা নয়৷ জার্মানিতে দীর্ঘদিন ধরে চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী কাজ করার ওপরেই সুখ বোধ করার বেশিরভাগটা নির্ভর করে৷ বার্লিনে জার্মান সোশিয়ো-ইকোনমিক প্যানেল সার্ভে বা এসওইপি-র ডাটা নিয়ে, আন্তর্জাতিক গবেষকরা একটি বিশ্লেষণ পরিচালনা করেছেন৷ এসওইপি, ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৬০ হাজার জার্মান তরুণের ওপরে সমীক্ষা চালিয়েছে৷ গবেষকরা সেখানে দেখেছেন, অর্থের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষের লক্ষ্যগুলো৷ তাঁরা দেখেছেন, সুখ বোধ করার বিষয়টি আসলে নির্ভর করে পরিবার, সামাজিক কর্মকাণ্ড, ধর্ম, এবং নিজের কাজের ধরণের ওপরে৷ তাঁদের এই সমীক্ষার ফলাফল সম্প্রতি ‘প্রোসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে৷

মনস্তত্ত্ববিদরা কয়েক দশক ধরেই খুঁজে করার চেষ্টা করছেন মানুষের সুখ বোধ করার কারণ৷ ১৯৭০ এর দশকে অনেক গবেষকই ভাবতেন, প্রত্যেকেরই সুখ বোধ করার একটি মাত্রা আছে এবং জীবনের উত্থান-পতন সত্ত্বেও, মানুষ সবসময়ে সেখানেই ফিরে আসে৷ এটাকে বলা হয়, ‘সেট পয়েন্ট থিওরি'৷ আগে ভাবা হত যে এই বিষয়গুলোই বংশগতি এবং এবং শৈশবের অভিজ্ঞতার ওপরে নির্ভর করে৷

Smiley - Smile face button Emoticon

বার্লিনে জার্মান ইন্সটিটিউট অফ ইকোনমিক রিসার্চ-এর একজন অর্থনীতিবিদ গ্যার্ট ভাগনার৷ তিনি মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের একজন ফেলো এবং এই সমীক্ষার একজন লেখকও৷ তিনি বলেন, ‘সেট পয়েন্ট থিওরি'-টা আসলে শতকরা ৫০ ভাগ জনসংখ্যার ক্ষেত্রে খাটে৷ তবে সময়ের সাথে সাথে জীবন পরিবর্তিত হচ্ছে বলে যারা ভাবেন তাদের জন্যে এই থিওরি সঠিক না৷

গ্যার্ট ভাগনার বলেন, ‘‘পরিবর্তনের এক তৃতীয়াংশ নেতিবাচক৷ যেমন কেউ কেউ তার জীবনসঙ্গীর অসুস্থতা অথবা মৃত্যু কামনা করে৷ বাকিদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ ইতিবাচক পরিবর্তন চায়, তবে তাদের সংখ্যা নগণ্য৷''

ভাগনার বলেন, ফলাফলে দেখা গেছে, সংকটপূর্ণ জীবনের চেয়ে অসুখী থাকাটা সহজ বলে অনেকে মনে করেন এবং সঠিক পছন্দের মাধ্যমে জীবনের আশা আকাঙ্ক্ষার উন্নয়ন ঘটানো আরো কঠিন বলেই মানুষ মনে করে৷ আর এই বিষয়টিই গবেষকদের আন্দোলিত করেছে সবচেয়ে বেশি৷ ভাগনার বলেন, ‘‘আমাদের সমীক্ষার যে বিষয়টি নতুন সেটি হচ্ছে, আপনার পছন্দের দিকে আমরা নজর দিচ্ছি৷ আর হাতে কলমে আমরা যেটা দেখেছি, তা হচ্ছে, পছন্দই পার্থক্য তৈরি করছে৷''

Frau mit Kopfhörern in einer virtuellen Welt
ছবি: picture-alliance/chromorange

তার মানে হচ্ছে, মানুষ নিজেদের জীবনে যে বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয় সুখের চাবিকাঠি সেটিই৷ এবং ফলাফল দেখে কারোরই অবাক হবার কিছু নেই৷ ভাগনার আরো বলেন, ‘‘জীবনে জিনিসপত্র অর্জনের লক্ষ্যের চেয়ে সামাজিক লক্ষ্য অর্জন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ এবং সুস্থ থাকা এবং সুস্থ থাকতে চাওয়ার ব্যাপারটি খুব ভালো৷ অল্প বিস্তর খেলাধুলা অর্থাৎ দৌড়ানো ও শরীর চর্চা করাটাও আপনার জন্যে ভালো৷''

এগুলো খুব যুক্তিযুক্ত শোনায়৷ কিন্তু সুখী হওয়াটা কি এতো সহজ? এক অর্থে হ্যাঁ৷ প্রতিদিন আমরা আমাদেরকে সুখী করা জন্যেই সব কিছু করি৷ এবং বার্লিনের পথের লোকজনও অধ্যাপক ভাগনারের এই বিশ্লেষণের সাথে একমত৷ একজন বললেন, ‘‘আমি প্রচুর স্পোর্টস করি এবং যারা আমাকে আনন্দ দেয় এবং সুখী করতে চাই আমি তাদের চারপাশেই থাকি৷''

আরেকজন বললেন, ‘‘সংগীত আমি ভীষণ পছন্দ করি৷ আমি নিজে গান করি, এমনকি নিজের মেয়ের সঙ্গেও অনেক সময় কাটাই আমি গান করে৷ আমরা একসাথে বাইরে বেড়াতে যাই, প্রকৃতির কাছে যাই এবং গান গাই৷’’

সম্পর্ক একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার৷ তবে ভাগনার এবং তাঁর সহকর্মীদের মতে, মানসিকভাবে অসুস্থ সঙ্গী পছন্দ করলে, যে কেউ জীবনে নিশ্চিতভাবে অসুখী হবেন৷ কিন্তু সুস্থ সম্পর্ক সবসময়েই সহজ৷ তবে অন্য কথায়, সুখী হবার ব্যাপারটি একটি কঠিন প্রক্রিয়া৷ কেননা, সুখী হবার ক্ষেত্রে অনেক ব্যক্তি, প্রকৃতি এবং পরিবেশও মানুষকে প্রভাবিত করে৷ কিন্তু শেষ কথাটি হচ্ছে, আপনি কেমন বোধ করবেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনার ওপরে৷

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন