1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিশোরকুমার: রাজনীতি হলো, ভারতরত্ন কবে?

পায়েল সামন্ত
৬ আগস্ট ২০২২

পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির আবর্তে প্রবাদপ্রতিম শিল্পীও৷ কিশোরকুমারের জন্মদিন ঘিরে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে৷ এতে ব্যথিত বাংলার সংস্কৃতি সমাজ৷

https://p.dw.com/p/4FCyx
কিশোরকুমারের স্মরণে অনুষ্ঠান
কিশোরকুমারের স্মরণে অনুষ্ঠানছবি: Payel Samanta/DW

বাংলা তথা ভারতের সঙ্গীত জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র কিশোরকুমার৷ তাঁর গান, অভিনয় আজও মাতিয়ে রেখেছে মানুষকে৷  ৪ আগস্ট জন্মদিনে কিশোরকুমারকে স্মরণ করা হয়৷  এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে জুড়ে যান সব ধর্ম-বর্ণ-মতের মানুষ৷ কিন্তু গত বৃহস্পতিবার প্রয়াত শিল্পী-অভিনেতার ৯৩তম জন্মদিনে উঠে এলো বিভাজনের ছবি৷

স্মরণে তরজা

টালিগঞ্জে কিশোরকুমার উদ্যানে প্রতি বছর জন্মদিন পালন করা হয়৷ অনুষ্ঠানে ছিলেন তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী, গায়ক সৈকত মিত্র প্রমুখ৷ রাজ্য বিজেপির অভিযোগ, এই উদ্যানে তাদের মালা দিতে দেওয়া হয়নি৷ পুলিশের অনুমতি যাতে না মেলে সেই ব্যবস্থা করা হয়৷ বিজেপি নেতা ও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘কিশোরকুমার কারো একার নন৷ কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নন৷'' প্রতিবাদে কাছাকাছি টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে শিল্পীর ছবিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিজেপি নেতারা৷  অরূপ বিশ্বাস অভিযোগ খারিজ করে বলেন, ‘‘সকলেই এই উদ্যানে এসে প্রতি বছর শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানান৷ এখানে না এসে বিজেপি যে অভিযোগ করছে তার দায় আমরা নিতে পারব না৷''

কিশোরজিকে মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন' দেওয়া হোক: গৌতম ঘোষ

কিশোরকণ্ঠীর আক্ষেপ

পশ্চিমবঙ্গের জনতা রাজনীতি সচেতন এমনটা বলা হয়ে থাকে৷ কিন্তু তা বলে কিশোরকুমার! এই বিষয়ে প্রশ্ন করতে বিচলিত হয়ে পড়েন গায়ক গৌতম ঘোষ৷ কিশোরকণ্ঠী হিসেবে এক সময় সাড়া জাগানো গৌতম বলেন, ‘‘তিনি আমাদের সকলের৷ তাঁকে নিয়ে ভাগাভাগি করবেন না৷ সবার কাছে এটাই অনুরোধ৷'' গৌতমের কাছে কিশোর শুধু শিল্পী নন, সাক্ষাৎ ঈশ্বর! নিজের বাড়িতে শিল্পীর মূর্তি বসিয়েছেন তিনি৷ প্রয়াত শিল্পীর পাদুকা রয়েছে শোকেসে, প্রণাম করেন রোজ৷ গত আশির দশকে কিশোর কুমারের সঙ্গে আলাপ করতে গৌতম ছুটে গিয়েছিলেন মুম্বই৷ তার প্রশ্ন, ‘‘গানবাজনা নিয়ে রাজনীতি হবে কেন? গানের কোনো রং হয় না, সবাইকে আনন্দ দেয়৷ সেটাই আজীবন করেছেন কিশোর কুমার৷''

কিশোরকুমারের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন বিজেপির
কিশোরকুমারের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন বিজেপিরছবি: Payel Samanta/DW

রাজনীতিতে শিল্পীরা

ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শিল্পীদের সঙ্গে রাজনীতির প্রত্যক্ষ যোগ ছিল৷ গণ আন্দোলনের গান তৈরি করে সলিল চৌধুরীর মতো শিল্পীরা জনমত গঠনে সাহায্য করেছেন৷ কিশোরকুমার রাজনীতি থেকে সযত্নে দূরে থাকতে চেয়েছেন৷ সত্তরের দশকে যুব কংগ্রেসের পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার ডাক প্রত্যাখ্যান করেন তিনি৷  তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রচারমূলক বিজ্ঞাপনে গান গাইতেও অস্বীকার করেন৷ এ জন্য তাকে সরকারি গণমাধ্যমে নির্বাসন দেওয়া হয়৷ এখন বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি মহল অবশ্য অনেকটাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷ ফলে বামফ্রন্ট থেকে তৃণমূলের আমলে শিল্পীদের মধ্যে শিবির বিভাজন দেখা গিয়েছে৷ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর টলিউডের একাধিক অভিনেতা-শিল্পী সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন, জনপ্রতিনিধি হয়েছেন৷ এক সময়ের জনপ্রিয় গায়ক ইন্দ্রনীল সেন এখন রাজ্যের মন্ত্রী৷

প্রশ্ন সংস্কৃতি জগতে

সবার প্রিয় শিল্পীর জন্মদিন ঘিরে তরজা কেন হবে? প্রশ্ন তুলছে বাংলার শিল্পী মহল৷ প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী, সুরকার শ্যামল মিত্রের পুত্র, গায়ক সৈকত বলেন, ‘‘কারা কেন মালা দিতে পারেননি, সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না৷ কিশোরকুমারকে নিয়ে টানাপোড়েন যারা করছেন, তারাই বলতে পারবেন কেন করছেন৷ তবে সংস্কৃতি জগতের রাজনীতিকরণ না হওয়াই কাম্য৷''

‘‘সংস্কৃতি জগতের রাজনীতিকরণ না হওয়াই কাম্য’’

পঞ্চকবির গানে প্রসিদ্ধ ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে পরে দলত্যাগ করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিশোরকুমার সব মালার ঊর্ধ্বে৷ সারা দেশ তাঁর গান শোনে৷ এখানেই শিল্পীর জয়৷

কিশোরকে কবে ‘ভারতরত্ন'?

কিশোরকুমারকে নিয়ে রাজনীতির টানাপোড়েন চললেও রাজনীতিকরা কি তাঁর কথা মনে রেখেছেন? প্রশ্ন তুলেছেন গৌতম ঘোষ৷ তার বক্তব্য, ‘‘কিশোরজিকে মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন' দেওয়া হোক৷কেন তিনি সরকারি স্বীকৃতি পাবেন না? কংগ্রেস দেয়নি, বিজেপি দেয়নি৷ অথচ লক্ষ লক্ষ মানুষ তার গানকে পুঁজি করে বেঁচে আছে৷ তিনি নিজেই একটা ইন্ডাস্ট্রি৷ অথচ কেউ কিশোরকুমারকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবে না৷''

শতবর্ষ থেকে আর মাত্র সাত বছর দূরে দাঁড়িয়ে ভারতীয় সঙ্গীতের রত্ন৷ ভারত সরকার কবে তাঁর নাম বিবেচনা করবেন? এই প্রশ্ন সব সঙ্গীতপ্রেমীরই৷