1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কায়রো শহরে সবুজের ছোঁয়া

১১ জুলাই ২০১৯

সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না – এমন সমাধানসূত্র কে না চায়৷ কায়রো শহরে দরিদ্র এলাকায় ছাদের উপর বাগান বসিয়ে পরিবেশ ও অর্থনীতির উন্নতির চেষ্টা চালাচ্ছে এক এনজিও৷

https://p.dw.com/p/3LswS
Baumwollernte in Ägypten
ছবি: picture alliance/NurPhoto/H. Elsherif

ছাদের উপর চাষবাস

মোহামেদ তাহা প্রতিদিন নিজের বাগানের পরিচর্যা করেন৷ এল বাসাতিন এলাকার মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে তিনি ৩ বছর ধরে ছাদের বারান্দায় নানা ধরনের শাকসবজির চাষ করে চলেছেন৷ তাঁর প্রচেষ্টায় কায়রো শহরের কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যে একফালি সবুজের ছোঁয়া এসেছে৷ মোহামেদ বলেন, ‘‘আমি মূলত এই এলাকা ও ছাদের উপর পরিষ্কার এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই৷ এর বেশি কিছু নয়৷ এতে যা আয় হয়, তা মসজিদের চ্যারিটি ট্রাস্টে চলে যায়৷''

তিনি প্রায়ই নিজের নাতনিকে সঙ্গে আনেন৷ সে কাঁচা পাতাকপি খেতে ভালবাসে৷ মোহামেদকে চাষের সরঞ্জামের দাম মেটাতে হয় নি৷ কায়রো-ভিত্তিক সংগঠন শাদুফ বিনামূল্যে সব বন্দোবস্ত করেছে৷ আট বছর আগে শেরিফ হোসনি ও তাঁর ভাই এই এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন৷ তাঁরা হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ তাতে খুব কম পানির প্রয়োজন হয়৷ মাটিও লাগে না৷ প্রায় যে কোনো ছাদের উপরেই কার্যকর এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়৷ শেরিফ হোসনি বলেন, ‘‘এমন প্রকল্প স্বল্প আয়ের পরিবারের জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী হয়৷ ছাদে বাগান বসিয়ে শাকসবজি বিক্রি করে তাদের আয় কিছুটা বাড়াতে পারে৷ ফলে শুধু পরিবেশগত নয়, সামাজিক ক্ষেত্রেও এই উদ্যোগ সুবিধা বয়ে আনছে৷''

হেলাওয়ানের মতো অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এলাকায় বাড়ির ছাদ প্রায়ই পুরানো আবর্জনায় ভরে থাকে৷ শাদুফ সেখানে ৫০০ বাগান তৈরি করছে৷ সেখানে একটি ভবনের বাসিন্দারা মাস তিনেক আগে তাদের মাইক্রো ফার্ম গড়ে তুলেছেন৷ এবার প্রথম ফসল তোলার সময় এসেছে৷ ওম মোহামেদ এই উদ্যোগের সুফল পাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘খুব সুন্দর৷ সবাই যদি এমনটা করতো! যাদেরই খালি জায়গা রয়েছে, তাদের এমনটা করা উচিত৷ এখানে ছাদ তো কাজেই লাগে না৷''

মিশরের সবুজ ছাদ

উন্নয়ন সাহায্যের সুফল

ছাদের উপর বাগান গড়ে তুলতে প্রায় ৬৩০ ইউরো ব্যয় হয়৷ কিন্তু পরিবারগুলিকে মাত্র ২০ ইউরো দিতে হয়৷ সুইজারল্যান্ডের এক ফাউন্ডেশন ৯৫ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করে৷ শাদুফ উদ্বৃত্ত শাকসবজি কিনে নিয়ে অন্যান্য স্থানীয় এনজিও-র সাহায্যে কায়রো শহরে বিক্রি করে৷

শাদুফের কমিউনিটি ম্যানেজার মোতাসেম মোস্তফা ৮ বছর আগে প্রথমবার ছাদের উপর বাগান গড়ে তোলেন৷ তারপর থেকে প্রায় ২০০টি বাগান তৈরি করে দিয়েছেন তিনি৷ মোতাসেম বলেন, ‘‘৬ই অক্টোবর নামের এলাকার সপ্তম বসতির এই ছাদের উপর আমরা দু'টি পরিবারের সঙ্গে কাজ করছি৷ প্রত্যেক পরিবার একটি করে ইউনিট পাবে৷ সব মিলিয়ে ৪২০টি কাপ, যাতে ৪২০টি গাছ থাকবে৷''

কত ঘনঘন পানি দিতে হবে, কোন গাছ ভালোভাবে বড় হয়, শাদুফ সংগঠনের কর্মীরা সবকিছু ভাল করে বুঝিয়ে বলেন৷ শাদুফের প্রতিনিধি সোহেইলা মোস্তফা বলেন, ‘‘৯ থেকে ১৫ বছর বয়সি মেয়েদের নিয়ে প্রকল্পে আমরা বীজ বপন করেছি৷ যে কোনো বয়সের মানুষ এই হাইড্রোপনিক ব্যবস্থা ব্যবহার শিখতে পারে৷ এই প্রক্রিয়া মোটেই জটিল নয়৷ পরেও অসুবিধা হয় না৷''

বাসিন্দারা সব কাপের গায়ে উইকিং স্ট্রিপ বা ফিতা লাগানোর কাজও শেখেন৷ এগুলি শিকড়ে পানি সরবরাহ করে৷ তারপর বীজ যোগ করা হয়৷ এবার মোলোখিয়া গাছ বেছে নেওয়া হয়েছে৷ মিশরে এই উদ্ভিদের ব্যাপক চাষ হয়৷ এই গাছ থেকে লেটুস পাতা পাওয়া যায়৷ কয়েক মাস পর গাছগুলি বড় হলে পরিবারগুলি মাসে দুবার পাতা তুলতে পারবেন৷ হেলাওয়ান এলাকার বাসিন্দা মোহামেদ তান্তাউই মনে করেন, ‘‘গাছ লাগানো ছাড়াও আমরা ছাদের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছি৷ মানুষ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে বা কাছে এলে সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন৷''

কয়েকটি পরিবারের এমন উৎসাহ বাকিদেরও সেই পথে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে৷ ছাদের উপর বাগান কায়রো শহরকে এখনই কিছুটা অন্তত সবুজ করে তুলতে সাহায্য করছে৷

এল তুনি/মিলকে/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য