কাশ্মীরের কার্পেট শিল্পের অবস্থা
চিত্রগ্রাহক গুলজার বাটের চোখে এই ছবিঘরে দেখুন কেমন আছে কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী কার্পেট শিল্প, যা হারাচ্ছে তার পুরোনো জাঁকজমক৷
ঐতিহ্যের অঙ্গ
কাশ্মীরের হস্তশিল্প চর্চার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে কার্পেট বা গালিচা বানানোর রীতি৷ কোনো মেশিনে নয়, আগাগোড়া হাতেই তৈরি হয় এই কার্পেট৷ এক সময় এই কার্পেট সারা বিশ্বের নজর কাড়লেও, আজ এই শিল্প বিপন্ন৷
ইরান থেকে কাশ্মীরে
পঞ্চদশ শতাব্দীতে কার্পেট তৈরির রীতি কাশ্মীরে এসে পৌঁছোয় ইরান বা পারস্য থেকে৷ জাফরানের মতো আরো অন্যন্যা বহুমূল্য পণ্যও তখন আসে৷ বলা হয়, কাশ্মীরের সুলতান জয়নুল আবেদীন ইরান থেকে কার্পেটের বেশ কয়েকজন নামকরা কারিগর আনিয়েছিলেন এই রীতির প্রচলন করতে৷
পশম ও রেশম
কাশ্মীরী গালিচার বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে ব্যবহৃত পশম ও রেশম৷ মাঝে মাঝে কাশ্মীরী গালিচায় ব্যবহার করা হয় তসর সিল্কও৷ তাছাড়া এই কার্পেট বোনা হয় অসংখ্য গিঁট দিয়ে, যা একেবারেই অভিনব৷
কার্পেট বুনতে যা লাগে
গালিচা বুনতে প্রথমে লাগে চিরুনি, তারপর ক্ষুর ও কাঁচি৷ তাছাড়া যে অংশে সুতো বেঁধে রাখা হয়, তা আসলে দু’টি শক্ত কাঠের বিম৷ কখনো কখনো এই বিমে ধাতুর পাতও লাগানো থাকে বুনন মসৃণ করতে৷
ডিজাইন
চোখ যাতে মূল ডিজাইন থেকে একটুও না সরে যায়, তার জন্য ডিজাইনের ছবি আঁকা কাগজ বুনটের মাঝেই সুতো দিয়ে বেঁধে রাখেন দক্ষ কারিগররা৷ এই কাগজকে স্থানীয়রা বলেন ‘তালিম’৷
জার্মানিতেও বাজার
কাশ্মীরে তৈরি হওয়া এইসব কার্পেটের মূল বাজার জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ৷ কিন্তু গত কয়েক বছরে কাশ্মীরের কার্পেটের বাজারে টান পড়েছে, কারণ, চাহিদা আর আগের মতো নেই৷ অন্যান্য দেশ থেকে আসা গালিচা এই বাজারে ভাগ বসাচ্ছে৷
পরিসংখ্যান
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মধ্যে কাশ্মীরে কার্পেট থেকে লাভ হয় মোট ৮০ কোটি ভারতীয় রুপির৷ এই সংখ্যা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ব্যাপক কমে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ কোটি রুপিতে৷
জীবিকায় প্রভাব
গোটা কাশ্মীরে শুধু শ্রীনগর শহরের আলমগরী ও গুলশানবাগ অঞ্চলেই এখনো টিকে আছেন কার্পেটের কারিগররা৷ বাকিদের অনেকে এই কাজ ছেড়ে অন্য কোনো পেশার দিকে ঝুঁকেছেন৷ এই প্রবণতা আরো বেড়েছে করোনাকালে বাজার স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায়৷
তবুও চলমান শিল্পসৃষ্টি
যে কয়েকজন কারিগর এখনো এই শিল্প থেকে পুরোপুরি সরে আসেননি, তাদের দিন চলছে অভাব-অনটনে৷ বাসা, কারখানা একেবারেই ভঙ্গুর৷ মাস গেলে এই বুনন থেকে তাঁদের আয় হয় দুই থেকে তিন হাজার রুপি, যা পরিবার চালানোর জন্য একেবারেই যথেষ্ট নয়৷ তবুও, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা এই শিল্পের হাত ছাড়েননি তারা৷