কারামুক্তি উদযাপনের অনুষ্ঠানে থাকছেন না ম্যান্ডেলা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ম্যান্ডেলার কারামুক্তি দিবসটি দক্ষিণ আফ্রিকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয় এবং সেই অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিয়ে ভক্ত-অনুসারীদের অনুপ্রাণিত করে থাকেন তিনি৷ কিন্তু দেশটির সরকার জানিয়েছে, এবার দুই দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে থাকছেন না ম্যান্ডেলা৷
দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবাসের পর ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হয়ে ঐতিহাসিক স্বাধীনতার পদযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ম্যান্ডেলা৷ শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাই নয় সেসময়ে তাঁর ওই দৃপ্ত প্রত্যয় কাঁপিয়ে দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে৷ দুই দশক পরও এই সংগ্রামী নেতা স্মরণীয় বিশ্বজুড়ে৷ কিন্তু, ৯১ বছর বয়সি এই প্রবীণ রাজনীতিক এখন নিভৃতে অবসর কাটাতেই ভালবাসেন৷
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) জানিয়েছে, পার্ল শহরের কাছে ভিক্টর ভার্সটার কারাগারে কারামুক্তি দিবসের অনুষ্ঠানে এবার যোগ দিচ্ছেন না ‘মাদিবা'৷ ম্যান্ডেলা দেশের মানুষদের কাছে তাঁর গোত্র-নাম ‘মাদিবা' হিসেবেই পরিচিত৷
এক বিবৃতিতে দলটি জানায়, ‘‘মাদিবা একমাত্র যে কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তা হল ‘স্টেট অফ দ্য নেশন' বক্তৃতা দেওয়া, যা সন্ধ্যায় পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত হবে৷'' বিবৃতিতে আরও জানানো হয় একইদিনে পার্লামেন্ট অধিবেশনের শুরুতে ভাষণ দেবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা৷
তবে, ম্যান্ডেলা না থাকলেও ঐতিহাসিক ওই পদযাত্রাকে স্মরণ করতে আধ কিলোমিটারের একটি প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেবেন তাঁর সাবেক স্ত্রী উইনি মাদিকিজেলা ম্যান্ডেলা৷ কারামুক্তির সময়ে উইনির হাতে হাত ধরেই ম্যান্ডেলা ওই পদযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷
বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৯৪ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ম্যান্ডেলা৷ এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে বর্ণবাদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠার অবসান ঘটে৷ অত্যন্ত বিচক্ষণতা এবং সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে তখনকার ৭১ বছর বয়সি এই নেতা জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষদের প্রাণপুরুষ হিসেবে আবির্ভূত হন৷ কিন্তু ১৯৯৯ সালেই প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ম্যান্ডেলা৷
১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার সহ চারদশক ধরে প্রায় ২৫০টিরও বেশি সম্মাননা ও পদকে ভূষিত হন ম্যান্ডেলা৷ প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও দীর্ঘদিন রাজনীতি ও জনজীবেন সক্রিয় ছিলেন তিনি৷ বারবারই বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি৷ কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে জনজীবনের অন্তরালে চলে যেতে শুরু করেন এই সংগ্রামী নেতা৷ তাঁর শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে খবর প্রকাশিত হতে থাকে৷
তবে, নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, চলাফেরার জন্য একটি হুইল চেয়ার ব্যবহার করলেও ম্যান্ডেলার শারীরিক অবস্থা এখনও বেশ ভাল৷ পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক খবরাখবর এবং হালহকিকত সম্পর্কেও নিয়মিতই খোঁজখবর রাখেন এবং প্রতিদিনই প্রায় চারটি পত্রিকা পড়েন ম্যান্ডেলা৷
প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক