কামিলা শামসি : লন্ডনবাসী পাকিস্তানি লেখিকা
৭ নভেম্বর ২০১০১৯৭৩ সালে সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে জন্ম কামিলা শামসির৷ বড় হয়েছেন করাচি শহরে৷ ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি ও লেখকদের এক কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি৷ এই সময়েই কামিলা লেখেন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ইন দ্য সিটি বাই দ্য সি''৷ ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস ইংল্যান্ডে প্রশংসা পায়৷ পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সাহিত্য পুরস্কার জোটে তাঁর ভাগ্যে৷ তারপর একে একে বেরোয় ‘‘সল্ট অ্যান্ড স্যাফ্রন'', ‘‘কার্টোগ্রাফি'', ‘‘ব্রোকেন ভার্সেস'' এবং সর্বশেষ ‘‘বার্ন্ট শ্যাডোজ''৷ এই উপন্যাসটি জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়ে বেরিয়েছে৷ জার্মান লেখক ও অনুবাদক মার্টিন কেম্পশেন এই গ্রন্থেরই পর্যালোচনা করেছেন দৈনিক ফ্রাংকফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং পত্রিকায়৷ কেম্পশেন লিখছেন:
কামিলা শামসি জার্মানিতে অপরিচিত নন৷ তাঁর তিনখানা উপন্যাস অনূদিত হয়েছে জার্মানে৷ তাঁর লেখার হাত ধরেই পাকিস্তানের সাহিত্যের ওপর দৃষ্টি পড়েছে জার্মান পাঠকদের৷ ইতিমধ্যে মোহাম্মদ হানিফকে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কন্ঠ হিসেবে৷ কিন্তু শামসির নতুন, উচ্চাভিলাষী উপন্যাসটিকে আদৌ কি পাকিস্তানি সাহিত্য বলে চিহ্নিত করা যাবে? লেখিকা থাকেন লন্ডনে৷ পাকিস্তানি পটভূমিকায় তাঁর উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে খুব সামান্য৷ লেখিকা বিশ্বকে বদলে দেয়া চারটি ঘটনাকে টেনে এনেছেন৷ তাঁর চরিত্রগুলোর কর্মকাণ্ড এই ঘটনাগুলিকে কেন্দ্র করেই: ১৯৪৫ সালে নাগাসাকিতে আণবিক বোমা নিক্ষেপ, ১৯৪৭-এর ভারত ভাগ, আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারি আর ২০০১'এ ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হওয়া৷
মার্টিন কেম্পশেন শামসির ‘‘বার্ন্ট শ্যাডোজ'' উপন্যাসের কাহিনীসূত্র তুলে ধরেছেন এভাবে:
জাপানি মেয়ে হিরোকো তানাকা অ্যাটম বোমার ধ্বংসকাণ্ড থেকে বেঁচে যায়, কিন্তু বাঁচেনা তার জার্মান বাকদত্ত৷ তানাকা পাড়ি দেয় দিল্লি শহরে তার বোনের কাছে৷ বোনের ইংরেজ স্বামী৷ ভারতীয় মুসলিম বন্ধু সাজ্জাদের প্রেমে পড়েন তিনি৷ বিয়ে করেন তাকে৷ এবং তার সঙ্গে চলে যান করাচি৷ এক প্রজন্ম পরে তাদেরই ছেলে রেজা পাড়ি দেয় অ্যামেরিকা৷ নিজের শিকড়টা সে কিন্তু ভুলতে পারেনা৷ সিআই'এর হয়ে আফগানিস্তানে সে কাজ নেয়৷ একসময় অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে সে - গ্রেপ্তার হয় টরন্টো শহরে৷
কেম্পশেনর পর্যালোচনায় সমালোচনার সুর পাই আমরা যখন তিনি লেখেন যে, ভিন্ন ভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম আর শ্রেণীর মানুষদের একত্রে গ্রথিত করে তাদের সুনির্দিষ্ট এক মনস্তত্ত্বের আওতায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন শামসি, যাতে উপন্যাসের চরিত্রগুলো অস্পষ্ট পরিচয়ের এক সমুদ্রে ডুবে না যায়৷ কিন্তু সে চেষ্টায় সফল হতে পারেন নি শামসি৷
ভাষান্তর: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ