1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজকাতার

কাতারে সমকামী অধিকার আন্দোলন কী ফল বয়ে আনলো?

২ জানুয়ারি ২০২৩

সমালোচকেরা বলছেন, ফিফা বিশ্বকাপে পশ্চিমা অ্যাক্টিভিস্টদের বিক্ষোভ হয়ত এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বিরূপ প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করেছে।

https://p.dw.com/p/4Ldis
BG Handzeichen
ছবি: Pressebildagentur ULMER/picture alliance

ডিসেম্বরের শুরুর দিকে, মার্কিন ফাস্ট ফুড চেইন রাইজিং কেইনস কুয়েতে রক্ষণশীলদের আক্রমণের মুখে পড়ে। লুইসিয়ানার এই ফ্রাইড-চিকেন প্রতিষ্ঠানের সেখানে ১২টি ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়েছে। এক ব্যক্তি একটি রেস্টুরেন্টের বাইরের চিত্র ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন৷ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে রাইজিং কেইনস এর রেস্টুরেন্টে ‘ওয়ান লাভ' লেখা রয়েছে৷ ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তি অভিযোগ করেন যে সমকামীদের অধিকার সমর্থন করেই রেস্টুরেন্টটি এই লেখা ব্যবহার করেছে৷

সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এই লেখা সম্বলিত লোগোটি ডাচ ফুটবল দলও ব্যবহার করেছিল৷ অন্য অনেক ইউরোপীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সমকামীদের অধিকারের দাবিতে আর্মব্যান্ডও পড়েছিলেন৷

এই ইস্যুটি নিয়ে রক্ষণশীল কুয়েতি রাজনীতিবিদেরা আলোচনাও করেছেন৷ কট্টর ইসলামপন্থি আইনপ্রণেতা মোহাম্মদ আল মুতাইরি এক টুইটে জানিয়েছেন যে পৌর কর্তৃপক্ষ রেস্টুরেন্ট থেকে এই লেখা সরিয়ে নিয়েছে৷ রেস্টুরেন্টটির এক কর্মীও ডয়চে ভেলের কাছে এই লেখা সরিয়ে নেয়ার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন৷

 তবে ১৯৯০ এর দশক থেকেই রাইজিং কেইনস এই লোগো ব্যবহার করছে৷ তাদের মতে ওয়ান লাভ বলতে চিকেন ফ্রাইকেই বোঝানো হয়েছে৷

মধ্যপ্রাচ্যে সমকামীবিরোধী প্রচারণার এটিই একমাত্র উদাহরণ নয়৷ কুয়েতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে সমলিঙ্গ বিয়ের বিরোধিতা করে বিলবোর্ডও টানানো হয়েছিল৷ একটি স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকীয়তে এই বিলবোর্ডকে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রচারণার বিরুদ্ধে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷

ডিসেম্বরে প্রভাবশালী ইরাকী ধর্মগুরু মুকতাদা আল-সদর তার অনুসারীদের ‘সমকামিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও' পিটিশনে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান৷ বার্তাসংস্থা এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সদরের এক অনুসারী বলেন, কাতারে সমকামী অধিকারের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই আহ্বান জানানো হয়নি৷ তার মতে, ‘‘এই প্রতিক্রিয়া কাতারে বিশ্বকাপ খেলতে আসা পশ্চিমাদের প্রচারণার বিরুদ্ধে''৷

পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে?

এমন নানা কারণে অনেকেই মনে করছেন যে কাতারে সমকামী অধিকার নিয়ে আন্দোলন ভালোর চেয়ে বরং খারাপই ডেকে এনেছে৷ সমালোচকেরা বলছেন, সমকামিতা মেনে নেয় না, এমন এক দেখে এই সম্প্রদায়ের লোকজন আড়ালেই থাকতে পছন্দ করেন৷ কিন্তু এই আন্দোলনের ফলে তাদের ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে৷

মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই আইন অনুসারে সমকামিতা অপরাধ বা অনৈতিক এবং এজন্য কারাদণ্ড বা আরো কঠোর দণ্ডের বিধানও রয়েছে৷ জনগণের মনেও সমকামিতাকে অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করার প্রবণতা রয়েছে৷

মধ্যপ্রাচ্যের নয়টি দেশে আরব ব্যারোমিটার এর করা এক জরিপে দেখা গেছে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দেশগুলোতে মাত্র ১২ শতাংশ স্থানীয় সমকামী বিয়েকে মেনে নিতে রাজি৷ ২০১৯ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা জরিপেও কাছাকাছি তথ্য পাওয়া গেছে৷

সেসব দেশের এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই পরিস্থিতি বিষয়ে ওয়াকিবহাল৷ ফলে টিউনিসে যতই সমকামী মধ্যশালা থাকুক, বা দুবাইয়ে যতই প্রাইভেট পার্টি আয়োজন করা হোক না কেন, তারা এ নিয়ে কখনই উচ্চবাচ্য করতে চান না৷

‘পশ্চিমা আন্দোলন গঠনমূলক নয়'

ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এর ফেলো উইল টডম্যানের মতে, ‘‘এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের জন্য পশ্চিমা সহানুভূতির উদ্দেশ্য ভালো হতে পারে, কিন্তু গঠনমূলক নয়৷'' মধ্য ডিসেম্বরে লেখা এক মতামতে তিনি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে তারা (পশ্চিমা অ্যাক্টিভিস্ট) এই সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে সংহতি বোধ তৈরি করতে পারলেও, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তারা যাদের পাশে দাঁড়াতে চায় খোদ তাদেরকেই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে৷''

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদন করা ডাক্তার নাস মোহাম্মদকে প্রকাশ্য়ে নিজেকে সমকামী দাবি করা প্রথম কাতারি হিসাবে বিবেচনা করা হয়৷ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, পশ্চিমা অ্যাক্টিভিস্টরা কাতার ছেড়ে গেলেই সমকামী সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ণ শুরু হতে পারে৷

ইরাকের বসরা শহরে বাস করা তরুণ এলজিবিটিকিউ অ্যাক্টিভিস্ট সাজ্জাদ সাবীহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি পশ্চিমা গণমাধ্যম নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে৷ সমকামীদের অধিকার নিয়ে এত কথা বলার মাধ্যমে স্থানীয় রাজনীতিবিদিদের পুরো বিষয়টিকে ‘এই অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পশ্চিমা এজেন্ডা' হিসাবে প্রচার করার সুযোগ করে দিয়েছে৷''

লেবাননের বৈরুতে বাস করেন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে পুরাতন সমকামী অধিকার সংগঠন হেলেম এর পরিচালক তারেক জাইদেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বকাপের পর আমাদের ভুগতে হবে৷ পুরো অঞ্চল জুড়েই এলজিবিটিকিউ অধিকার নিয়ে কাজ করা কর্মীদের নিরাপত্তা ঘাটতি তৈরি হওয়ায় বড় ভূমিকা রাখবে এটি৷''

ক্যাথরিন শায়ের/এডিকে