কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো বইবাজার, বইপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য
এ এক অন্য বাজার। পুরোনো বইয়ের বাজার। দুর্লভ বই, কোনো নামী বইয়ের প্রথম সংস্করণ, দুর্লভ পত্র-পত্রিকা সবই পাওয়া যায় কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো বইবাজারে।
চারপাশে স্কুল-কলেজ
কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো বইবাজারের চারপাশে রয়েছে একের পর এক প্রখ্যাত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, সংস্কৃত কলেজ, হিন্দু স্কুল ও হেয়ার স্কুল। কলেজ স্ট্রিট জুড়ে থাকা প্রকাশক ও নতুন বইয়ের দোকানের পাশে এখনো স্বমহিমায় আছে পুরোনো বইয়ের দোকানগুলি। উপরের ছবিটি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে পুরোনো বইয়ের দোকানের।
খোলা আকাশের নীচে
কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো বইবাজারে অনেক দোকানই খোলা আকাশের নীচে। এগুলি হলো মূলত ফুটপাথের দোকান। ফুটপাথের উপরেই রাখা থাকে বইগুলি। মূলত বাংলা, ইংরাজি বই। তবে ভারতের অন্য ভাষার বই যে খুঁজলে পাওয়া যাবে না এমন নয়। দোকানগুলি বইপ্রেমীদের কাছে যেন সোনার খনি।
সকালে বইয়ের আগমন
প্রতিদিন সকালে চোখে পড়বে এই দৃশ্য। পুরোনো বইয়ের দোকানের মালিক দড়িতে বেঁধে বই নিয়ে আসছেন ফুটপাথে। তারপর বেশ কিছুটা সময় ধরে চলে বই সাজানোর কাজ। তারপর বিকিকিনির জন্য অপেক্ষা।
প্রেসিডেন্সির পাঁচিলের গায়ে
আগে ছিল প্রেসিডেন্সি কলেজ, এখন তা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। তার পাঁচিলের পাশেই একের পর এক দোকান। এই দোকানগুলি অস্থায়ী হলেও খোলা আকাশের তলায় নয়। লোহা ও টিন দিয়ে তৈরি দোকানঘর।
অমূল্য বই
কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো বইয়ের বাজারে পেয়ে যেতে পারেন অমূল্য সব বই। তবে তার জন্য খোঁজ রাখতে হবে। নিয়মিত ঘুরতে হবে। বইপ্রেমীরা তাই হাতে সময় নিয়ে ঘুরতে থাকেন একটার পর একটা দোকান। অনেক সময়ই জলের দামে তারা পেয়ে যান কোনো বিখ্যাত বইয়ের প্রথম সংস্করণ, প্রখ্যাত লেখকের সই করা বই অথবা নতুন বইয়ের দোকানে পাওয়া যায় না এমন কিছু দুষ্প্রাপ্য বই।
বইয়ের উৎস
পুরোনো বইবাজারে বই আসে নানান জায়গা থেকে। অনেকে বাড়িতে থাকা বই বিক্রি করে দেন। অনেক বনেদি পুরনো বাড়ি থেকে বইয়ের সম্ভার বিক্রি করে দেয়া হয়। সেগুলি চলে আসে এই বাজারে। অনেক সময় কোনো লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে গেলে তার বই আসে এখানে। অনেকে অভাবের জন্য এখানে বই বিক্রি করেন। জহুরি যেমন হীরে চেনে, তেমনই দোকানীরা ভালো বই চিনে ফেলেন।
দুষ্প্রাপ্য পত্র-পত্রিকা
এখানেই পাওয়া যায় প্রবাসী, ভারতবর্ষ, শনিবারের চিঠি, মডার্ন রিভিউয়ের মতো পুরোনো দুষ্পাপ্য পত্রিকার সংখ্যাগুলি। তবে তার জন্যে অপেক্ষায় থাকতে হয়।
পড়ার বই
স্কুল ও কলেজের পড়ার বইও পাওয়া যায় এই পুরোনো বইবাজারে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীই এখান থেকে বই কিনে নেন।
কারা পুরোনো বই কেনেন
যারা বই পড়তে ভালোবাসেন, তারা কেনেন। যাদের গবেষণার কাজে বই লাগে, তারা কেনেন। আর কেনেন সংগ্রাহকরা। তারা দুষ্প্রাপ্য বই সংগ্রহ করেন। অনেকে প্রিয় গল্প-উপন্যাস বা প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করে রাখেন।
সারা বছর খোলা
দিল্লিতে সপ্তাহে একদিন বসে পুরোনো বইয়ের বাজার। কিন্তু কলেজ স্ট্রিটে প্রায় প্রতিদিন খোলা থাকে এই পুরোনো বইবাজার। রোববারও অল্প কিছু দোকানদার বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। সোম থেকে শনি তো পুরোদমে চলে পুরোনো বইয়ের কেনাবেচা।
সবচেয়ে বড়
কলকাতার এই পুরোনো বইবাজার হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরোনো বইয়ের বাজার। সময় বদলেছে। এখন ডিজিটাল যুগে ফোনেই বই পড়ে ফেলা যায়। বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণ বের হচ্ছে। অল্প পয়সায় তা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে পুরোনো বইয়ের বিক্রি কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো বইবাজারের আকর্ষণ শেষ হয়ে যায়নি।