কলকাতা বন্দরের বেহাল দশা
১৪ ডিসেম্বর ২০১০কলকাতা বন্দরের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি৷ যে মোহনা থেকে বন্দরে আসার পথে দুটো জাহাজ এমন প্রবলভাবে পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে অচল হয়ে পড়ল৷ সৌভাগ্যবশত দুটিই মালবাহী জাহাজ হওয়ায় কোনও বড় বিপত্তি হয়নি, নাবিক-কর্মীদের মধ্যেও কেউ হতাহত হননি৷ তবে এই দুর্ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে কলকাতা বন্দর এ ধরণের জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলায় কতটা অপ্রস্তুত৷ দুর্ঘটনার দু সপ্তাহ পরেও ধাক্কা খাওয়া জাহাজটিকে সরানোর কোনও ব্যবস্থা করা গেল না৷
কলকাতা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ নাবিকরা কিন্তু বলছেন, প্রাকৃতিক কারণেই কলকাতা বন্দর তার সূচনাপর্ব থেকেই মার খাচ্ছে৷ নৌচালনার কাজে ৩৩ বছর রয়েছেন মাস্টার মেরিনার অ্যালি ডাগমান৷ তিনি জানালেন, কলকাতা বন্দর যেদিন থেকে চালু হয়েছে, তখন থেকেই বেশ কিছু প্রতিকূলতার সঙ্গে তাদের লড়ে যেতে হচ্ছে৷ মোহনা থেকে বন্দর পর্যন্ত প্রায় ১২৫ কিলোমিটারের যে নদীপথ, তার সংকীর্ণতা এবং গভীরতার অভাব সবসময়ই সমস্যা হয়ে থেকেছে৷
অভিজ্ঞ নাবিক ডাগমানের যুক্তি, এঁকেবেঁকে বয়ে চলা হুগলি নদীর বুকে অত্যধিক পলি জমতে থাকার কারণেই কলকাতা বন্দরের এই বেহাল দশা৷ কিন্তু নদীর দুর্বোধ্য মতিগতি বোঝার কোনও চেষ্টাই যে এত বছরে হয়নি, সেটাও বোঝা গেল ডাগমানের কথায়৷ কারণ তিনি জানালেন, একে তো নাব্যতার অভাব, তার ওপর ওই জলপথের একেক জায়গায় একেক রকমের স্রোত, যা নাবিকরা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি৷ জাহাজের চালকদের জন্য এখনও স্থানীয় মাঝি-মাল্লাদের ব্যবহারিক জ্ঞানই ভরসা৷
কাজেই এই অভূতপূর্ব ঘটনার ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি কলকাতা বন্দর৷ বরং সংকটের চেহারাটা আরও স্পষ্ট হয়েছে যে অতি সাধারণ কোনও দুর্ঘটনাও অচল করে দিতে পারে এই বন্দরকে৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক