বিশ্বের ২৭টি শহরকে সাহিত্যের শহর হিসেবে বেছে নিয়েছে ইউনেস্কো৷কলকাতা শহরটি কোটি কোটি মানুষের ভাষা বাংলায় সাহিত্যচর্চার পীঠস্থান৷ অথচ স্থান হয়নি ইউনেস্কো তালিকায়৷ তবে এ সম্পর্কে বাংলাদেশের পাঠক কামরুল হাসান লিখেছেন, ‘‘কলকাতা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই, তবে যদি পুরস্কার অর্জনের জন্য হয়, তবে ঢাকা শহর সহজেই সেই শহরকে পরাজিত করতে পারে৷''
অন্যদিকে পাঠক দিন হায়দারের অবশ্য কিছুটা ভিন্নমত৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘একজন বাংলাদেশি হিসেবে যদি বলতে হয়, তবে বলবো কলকাতা যদিও এখন ভারতে, কিন্তু বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতির বিকাশ সেখানেই হয়েছিল৷ এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন, যাঁরা ন্যুনতম বই পড়ুয়া বা বাংলা সাহিত্য পড়েছেন, অথচ দে'জ, আনন্দ পাবলিশার্সের প্রকাশিত বই পড়েননি৷ বিশ্ব-বরেণ্যে লেখকদের কথা বাদই দিলাম৷ সবদিক বিবেচনায় কলকাতাকে অবশ্যই প্রথম সারিতে রাখা উচিত৷ বাংলা সাহিত্যের উত্থান থেকে শুরু করে কালজয়ী লেখাগুলো কলকাতা থেকেই প্রকাশিত হতো৷ কি বাংলাদেশ, কি ভারত এটা দুদেশের বাঙালির জাতি সত্ত্বার সাথে মিশে আছে৷ তা স্বীকার করতে হবে৷''সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
-
বইয়ের কলেজ স্ট্রিট
বইপাড়া
কলেজ স্ট্রিটকে বলা যেতে পারে শিক্ষাসংস্কৃতির সূতিকাগার৷ বাংলা ভাষায় বই প্রকাশের প্রধানতম কেন্দ্র এটিই৷ বই কেনাবেচারও৷ প্রতিদিন নতুন নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে, প্রকাশনার খুঁটিনাটির পরিকল্পনা হচ্ছে এখানে বসেই৷ অল্প দূরেই ছাপাখানা, কাগজের পসরা, সবই কলেজ স্ট্রিটকে ঘিরে৷ স্কুলকলেজের পাঠ্যবইয়ের কেজো দুনিয়াদারি যেমন এখানে, পাশাপাশি রচিত হচ্ছে সাহিত্যের উজ্জ্বল মণিমুক্তোও৷
-
বইয়ের কলেজ স্ট্রিট
হারানো বই
হঠাৎ কোনো হারিয়ে-যাওয়া ফুরিয়ে-যাওয়া বইয়ের খোঁজ মিলে যাবে এখানে৷ কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথে বা প্রেসিডেন্সির রেলিঙে৷ গুপ্তধন পাওয়ার উল্লাসের সঙ্গে মিশে যাবে স্মৃতির বিলাস বা বেদনা৷
-
বইয়ের কলেজ স্ট্রিট
এবং দে’জ
চল্লিশের দশকে দে বুক স্টল নামে ছোট বইয়ের দোকান হিসেবে পথ চলা শুরু৷ ১৯৭০ সালে শুরু হয় তাদের প্রকাশনাসংস্থা দে’জ পাবলিশার্স৷ প্রায় পঞ্চাশ বছর কাটিয়ে এখন তাদের প্রকাশনা দপ্তর ও বইয়ের দোকান বিশাল আকার নিয়েছে৷ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কত হিসেব করা কঠিন৷ এখন তারা পশ্চিমবঙ্গের অগ্রনী প্রকাশক৷
-
বইয়ের কলেজ স্ট্রিট
চক্রবর্তী, চ্যাটার্জি অ্যান্ড কোম্পানি
১০৮ বছর আগে প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের তিন ছাত্র ‘চক্রবর্তী, চ্যাটার্জি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন৷ কলেজ স্ট্রিটের ওপরে দু’টি তলা নিয়ে দোকানটি অবস্থিত৷ নীচের তলায় পাঠ্যপুস্তক ও ওপরের তলায় বাকি নানা ধরনের বই৷ বর্তমান মালিকেরা ১৯৭১-এ অধিকাংশ শেয়ার কিনে এর মালিকানা পান৷ ১৯৭৩ থেকে তাঁরা নিয়মিত নানা ধরনের বই প্রকাশ করে আসছে৷
-
বইয়ের কলেজ স্ট্রিট
বেঙ্গল পাবলিশার্স
বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত সাহিত্যিক মনোজ বসু৷ তাঁর রচিত অনেক বইই প্রকাশিত হয়েছিল এই প্রকাশনী থেকে, তার মধ্যে আছে ‘নিশিকুটুম্ব’৷ এ ছাড়াও বাংলা সাহিত্যের অনেক বিখ্যাত লেখকের ও নানা ধরনের বই এঁরা প্রকাশ করেছেন, যেমন ‘সুন্দরবন অমনিবাস’, ‘জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ’৷ ইদানীং তাঁদের প্রকাশনায় ভাটার টান, গত দু’বছর ধরে তাঁরা নতুন বই প্রকাশ করছেন না, বইমেলাতেও থাকছেন না৷
-
বইয়ের কলেজ স্ট্রিট
কফিহাউস
বইপাড়ার ঠিক মাঝখানে কফিহাউস৷ তাকে বলা যাবে না নিছক রেস্তোরাঁ, যদিও খাবার পাওয়া যায়৷ মূলত কফিতে চুমুক দিয়েই চলে এখানকার আড্ডা গল্প আর তা থেকে ছলকে ওঠে সাহিত্যশিল্পের দ্যুতি৷ কে না এসেছেন এখানে! শঙ্খ ঘোষ থেকে শুরু করে কৃত্তিবাসের কান্ডারীরা, নকশাল আন্দোলনের ছোটোবড়ো কর্মীরা, লিটল ম্যাগাজিনের স্বপ্নপাগল ছেলেমেয়েরা৷ এসেছেন, এখনও আসেন। কফিহাউস শিল্পসাহিত্য ভাবাই যায় না!
-
বইয়ের কলেজ স্ট্রিট
বই পাঠানোর ধুম
বই পাঠকের কাছে পৌঁছনোর আগে থাকে লম্বা এক প্রস্তুতিপর্ব, তারই শেষ পর্যায়ে থাকে থাকে বইয়ের প্যাক ছাপা বাঁধাইয়ের পালা শেষ করে রওনা দেয় প্রকাশকের গখরে বা বইয়ের দোকানে৷ টেম্পো ট্রাক ভ্যান বা রিক্সা, কত রকম যে বাহন তার!
লেখক: ত্বিষা (কলকাতা)
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী