করোনায় নেই খদ্দের, যৌনকর্মীদের করুণ দশা
করোনা আতঙ্ক আর লকডাউনের কারণে যৌনপল্লীতে খদ্দের একেবারেই কমে গেছে৷ ফলে বিপাকে পড়েছেন যৌনকর্মীরা৷ বাংলাদেশের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছেন ডয়চে ভেলের এক আলোকচিত্রী৷
সেই ভিড় আর নেই
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রধান ফটকের ছবি এটি৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই গণিকালয়ে আগে ভিড় লেগেই থাকতো৷ কিন্তু করোনা এবং লকডাউনের কারণে সেখানে মানুষের আনাগোনা একেবারে কমে গেছে৷
তবুও অপেক্ষা
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে কমপক্ষে ১,৩০০ যৌনকর্মী রয়েছেন৷ করোনা এবং লকডাউনে সেখানে খদ্দের অনেক কমে গেলেও কয়েকজনকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে৷
নাচের ঘর জনশূন্য
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর এই ঘরে নিয়মিত নাচ, গান হতো৷ কিন্তু এখন সে ঘর পুরোপুরি বন্ধ৷
আয় নেই, সংকটে যৌনকর্মীরা
লতা (ছদ্মনাম) নামের এক যৌনকর্মী জানান, করোনা এবং লকডাউনের আগে তিনি দিনে দুই-তিনহাজার টাকার মতো আয় করতেন৷ বর্তমানে দিনে গড়ে পাঁচশ’ টাকাও তোলা সম্ভব হয় না৷ মাঝে মাঝে কোনোা আয় হয়না এমন দিনও দেখতে হচ্ছে যৌনকর্মীদের৷
সরকার ‘সহায়তা করে না’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক যৌনকর্মীর বিছানা এটি৷ তিনি জানান, করোনায় খদ্দের কমে গেলেও যা বাকি ছিল তা-ও এখন নেই লকডাউনের কারণে৷ এই অবস্থায় জীবনধারনের জন্য সরকারি সহায়তার অপেক্ষায় আছেন তিনি৷ বয়সে তরুণ এই যৌনকর্মী বলেন, ‘‘আমাদের খাওয়ার কিছু নেই৷ সরকার সহায়তা করছে না৷’’
সক্রিয় প্রতিনিধিরা
কয়েকজন যৌনকর্মী অবশ্য জানিয়েছেন, তাদের নেত্রীরা নানাস্থান থেকে খাবার সংগ্রহ করে আনছেন আর তা দিয়েই দিন পার করতে হচ্ছে যৌনকর্মীদের৷
বন্ধ অনেক ঘর
যৌনপল্লী ঘুরে দেখা গেল অনেক ঘর এখন বন্ধ রয়েছে৷ সেখানকার বাসিন্দারা জানান, অনেক যৌনকর্মী পরিবারের কাছে পরিচয় গোপন রাখেন৷ তাদের কেউ কেউ নিজেদের পোশাক কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন৷ এখন লকডাউনের কারণে তাই ঘরে ফিরে গেছেন অনেকে৷ কেউ কেউ অন্যত্র গিয়ে আটকে আছেন৷
টিকা নেয়া, না নেয়া
করোনা ভাইরাসের টিকা নেয়া নিয়ে যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে৷ অনেকের টিকার প্রতি আস্থা নেই বলে জানিয়েছেন সেখানকার একজন জনপ্রতিনিধি৷ তবে টিকা নেয়ার পক্ষেও রয়েছেন কেউ কেউ৷ তাদের একজন মীনা জানিয়েছেন, গণটিকা দেয়া শুরু হলে হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেবেন তিনি৷ আগে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করা মীনা বর্তমানে একটি দোকান চালান৷
যৌনকর্মীরা ‘খাওয়ার কষ্টে’ আছেন
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল তাইয়ীব যৌনকর্মীদের খাদ্য সংকটের কথা স্বীকার করেছেন৷ তাদের করোনা টিকা নিতে আরো আগ্রহী হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন তিনি৷
লকডাউন উঠে গেলে বদলাতে পারে পরিস্থিতি
যৌনপল্লীর এক নারী আশা করছেন, করোনা লকডাউন উঠে গেলে খদ্দের আবারো আসতে শুরু করতে পারে৷ বর্তমানে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যৌনপল্লীতে ভিড় একেবারে কমে গেছে বলে মত তার৷