1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার কোপে নির্বাচনও!

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৫ এপ্রিল ২০২১

ভোট শেষের আগেই আসরে নেমেছে করোনা। পশ্চিমবঙ্গে সব রাজনৈতিক দলকে এবার করোনার বাড়বাড়ন্ত ভাবাচ্ছে। রাতারাতি বদলে যাচ্ছে ভোটমুখী বাংলার ছবি।

https://p.dw.com/p/3s4OF
Indien, Kalkutta | Parlamentswahlen
ছবি: IANS

এখনও কয়েক দফা ভোট বাকি। তার মধ্যেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। ইতিমধ্যে একাধিক প্রার্থী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোলাম রাব্বানি, জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপকুমার বর্মা, করিমপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ সহ আরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। তবে ভোটের আগে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হকের মৃত্যুর জেরে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেল। নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন সহ রাজনৈতিক দলগুলি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির কর্মসূচি করোনার মাত্রাছাড়া বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। করোনাবিধি না মেনে একের পর এক মিটিং, মিছিল, জনসমাবেশ আদতে করোনাকে বাড়তে সাহায্য করেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক ডাক্তার কৌশিক চাকী বলেন, "রোগীর সংখ্যা যতটা বেড়েছে, সেই অনুযায়ী টেস্টের সংখ্যা বাড়েনি। কাজেই আসল করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটা কতটা আমরা জানি না। আমরা অনেক আগে থেকেই নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে চিঠি দিয়ে করোনা নিয়ে সচেতন হতে বলেছি। কিন্তু দলগুলির কর্মীদের মধ্যে করোনাবিধি মানা হয়নি।” 

ডা. ফুয়াদ হালিম

 

বামপন্থীদের উদ্যোগ

অতিমারির মধ্যে সচেতনতার বার্তা সিপিএমের। বাকি কয়েক দফা ভোটে বড় জমায়েত করবেন না তারা জানিয়েছে! প্রচারের জন্য ছোট পথসভা, সামাজিক মাধ্যমকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে জনসংযোগের জন্য গুটিকয়েক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করা হতে পারে। বালিগঞ্জের সংযুক্ত মোর্চার তরফে সিপিএম প্রার্থী ডাক্তার ফুয়াদ হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "কোভিড নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য উদাসীন। আর নির্বাচন মানুষের প্রাণের উপরে হতে পারে না। ফলে জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত দুই শাসকদলের মধ্যেও প্রতিফলিত হওয়া উচিত।” গত বছরের মতো এবারেও তারা মানুষের জন্য রাস্তায় নেমে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।

কোভিডবিধি পালনে ভরসা

করোনা নিয়ে কেউ সচেতন, তো কেউ নন। করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে মাত্র চারজনকে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন কাশীপুর-বেলগাছিয়ার তৃণমূল প্র্রার্থী অতীন ঘোষ। তৃণমূল সাংসদ অভিনেতা দেব প্রচারের মঞ্চে মাস্ক পরার বার্তা ছড়িয়েছেন। এমন ছবির পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত প্রার্থীর প্রচারে ব্যস্ত থাকার অভিযোগও উঠেছে। বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত করোনা পজিটিভ থেকেও রাজনৈতিক প্রচারে ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পরিস্থিতি বাড়াবাড়ি হতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠিও লিখেছেন। নির্বাচন কমিশন যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রেখেছেন কসবার বিজেপি প্রার্থী ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইন্দ্রনীল খাঁ। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট কিছু গাইডলাইন জারি করে দেওয়া উচিত। প্রত্যেক দলেরই আলাদা প্রচার কৌশল আছে। তবে সব দলেরই উচিত বৈঠকে কমিশনের দেওয়া নির্দিষ্ট কিছু কোভিডবিধি পালন করা।” ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে শুক্রবার। আলোচনা হবে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে।

ডা. ইন্দ্রনীল খাঁ

তৃণমূলের সমাবেশ বাতিল

ভবানীপুরে ২২ এপ্রিল তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে একটি মিছিল হওয়ার কথা ছিল। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতির কথাও ছিল। কিন্তু করোনার জেরে তা বাতিল করা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা উলুবেড়িয়া উত্তরের তৃণমূল প্র্রার্থী ডাক্তার নির্মল মাজি অবশ্য নিজেদের কোভিডবিধিতেই ভরসা রেখেছেন। নির্মল ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে করোনা যোদ্ধা হিসেবে সম্মান পেয়েছেন।

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমি ভোটের মধ্যে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিলি করেছি। নিজেও মাস্ক পরেছি। অন্য দল ধর্মকে গুরুত্ব দিচ্ছে। করোনাকে নয়।আমরাই পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বেশি বিধি পালন করেছি। সেই জন্যই এখানে আক্রান্তের সংখ্যাও কম ছিল। আবার সিপিএম আর বিজেপি বাইরে থেকে লোক আমদানি করে করোনা বাড়িয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এলে করোনাকে খতম করে দেব।”   

এরই মধ্যে করোনা মোকাবিলায় হস্তক্ষেপ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। মাস্ক না পরে জমায়েত বা মিছিল হলে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শেষ তিন দফার ভোটগ্রহণ একইদিনে করানোর কথা ভাবছে কমিশন। সেই ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন ডাক্তার কৌশিক চাকী। তিনি বলেন, "জনসমাবেশের পাশাপাশি নির্বাচনে পুলিশ বা নিরাপত্তারক্ষীদের মতো প্রথম সারির করোনা যোদ্ধারাও থাকেন। তাদের কথাও মাথায় রাখতে হবে। তাই দ্রুত ভোট শেষ হলেই ভাল।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য