করোনার কারণে বেঁচে যাচ্ছে তিমি
করোনা সংকটের জের ধরে জাপানে তিমির মাংস বিক্রি কমে গেছে৷ ফলে তিমি শিকার আর লাভজনক হচ্ছে না৷ আইসল্যান্ডের দুটি কোম্পানির মধ্যে একটি তিমি শিকার পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
প্রাণী সংরক্ষণের তাগিদ নয়, আসল কারণ লোকসান
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে উপকূল থেকে বহু দূরে গিয়ে তিমি শিকার করতে হয়৷ তার উপর করোনা সংকটের কারণে তিমির মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷ আইসল্যান্ড তিমি শিকারের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ চালু করার পর জাপান নিজস্ব তিমি শিকারিদের ভরতুকি দিয়ে বাজার বিদেশিদের প্রবেশ কঠিন করে তুলেছে৷
লুপ্তপ্রায় প্রাণী
বেশ কয়েক বছরের বিরতির পর আইসল্যান্ড ২০০৩ সালে ‘বৈজ্ঞানিক স্বার্থ’ দেখিয়ে আবার তিমি শিকার শুরু করে৷ ২০০৬ সালে বাণিজ্যিক কারণে তিমি শিকারও আবার চালু হয়৷ আইসল্যান্ডের উপকূলে মূলত ‘মিনকি’ এবং লুপ্তপ্রায় ‘ফিন’ প্রজাতির তিমি দেখা যায়৷ ২০১৮ সালে আইসল্যান্ডের উপকূলে ১৪৬টি ফিন হোয়েল ও ৬টি মিনকি হোয়েল শিকার করে হত্যা করা হয়৷
নিঃসঙ্গ প্রাণী
ফিন হোয়েল আসলে নীল তিমির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়৷ সব মহাসাগরেই এই প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়৷ ফিন হোয়েল বেশিরভাগ সময়ে একা থাকে৷ কখনো তাদের ছোট গোষ্ঠীর মধ্যেও দেখা যায়৷ বংশবৃদ্ধি ও সন্তানের জন্ম দেবার সময়ে শীতকালে ফিন হোয়েল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার কাছাকাছি চলে যায় এবং গ্রীষ্মে আবার আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের শীতল পানিতে ফিরে আসে৷
গভীর সমুদ্রের প্রাণী
বেশিরভাগ তিমির তুলনায় ফিন হোয়েল আরও দ্রুত সাঁতার কাটে এবং সমুদ্রের আরও গভীরে প্রবেশ করতে পারে৷ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার গতিবেগ এবং ২০০ মিটারেরও বেশি গভীরে ডুব দেবার ক্ষমতা রয়েছে এই প্রজাতির৷ পানির নীচে প্রায় ১৫ মিনিট থাকতে পারে এই স্তন্যপায়ী প্রাণী৷ দিনে প্রায় দুই টন খোরাক লাগে৷ ফিন হোয়েল ৩০ মিটার দীর্ঘ ও ৭০ টন ভারি হতে পারে৷
গবেষণা শুধুই অজুহাত?
একমাত্র আইসল্যান্ড, নরওয়ে এবং ২০১৮ থাকে জাপানে বাণিজ্যিক স্বার্থে তিমি শিকার হয়ে থাকে৷ ৩০ বছর ধরে জাপান সরকারিভাবে শুধু গবেষণার স্বার্থে তিমি শিকার করে এসেছে৷ আন্তর্জাতিক তিমি ধরা কমিশনের বিশেষ অনুমতি পেয়ে জাপান সেই তিমির মাংস খাবার হিসেবেও বিক্রি করে এসেছে৷ বর্তমানে সে দেশে ৩৮৩টি তিমি শিকার করার অনুমতি রয়েছে৷
বিলাসবহুল দামি খাদ্য
তিমি শিকার আবার শুরু করায় দামি এই মাংসের চাহিদাও আবার বেড়ে গেছে৷ তরুণ প্রজন্মের জাপানিদের মধ্যে অবশ্য তিমির মাংস নিয়ে আগ্রহ নেই৷ মাংসের ভালো অংশগুলি সাশিমি হিসেবে কাঁচাই খাওয়া হয়৷ এক কিলোর দাম প্রায় ৩০০ ইউরো ছুঁতে পারে৷
শক্তিশালী লবি
জাপান বার বার তিমি শিকারের প্রাচীন ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে এই কাজ চালিয়ে যেতে চায়৷ তবে বর্তমানে একটিমাত্র কোম্পানি উপকূল থেকে দূরে তিমি শিকারে অংশ নেয়৷ টোকিও শহরের কিয়োদো সেনপাকু কোম্পানি তিমি শিকার করে বছরে প্রায় এক কোটি আটাশ লাখ ইউরো আয় করে৷
সহজেই ধরা যায়
মিনকি হোয়েল প্রায় দশ মিটার দীর্ঘ হতে পারে৷ অ্যাটলান্টিক ও প্রশান্তমহাসাগরের উত্তরে এই প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়৷ ছোট আকার ও মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে এই প্রাণী শিকার করা সহজ৷ অন্য প্রজাতির তুলনায় বেশি কৌতূহল দেখিয়ে মিনকি হোয়েল জাহাজের কাছে চলে আসে৷ গোটা বিশ্বে এই প্রজাতির সংখ্যা আনুমানিক তিন লাখ৷ সে কারণে এখনো লুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পায় নি এই প্রাণী৷
বাঁচার আনন্দে ভরপুর
মিনকি হোয়েল দ্রুত সাঁতার কাটে, পানি থেকে শূন্যে ঝাঁপ দেয় এবং কমপক্ষে ১৫ মিনিট পানির নীচে থাকতে পারে৷ ছোট ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে এই প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়৷ নর ও মাদি প্রাণী বয়স অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়৷ নর মিনকি হোয়েল আরও বেশি উত্তরে গভীর সমুদ্রে থাকতে পছন্দ করে৷ অন্যদিকে মাদি তিমি দক্ষিণ দিকে উপকূলের কাছাকাছি থাকে৷
বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শিকারের ফলে তিমির সংখ্যা নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে৷ অনেক প্রজাতি অতীত বা বর্তমানে লুপ্তপ্রায় হয়ে গেছে৷ পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও সংবেদনশীল এই স্তন্যপায়ী প্রাণী সমস্যার মুখে পড়ছে৷ জাপানে তিমির মাংস নিয়ে যাবার পথে একটি জাহাজ থামানোর চেষ্টা করছেন বিক্ষোভকারীরা৷