করোনাকালে বাল্য বিবাহ : প্রেক্ষাপট কুড়িগ্রাম ও বিশ্ব
২০২০ সালে ইউনিসেফ-এর একটি গবেষণা জানায়, করোনাকালে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিবাহ অনেক দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে৷ বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলা তার খুব বড় প্রমান৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ডেটলাইন কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে এখন মাত্র একজন ছাত্রী৷ তার বাকি আট সহপাঠিনী এখন বিবাহিত৷ করোনাকালে দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ ছিল৷ ওই সময় তাদের বিয়ে দেয়া হয় বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷
শঙ্কিত নার্গিস
নার্গিস নাহার জানান, তার সহপাঠিনীদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তার মনেও কাজ করছে এক ধরনের ভয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার শেষ পরিণতি কী হবে তা-ও অজানা৷ আমি আমার বাবা-মাকে অনুরোধ করেছি, আমাকে যেন হঠাৎ করে বিয়ে না দেয়৷ আমি পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি করে নিজের অবস্থা তৈরি করেই বিয়ে করবো৷’’
মেয়ের পাশে বাবা
নার্গিসের বাবা মো. আব্দুল খালেক অবশ্য অন্যদের মতো নিজের মেয়েকে এখনই বিয়ে দিতে চান না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার তিন মেয়ে৷ এর মধ্যে এইচএসসি পাশ করিয়ে বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি৷ ছোট মেয়েটার ইচ্ছে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়বে৷ এটা ও ওর মায়ের কাছে বলেছে৷ আমিও বলেছি, দুই মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে, নার্গিস ছোট৷ ডিগ্রি পাশ করার আগে ওকে বিয়ে দেবো না৷’’
সে এলাকায় বেশি বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ...
ওই এলাকায় এত বাল্যবিয়ের কারণ সম্পর্কে নার্গিসের বাবার বক্তব্য, ‘‘এটা নদী ভাঙন এলাকা৷ অধিকাংশ মানুষের বাড়িঘর ধরলা নদীতে ভেঙে গেছে৷ ফলে তারা নিজেরাই খেতে পারে না, মেয়েকে পড়াকে কীভাবে৷ এই কারণে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলে ঝামেলা মুক্ত হলো বলে তারা মনে করেন৷’’
স্কুল কর্তৃপক্ষের অস্বীকার
ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে রিপোর্ট করেছেন আব্দুল খালেক ফারুক৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আজও আমি এই এলাকায় রয়েছি৷ যাদের বিয়ে হয়েছে, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলেছি৷ পরিবার তো স্বীকার করবে না৷ কিন্তু প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে আমি নিশ্চিত হয়েই রিপোর্ট করেছি৷ বাল্যবিয়ের এই ঘটনায় রিপোর্ট ছাপা হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ চাপে পড়ে এখন অস্বীকার করার চেষ্টা করছে৷''
বিশ্বজুড়ে এই বাস্তবতা
আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানাচ্ছে, করোনা মহামারির সময় স্কুল বন্ধ, মা-বাবারা চাকরি হারাচ্ছেন, লকডাউনে বাড়ছে সহিংসতা আর ধর্ষণ৷ এসব কারণে কন্যার নিরাপত্তার কথা ভেবেও অনেক দেশে মা-বাবারা তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন৷ ২০২৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে আরো ২৫ লাখ মেয়ে বাল্য বিবাহের শিকার হতে পারে আশঙ্কা তাদের৷
যেসব দেশ বেশি ঝুঁকিতে
সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, আগের তুলনায় এখন অন্তত দশ লাখ বেশি কিশোরী গর্ভবতী হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে৷ মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা ও ল্যাটিন অ্যামেরিকায়৷ আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি৷