ওয়ালফিন থেকে লাইগার – সংকর প্রজাতির কিছু দৃষ্টান্ত
সুকুমার রায়ের কবিতায় ‘হাঁসজারু’ বা ‘বকচ্ছপ’-এর মতো কাল্পনিক সংকর প্রাণীর সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে৷ কিন্তু বাস্তবেও মিশ্র প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা কম নয়৷ এদের কয়েকটির সঙ্গে আলাপ করা যাক৷
‘পিজলি’ ভালুক
উত্তরমেরুর পোলার বেয়ার এবং গ্রিজলি বেয়ার – এই দুই ভালুকের মিলনের ফল ‘পিজলি বেয়ার’৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই দুই প্রাণীর সাক্ষাৎ সম্ভব হয়েছে৷ তারা নিজেরাও বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম৷ সম্প্রতি গবেষক ও শিকারিরা এই মিশ্র প্রজাতির বেশ কয়েকটি নমুনা চোখে দেখেছেন৷
খচ্চর
সংকর প্রজাতির সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ সম্ভবত খচ্চর৷ ছেলে গাধা আর মেয়ে ঘোড়ার মিলনের ফলে সৃষ্টি হয় ‘মিউল’৷ উলটোটা হলে ইংরেজিতে বলা হয় ‘হিনি’৷ বাংলায় দুই ক্ষেত্রেই তার নাম খচ্চর৷ মাল বইতে তারা ওস্তাদ৷ তবে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা নেই এই মিশ্র প্রজাতির৷
জেব্রয়েড
জেবরা ও গাধার মিশ্রণে সৃষ্ট প্রাণীকে কি বাংলায় ‘জেবধা’ বা ‘গাধরা’ বলা চলে? ইংরেজিতে এর নাম জেব্রয়েড৷ ২০১৩ সালে ইটালির ফ্লোরেন্স শহরের চিড়িয়াখানায় ছবির এই প্রাণীটির জন্ম হয়৷ ইথিওপিয়ায় প্রকৃতির কোলেও এদের দেখা যায়৷
পুকুরের ব্যাং
জার্মানিতে পুকুরের ব্যাং যে আসলে সংকর প্রজাতির প্রাণী, তা অনেকেই জানে না৷ মার্শ ফ্রগ ও ছোট ‘ওয়াটার ফ্রগ’ প্রজাতির সংমিশ্রণে এদের সৃষ্টি৷ তাদের ডাকের মধ্যেও দুই প্রজাতির ছাপ শোনা যায়৷ জার্মানির বিভিন্ন বাগানে এদের বংশবৃদ্ধি ঘটে৷
ওয়ালফিন
হোয়েল + ডলফিন = ওয়ালফিন৷ অর্থাৎ উল্ফ বা নেকড়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ তিমি ও শুশুকের মিলনে সৃষ্ট ছবির এই প্রাণীটির জন্ম হাওয়াই দ্বীপে সি লাইফ পার্কে৷ নাম কেকাইমালু৷
ক্যামা
ক্যামেল + লামা = ক্যামা৷ গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষে দুবাই শহরে বিশ্বের প্রথম ক্যামার জন্ম হয়, তবে কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ায়৷ তারপর তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ উদ্দেশ্য ছিল এমন প্রজাতি সৃষ্টি করা, যা লামার তুলনায় বেশি উল বা পশম উৎপাদন করে এবং উটের মতো বড় ও শক্তিশালী হয়৷
ভেড়া-ছাগল
ভেড়া ও ছাগলের সংকর তেমন বিস্ময়কর না মনে হলেও বিষয়টা মোটেই সহজ নয়, কারণ, এই দুই প্রজাতির জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে৷ তাদের মিলন হলে শাবক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত অবস্থায় জন্মায়৷ ছবির এই প্রাণীটি সুস্থ অবস্থায় আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়৷
লাইগার
লায়ন + টাইগার = লাইগার৷ প্রকৃতির কোলে সিংহ ও বাঘের সংকর দেখা যায় না৷ শুধু চিড়িয়াখানায় এমন কিছু নমুনা রয়েছে৷ যেমন রাশিয়ার নভোসিবির্স্ক শহরের চিড়িয়াখানায় জিটা নামের এই প্রাণীটি৷ ২০১৫ সালে তার দুটি শাবক জন্মায়৷ আকারে ও ওজনে তারা অনেক সময় বাবা-মায়ের থেকেও বড় হয়৷