1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওরা না বোঝে ধর্মের কাহিনি, না শোনে মহাত্মার বাণী

আশীষ চক্রবর্ত্তী১ মার্চ ২০১৫

আমি সারাবিশ্বে কথা-কর আরোপের পক্ষে৷ সবাইকে কথা-কর দিতে হলে কিন্তু মন্দ হয় না৷ দেশে দেশে শৃ্ঙ্খলা বাড়বে, দায়িত্বহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথায় অভ্যস্তরা সম্পদশূন্য হবেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারেরও ‘কল্যাণ' হবে – মন্দ কী!

https://p.dw.com/p/1Eisl
Mohan Bhagwat Anführer der Organisation Rashtriya Swayamsevak Sangh
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images

বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের দায়ীত্বহীন কথা বলার ইতিহাসটা দীর্ঘ৷ সব পেশার মানুষেরই এই প্রবণতা আছে, তবে রাজনীতিবিদরা পাদপ্রদীপের আলোয় বেশি থাকেন বলেই হয়ত মনে হয়, এ কাজে তাঁরাই বেশি ‘দক্ষ'৷ তাঁদের এই ‘দক্ষতা' আমাদের অনেক ভুগিয়েছে, এখনো ভোগায়, কষ্ট দেয়, লজ্জিত করে৷ এই কাজে কে কত এগিয়ে তা বলতে গেলেই মুশকিল৷ এ বলে আমায় দেখো, ও বলে আমায়....কাকে ছেড়ে কার কথা বলি!

ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ আয়তনে অনেক ছোট৷ এই বিশালত্ব আর দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক চর্চায় থাকার সুফল ভারতকে অনেক প্রতিযোগিতাতেই হয়ত এগিয়ে রাখবে৷ এতদিন দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন কথাবার্তায় একটা জমজমাট লড়াইয়ের ‘আশঙ্কা' ছিল, কিন্তু এই জায়গাটাতেও ভারত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে৷

বিশেষ করে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ‘অগ্রগতিটা' বেশ ভাবাচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রেই অযৌক্তিক বা কুযুক্তিপূর্ণ উগ্র কথাবার্তাগুলো জনগণকে, আরো স্পষ্ট করে বললে, সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কী পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে – সেই ভাবনায় ফেলছে৷ ভারতের অবস্থা দেখলে হাসিও পায়৷ কেন? বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের তথাকথিত দায়িত্বশীল কিছু মানুষ নির্ভয়ে যা খুশি তাই বলে গণতন্ত্রের ধ্বজা ওড়ানোর প্রয়াস পাচ্ছে – হাসি তো পাবেই!

Lepra in Indien
মাদার টেরেসার পেছনে লেগেছে হিন্দুত্ববাদীরাছবি: AFP/Getty Images

সংখ্যালঘুদের ধর্মান্তরিত করার বিষয়ে হিন্দুত্ববাদীদের কথা আমরা শুনেছি৷ তাদের চিন্তার দৈন্য এবং বর্বর মানসিকতার বিরল নজীর বিস্মিত করে৷ ওরা বলে, ভারতে আগে সবাই হিন্দু ছিল বলে যাঁরা এখন অন্য ধর্মাবলম্বী তাঁদের আবার হিন্দু বানানো মানে হলো ‘ঘর ওয়াপসি', অর্থাৎ ‘ঘরে ফেরা', তাই এটা নাকি জায়েজ৷ বাহ! তাহলে কী মানুষ এক সময় ‘বানর' ছিল বলে, বানরেরা একদিন ‘ঘর ওয়াপসি'-র দাবি তুললে তা-ও মেনে নিতে হবে?

বিজেপি সরকার কিন্তু ‘ঘর ওয়াপসি' প্রবক্তাদের টুটি চেপে ধরেনি৷ বরং উগ্রদেরও ‘গণতন্ত্র চর্চার' সুযোগ দিয়েছে৷ বাংলাদেশে যেমন জামায়াত এবং বিভিন্ন দলে ঘাপটি মেরে থাকা সমমনারা যুগ যুগ ধরে ‘কাজ' করে যাচ্ছে, ভারতেও সেই অবস্থা৷ আরএসএস, হিন্দু মহাসভা, বজরং দল সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো আর মানবাধিকার কর্মীরাই যা একটু সোচ্চার, সরকার প্রায় নীরব এবং নিষ্ক্রিয়৷

বিজেপি সরকারের প্রশ্রয়ে ভারতে যারা ইতিহাস, ধর্ম, মানবতার বারোটা বাজাচ্ছে, তাদের কারো কারো সঙ্গে বাংলাদেশের বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের মিল খুঁজে পাই৷ পার্থক্য শুধু তারেক দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন, সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এসব নিয়ে নতুন নতুন কথা শোনাচ্ছেন, আর ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা বলছেন তাদের দেশে থেকে, দেশেরই হালুয়া-রুটি খেয়ে৷

তবে তাদের উদ্দেশ্য এবং কৌশল এক৷ তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিতর্কিত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা লেগেছেন মহাত্মা গান্ধী এবং মাদার টেরেসার মতো ব্যক্তিত্বদের পেছনে৷ ভারতে তো একজন তাজমহল নিয়েও নতুন ইতিহাস ফেঁদেছেন!

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

এ সব আসলে পুরোনো কৌশল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্যোবেলস দেখিয়েছিলেন কীভাবে বারবার বলে মিথ্যাকে প্রায় সত্য করে তোলা যায় এবং তার সুবিধাও ভোগ করা যায়৷ গ্যোবেলস আত্মহত্যা করলেও তাঁর কু-মতবাদ বেঁচে আছে৷ দেশে দেশে তাঁর ভাবশিষ্যরা বাকস্বাধীনতা উপভোগ করছেন ইতিহাসের পাতায় কালি ছিঁটানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু ইতিহাসে শেষ পর্যন্ত ওই ‘কালি' থাকে না৷ কালি মুছে যায়৷

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীই সম্ভবত বলতেন, ‘বুরা মত দেখো, বুরা মত সুনো, বুরা মত বোলো'৷ আমরা চাইলে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু না বলে থাকতে পারি৷ কিন্তু এ যুগে যারা ‘খারাপ' কাজ করেও আস্ফালন করে, যারা ‘খারাপ' কথা বলে উদ্দেশ্য হাসিলে তৎপর, তাদের দূরে রাখা তো প্রায় অসম্ভব৷ কথায় বলে ‘চোর না শোনে ধর্মের কাহিনি'৷ ওরাও তো ধর্মের কল্যাণকর কথা, মহান বাণী শোনে না, বা বোঝে না৷ তাদের কথার ওপর কর আরোপ করা হলে মন্দ কী!