ওম পুরি: এক অভিনেতার জীবনের না জানা কিছু কথা
বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা ওম পুরি৷ ভারতীয় চলচ্চিত্রে তাঁর অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে৷
বিশ্বাসের নাম ওম পুরি
অভিনয়ের প্রচণ্ড ইচ্ছে কিন্তু চেহারা খারাপ – এমন ব্যক্তিদের জন্য ওম পুরি এক প্রেরণার নাম৷ তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন দক্ষতা, সামর্থ্য ও আকাঙ্ক্ষা থাকলে চেহারা কোন বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না৷ গুটি বসন্তের ভয়াবহ দাগ মুখে নিয়েও রূপালি পর্দায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করা যায়৷
খ্যাতি
ওম পুরি বলিউডের হাতে গোনা সেই অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম যারা আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন৷ ‘অর্ধসত্য’, ‘আক্রোশ’, ‘আরোহন’, ‘সদগতি’, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’, ‘মাচিস’ এবং ‘চাচি ৪২০’-এ তার দুর্দান্ত অভিনয় সবাই মনে রাখবে৷ চার দশক ধরে নানা ধরনের চরিত্রে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি৷
বিদেশি ছবি
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘গান্ধী’, ‘চার্লি উইলসনস ওয়ার’, ‘দ্য হান্ড্রেড ফুট জার্নি’, ‘সিটি অফ জয়’, ‘ইস্ট ইজ ইস্ট’, ‘দ্য রিলাকটেন্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট’ এর মত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র এবং কিছু ধারাবাহিক এ তাঁর অভিনয় দাগ কেটেছে দর্শকদের মনে৷ জুলিয়া রবার্টস ও টম হ্যাঙ্কসের সঙ্গে ‘চার্লি উইলসন ওয়ার’ চলচ্চিত্রে জেনারেল জিয়া উল হকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি৷
অভিনয়ের ক্ষমতা
ওমপুরি এমন একজন অভিনেতা ছিলেন যিনি একই সঙ্গে বিকল্প ধারা এবং বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন৷ সবক্ষেত্রেই তাঁর বলিষ্ঠ অভিনয় দেখেছে ভারতীয় উপমহাদেশের দর্শক৷
অর্জন
১৯৭৬ সালে মারাঠি চলচ্চিত্র ‘ঘাসিরাম কোতোয়াল’ দিয়ে পর্দায় অভিষেক হয় ওম পুরির৷ ‘আক্রোশ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান৷ অথচ প্রথমে এই চরিত্রের জন্য ভাবা হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনকে৷ ১৯৯০ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷
অসাধারণ কণ্ঠ
ওমপুরি যেমন অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন, তেমনি অসাধারণ ছিল তাঁর কণ্ঠ৷ কিছু চলচ্চিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ডে তাঁর কণ্ঠ ব্যবহৃত হয়েছে৷ সবশেষ তাকে সানি দেওলের ‘ঘায়েল রিটার্নস’ চলচ্চিত্রে দেখা গেছে৷
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
আম্বালার এক পাঞ্জাবী পরিবারে জন্ম ওম পুরির৷ সাত বছর বয়স থেকেই গ্রামের সরাইখানায় গ্লাস ধুয়ে মুছে রাখার কাজ করতেন তিনি৷ পরিবারকে সাহায্য করতে রেল লাইন থেকে কয়লা কুড়ানোর কাজও করেছেন তখন৷
প্রিয় বন্ধু
ওম পুরির সবচেয়ে ভালো বন্ধু অভিনেতা নাসিরউদ্দীন শাহ৷ পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের স্কুল অব ড্রামায় পড়ার দিনগুলো থেকেই একে অপরের প্রাণের বন্ধু হয়ে যান নাসিরউদ্দিন শাহ এবং ওম পুরি৷
দাম্পত্য জীবন
১৯৯১ সালে অভিনেতা আন্নু কাপুরের বোন কে বিয়ে করেছিলেন৷ কিন্তু মাত্র ৮ মাসের মাথায় তাদের বিচ্ছেদ হয়৷ এরপর সাংবাদিক নন্দিতা পুরিকে বিয়ে করেন৷ ২০১৩ সালে নন্দিতা গৃহনির্যাতনের অভিযোগ আনেন ওম পুরির বিরুদ্ধে৷ এরপর দু’জনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ এই পরিবারে তাঁর একটি ছেলে রয়েছে৷(ছবিতে কলকাতার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখপাধ্যায়ের সঙ্গে)
বিতর্কিত মন্তব্য
নিজের করা কিছু মন্তব্য নিয়ে বেশ সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে ওম পুরিকে৷ ভারতীয় সেনার মৃত্যু নিয়ে একবার টেলিভিশনের টক শোতে তিনি বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে কে বলেছিল?’ এছাড়া বলেছিলেন, ভারতের সংসদ সদস্যদের অর্ধেকের বেশি অশিক্ষিত৷ এই মন্তব্যের কারণে ক্ষমা চাইতে হয় তাঁকে৷ গো-হত্যা বন্ধকে ‘নাটক’ বলেছিলেন তিনি৷