ওবামা ভারতে পরিবেশ নিয়েও কথা বলবেন
২৫ জানুয়ারি ২০১৫ভারত কিন্তু চীন-মার্কিন চুক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছিল এই বলে যে, এই চুক্তির মাধ্যমে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, উন্নয়নশীল দেশগুলির উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধির অধিকার আছে এবং সেই কারণে অন্তত কিছুকালের জন্য পরিবেশ দূষণ করারও অধিকার আছে৷ কিন্তু তা বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যেও যে অনুরূপ একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, তার সম্ভাবনা কম৷ বরং যে ভারত-মার্কিন ক্লিন এনার্জি সহযোগিতায় ইতিমধ্যেই একশো কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, তাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাটাই স্বাভাবিক৷
অথচ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বব্যাপী সংগ্রামে ভারত না যোগদান করলে, সাফল্যের বিশেষ আশা থাকে না৷ ১২৬ কোটি মানুষের দেশটি অশ্বীভূত জ্বালানি, অর্থাৎ কয়লা ও খনিজ তেলের উপর অতিমাত্রায় নির্ভর৷ অপরদিকে দেশের মানুষদের একটি বড় অংশের অপরিসীম দারিদ্র্য মোচনের জন্য যে প্রবৃদ্ধি আবশ্যক, স্বল্পমেয়াদে তাতে ব্যাপক জ্বালানির প্রয়োজন পড়বে৷ ঠিক সেখানেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটা ভূমিকা রাখতে পারে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনাগুলির বাস্তবায়নে সাহায্য করে৷ নয়তো নতুন দিল্লি পূর্বাপর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হয়ে থাকবে, যেমন ভারত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে সারা বিশ্বে তৃতীয়৷
ভারত ইতিমধ্যেই আশ্বাস দিয়েছে যে, ২০২২ সালের মধ্যে তার নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করার ক্ষমতা লক্ষণীয়ভাবে বাড়ানো হবে – সৌরশক্তির উৎপাদন পাঁচগুণ বেড়ে ১০০ গিগাওয়াটে দাঁড়াবে; বায়ুশক্তি ৩০ গুণ বেড়ে দাঁড়াবে ৬০ গিগাওয়াটে, এছাড়া ভারতের মান্ধাতার আমলের এনার্জি গ্রিডের পূর্ণ সংস্কার করা হবে৷ গোটা পরিকল্পনায় মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার: এক্ষেত্রে মার্কিন সরকার ও শিল্পসংস্থাগুলির কাছ থেকে সাহায্য প্রত্যাশা করবে ভারত৷
পরিস্থিতি যে হতাশাজনক, এমন নয়৷ ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সৌরশক্তি উৎপাদনকারী দেশ; বায়ুশক্তির ক্ষেত্রে চতুর্থ৷ অপরদিকে কয়লা শিল্পে ব্যাপক গোলযোগের ফলে বিনিয়োগকারীরা সুবিধা দেখলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকবেন বৈকি – যেমন তারা ইতিমধ্যেই সৌরশক্তির দিকে ঝুঁকেছেন৷ মার্কিন কোম্পানিরাও ইতিমধ্যেই তাদের সুযোগ দেখেছে: মিসুরি-ভিত্তিক সান এডিসন কোম্পানি ভারতে একটি চারশো কোটি ডলার মূল্যের সৌরশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে সাহায্য করবে, এছাড়া গ্রামাঞ্চলে পাঁচ হাজার মাইক্রোগ্রিড গড়ে তুলবে৷ ওয়েলস্পান এনার্জি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা ভারতে আরো বেশি সৌর শক্তি এবং বায়ুশক্তিগত প্রকল্প সৃষ্টির জন্য অতিরিক্ত ১৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে৷
বাকি থাকে শুধু দু'টি প্রশ্ন: চার বছর অচলাবস্থার পর যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রেও ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করবে কিনা; দ্বিতীয়ত, দিল্লির ধোঁয়াশা দেখার পর ওবামা ভারতকে বায়ুদূষণের ব্যাপারে কিছু বলবেন কিনা!
এসি/এসবি (এপি, এএফপি)