ওদের কী অপরাধ?
ওরা শিশু, কারো জন্ম মাত্র কয়েকমাস আগে৷ কিন্তু সবাই ভুগছে নানা রোগে৷ কারো কারো পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা, কিন্তু খেতে পারছে না তীব্র অপুষ্টির শিকার হওয়ায়৷ বলছি ইরাকের মোসুলের শিশুদের কথা৷
যুদ্ধের খেসারত
তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে ইরাকের সামরিক বাহিনীর টানা যুদ্ধের পর মোসুলের অনেকাংশই জঙ্গিদের হাতছাড়া হয়েছে৷ কিন্তু যুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে সেখানকার শিশুরা৷ বিশেষ করে যুদ্ধ চলাকালে যাদের জন্ম, তাদের অধিকাংশই তীব্র অপুষ্টির শিকার৷ ছবিতে ছয়মাস বয়সি মেয়ে শিশু নওরশ রাইদের হাত ধরে আছেন ‘মেডেসিন্স স্যান ফ্রন্টিয়াস’ (এমএসএফ)-এর এক নার্স৷
চাচির কোলে নাওয়াফ
আট বছর বয়সি দুয়া নাওয়াফকে এমএসএফ-এর হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তাঁর চাচি৷ গতমাসে মোসুলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলায় নাওয়াফের বাবামাসহ একশ’রও বেশি মানুষ নিহত হন৷ তার মাথা ও হাত পুড়ে গেছে সেই হামলায়৷ নাওয়াফের মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে রাতের বেলা প্রচণ্ড আতঙ্কে ভোগে সে৷
ওজন কম
ইরাকের কাউজারায় এমএসএফ পরিচালিত এক হাসপাতালে ইরাকি এক শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন এক চিকিৎসক৷ হাসপাতালের অধিকাংশ শিশুই অপুষ্টির শিকার এবং তাদের ওজন বয়স অনুপাতে অনেক কম৷ ইরাকে মায়েরা সাধারণত শিশুদের বুকের দুধ পান করান না৷ বরং ফর্মুলা মিল্ক পান করান তারা৷ এখন যুদ্ধের কারণে সেই দুধের সংকট তীব্র৷ আর মায়েরা চাইলেও সন্তানদের দুধ পান করাতে পারছেন না, কেননা, তারা নিজেরাও খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন৷
বোনের সঙ্গে খেলা
পাঁচ বছর বয়সি আয়হাম আহমেদ৷ সে কিছুদিন আগে মোসুলে এক বিস্ফোরণে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে আহত হয়েছিল৷ এখন সে হাসপাতালে বোনের সঙ্গে খেলছে৷ এমএসএফ-এর হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগীর বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ আর সেখানকার শিশু পরিচর্যা ইউনিটে ভিড় এত বেশি যে, প্রতি বিছানায় দু’জন করে রোগী রাখতে হচ্ছে৷ সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিশু বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে৷
‘ইরাকে এটা নতুন’
হাসপাতালে এক শিশু কাঁদছে৷ সে অপুষ্টির কারণে এত দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে গেছে৷ এমএসএফ-এর প্রকল্প সমন্বয়ক ইসাবেলা লিগাল বলেন, ‘‘ইরাকের শিশুদের এমন অবস্থা নতুন৷ ইরাকের অধিকাংশ চিকিৎসকই অতীতে এতটা অপুষ্টির শিকার শিশু দেখেনি৷’’
আইএস-এর কারণে
হাসপাতালে আসা এক মা অভিযোগ করে বলেন, আইএস-এর কারণে তাদের এত করুণ অবস্থা হয়েছে যে, শিশুদের চিনিমিশ্রিত পানি, দই বা পানিতে মেশানো ময়দা ছাড়া আর কিছু খাওয়াতে পারছেন না৷ ইরাকি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে শহরটি খাবার পরিবহণ অনেক কমে গেছে৷
আর কতদিন?
এমএসএফ-এর হাসপাতালে এক শিশুকে পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক৷ সেখানে ভর্তি হওয়া শিশুদের অনেকের শ্বাসকষ্ট এবং নিউমোনিয়ার সমস্যা রয়েছে৷ এছাড়া নানা ভাইরাসেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা৷ প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধের কারণে তাদের এমন ভোগান্তি আর কতদিন চলবে?