1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওড়িশার সাম্প্রতিক সঙ্কট: ধর্মীয় সম্প্রীতি কি বিপন্ন?

সঞ্জীব বর্মন / আরফাতুল ইসলাম৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮

ভারতের ওড়িশা রাজ্যের কন্ধমল ও অন্যান্য কয়েকটি এলাকায় কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি হিন্দু ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে৷ হিন্দু-খ্রীষ্টান সাম্প্রদায়িক সংঘাত - নাকি অন্য কারণ কাজ করছে এর পেছনে?

https://p.dw.com/p/FCDL
ওড়িশার সাম্প্রতিক সঙ্কট এর প্রতিবাদছবি: AP

ভারতের ওড়িশা রাজ্যে এমন সাম্প্রদায়িক সঙ্কটের ঘটনা প্রথম নয়৷ ১৯৯৯ সালে ওড়িশার কেওনঝাড় জেলার মনোহরপুরে অস্ট্রেলীয় খ্রীষ্টান মিশনারি গ্রাহাম স্টেইনস ও তাঁর দুই পুত্রকে যেভাবে নৃশংস হত্যা করা হয়েছিল, তা আন্তর্জাতিক স্তরেও নজর কেড়েছিল৷ তাদের হত্যার ঘটনার সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল, এটা কি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা - নাকি ওড়িশায় হিন্দু ও খ্রীষ্টানদের মধ্যে বহুকাল ধরেই তিলে তিলে দানা বাঁধছে অন্য কোনো সঙ্কটের বীজ?

BDT Indien, Hindu Festival zu Ende
ধর্মীয় সম্প্রীতি কি বিপন্ন?ছবি: AP

ভারতের অনেক অনুন্নত এলাকার মতো ওড়িশার প্রত্যন্ত এলাকায় খ্রীস্টান মিশনারিরা বহুকাল ধরেই নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন৷ শিক্ষার প্রসার থেকে শুরু করে উপজাতীয় সমাজের অধিকার স্থাপনের ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য৷ হিন্দু ধর্মের জাতপাতের নীতির শিকার উপজাতি ও নিম্ন বর্ণের মানুষও খ্রীষ্টান মিশনারিদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মানুষ হিসেবে নিজেদের আত্মসম্মান খোঁজার চেষ্টা করেছেন৷ অনেকে স্বেচ্ছায় খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন, অনেকে জীবনযাত্রার উন্নতির আশায়ও ধর্মান্তরিত হয়েছেন৷

কিছু ক্ষেত্রে মিশনারিরা অর্থ বা সম্পদের লোভ দেখিয়ে কিছু মানুষকে ধর্মান্তরিত করেছেন বলেও অভিযোগ শোনা গেছে৷ মোটকথা, সংখ্যাগুরু হিন্দু সমাজের একটা অংশ বিষয়টিকে মোটেই ভাল চোখে দেখে নি৷ তারা মিশনারিদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ, তাদের উপর আরও কড়া নজর রাখার পক্ষে সওয়াল করেছে৷ এমনই কিছু সংগঠন মিশনারিদের প্রভাব কমাতে নিজেরাই এগিয়ে এসেছে সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করতে৷ এককালে যেসব মানুষ সংখ্যাগুরু সমাজের বৈষম্য ও অসম্মানের মুখে ধর্মত্যাগ করেছিল, তাদেরই উত্তরসুরিদের আবার হিন্দু ধর্মের আওতায় ফিরিয়ে আনতে আয়োজন করা হয়েছে হয়েছে গণ ধর্মান্তর উত্‌সব৷ হিন্দু সংগঠনগুলির এই ধরনের কার্যকলাপের ফলে অন্তত কিছু ক্ষেত্রে খ্রীষ্টান মিশনারিদের সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে৷

Gewalt gegen Christen in Orissa Indien
খ্রীষ্টান চার্চে আগুনছবি: AP

অগাস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ওড়িশার বড়গড় জেলার পদমপুরে কট্টরপন্থী হিন্দু সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থকেরা খ্রীস্টান মিশনারী পরিচালিত একটি অনাথ আশ্রমের উপর হামলা চালায়৷ আশ্রমের কেয়ারটেকার এক মহিলাকে জীবন্ত অবস্থায় দগ্ধ করা হয়৷ তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে একই পরিণতি হয় আশ্রমেরই এক পাদ্রীর - যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান৷ প্রায় একই সময় ঐ অঞ্চলে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটে৷ এর ফলে উত্তেজনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ কন্ধমাল জেলায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা লক্ষ্মণানন্দ সরস্বতী সহ ঐ সংগঠনের ৫ জন সমর্থকের হত্যার জের ধরে একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে থাকে৷ খোদ ভ্যাটিকান সিটি সহ আন্তর্জাতিক স্তরে খ্রীষ্টানদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে৷

আপাতদৃষ্টিতে এই সব ঘটনাকে হিন্দু-খ্রীষ্টান সাম্প্রদায়িক সংঘাত হিসেবে তুলে ধরা হলেও অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এর পেছনে আসলে কাজ করছে জাতিসত্ত্বার অধিকারের বিষয়টি৷ কন্ধমাল জেলার ধর্মান্তরিত খ্রীষ্টানদের একটা বড় অংশই আসলে নিম্নবর্গ তফসিল জাতিভুক্ত পানা হরিজন৷ ভারতের আইন অনুযায়ী ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে তাঁদের আর তফসিলভুক্ত জাতির মর্যাদা থাকছে না৷ কিন্তু ধর্মান্তরিত এই পানা হরিজনরাও তফসিল উপজাতির মর্যাদার দাবি করে আসছে, যাতে তারা বাকি তফসিলভুক্তদের মত সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে৷ খ্রীষ্টান মিশনারিরা আদিবাসীদের ধর্মান্তরের যে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নিহত নেতা লক্ষ্মণানন্দ সরস্বতী তার তুমুল বিরোধিতা করে এসেছেন৷ সেইসঙ্গে তিনি আদিবাসীদের জাতি ও উপজাতি সংঘাতেও নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন৷ এই জটিল সমীকরণের কাঠামোর জের ধরেই সম্প্রতি ওড়িশায় হিংসালীলার সূত্রপাত ঘটেছে বলে সেই সব পর্যবেক্ষক মনে করছেন৷