ঐতিহাসিক গ্রিস সফরে বন্ধুত্বের সূচনা করলেন এরদোয়ান
১৫ মে ২০১০বাস্তবে কতটা কী হবে তা বলবে আগামীর ভবিষ্যত৷ কিন্তু, এই মুহূর্তের পরিস্থিতি যা বলছে, তাতে বহুদিন ধরে যুযুধান দুটি প্রতিবেশী দেশ, এজিয়ান সাগরের দখলদারি নিয়ে যাদের পারস্পরিক সামরিক শক্তির নিক্তির বিচার চলে আসছিল দীর্ঘদিন, সেই তুরস্ক এবং গ্রিস এবার বন্ধুত্বের হাত মেলাতে চলেছে বা মিলিয়ে ফেলেছে৷ যে কারণে, তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইইপ এরদোয়ানের শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তুরস্ক সফরকে ঐতিহাসিক বলেই ক্ষান্ত হওয়া যাচ্ছে না, বলতে হচ্ছে, এই সফর এক শতাব্দের শত্রুতার অবসান ঘটিয়ে দিল প্রায় ‘মিরাকল'-এর মত৷
‘মিরাকল' না বললেও তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান শুক্রবার গ্রিসের সংসদে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী পাপানদ্রেয়াউ-এর সঙ্গে পৌরহিত্যের ভূমিকা নেওয়ার পর যা বলেছেন, সেই কথাগুলি আরেকবার বুঝে নেওয়া যাক৷ এরদোয়ান নিজেই বলছেন, তাঁর এই সফর ‘ঐতিহাসিক'৷ বলছেন, এই সফর ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে শতাব্দের৷ অবসান ঘটিয়েছে শত্রুতার৷ বলেছেন, ‘এই আমরা ঘুরে দাঁড়ালাম৷ এরপর যা কিছু হবে, তা সবই হবে বন্ধুত্বপূর্ণ৷'
ইতিহাস বলছে, সুদীর্ঘ পাঁচ শতাব্দের তুর্কি শাসন মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল গ্রিস৷ শত্রুতার শুরু সেখান থেকেই৷ আধুনিক বিশ্বে, যেখানে সেই শত্রুতার চেহারাটা খোলাখুলি দেখা না গেলেও, এজিয়ান সাগরের দখলদারী নিয়ে দুই দেশেরই সামরিক ব্যয়ের অংক কিন্তু অসীম৷ তার ওপর গ্রিসের সাম্প্রতিক আর্থিক বিপর্যয়ের সময়ে যদি সেই ব্যয় তাদের বহন করে যেতে হয়, তা হবে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত যন্ত্রনাদায়ক৷ দ্বিপাক্ষিক সৌহার্দ্য চুক্তির পর, সামরিক খাতে গ্রিস খরচ কমাতে পারবে৷ সাশ্রয় হবে বছরে ছয় বিলিয়ন ইউরো৷ যা তাদের আশু প্রয়োজন৷ পাশাপাশি, তুরস্কের সঙ্গে পর্যটন, বাণিজ্য এবং শিল্প সংক্রান্ত আরও অসংখ্য চুক্তি সাক্ষর করছে এথেন্স৷ এরদোয়ানের সঙ্গে প্রায় একশোজন তুর্কি শিল্প বাণিজ্য প্রতিনিধি গ্রিস সফর করছেন৷ চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব তাঁদেরই৷
আজ শনিবার দিনটা তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান এথেন্সে তুর্কি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তুলে রেখেছেন৷ এতদিন গ্রিসে যে তুর্কিদের সংখ্যালঘু বলে অভিহিত করা হত৷ এখন তাহলে নতুন সময়, নতুন বন্ধুত্ব৷ সেই বন্ধুত্বের প্রভাব কতটা কী হবে, তা জানতে হয়তো বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না৷ তবে যে কোন শত্রুতার অবসানই তো ইতিহাসের জন্য সবসময়েই সুসংবাদ বয়ে আনে৷ সেই সুসংবাদটাই আপাতত অপেক্ষার বিষয়৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম