এশিয়ায় ভিডিও গেমে নারীর আগ্রহ বাড়ছে
১৪ জুলাই ২০২০প্রযুক্তি সংস্থা গুগলের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, এশিয়ায় পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি ভিডিও গেম খেলছেন৷ বিশেষ করে ভারত, চীন ও জাপানে নারীদের মাঝে বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷
বিবিসির এক প্রতিবেদন গুগলের গবেষণার বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে এশিয়ায় নারী খেলোয়াড়দের হার ১৯ শতাংশ বেড়েছে৷ ভিডিও গেমের বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যান বলছে, শুধু এশিয়া থেকেই আসে মোট ৪৮ শতাংশ এই সংক্রান্ত আয়৷ গুগলের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের কর্মকর্তা রোহিণী ভূষণ বলেন, ‘‘প্রতি বছর যে লাখ লাখ নতুন খেলোয়াড় আসছেন তার মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়৷''
২০১৯ সালে নারী খোলোয়াড়দের সংখ্যা ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়৷ বর্তমানে, বিশ্বজুড়ে রয়েছেন মোট ১৩৩ কোটি ভিডিও গেম খেলোয়াড়, জানাচ্ছে গুগলের পার্টনার গবেষণা সংস্থা নিকোস পার্টনারস৷
কিন্তু এশিয়ায় পুরুষের চেয়ে বেশি নারীরাই ভিডিও গেমের জগতে৷ সবচেয়ে বেশি ৪৫% নারী খেলোয়াড় রয়েছেন চীনে, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানে রয়েছেন ৪০ শতাংশ নারী ভিডিও গেমার৷
কেন নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে?
গুগল এশিয়া প্যাসিফিকের অ্যাপস, পার্টনারশিপ ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান ম্যাট ব্রকলেহার্স্ট বলেন, ‘‘মোবাইলে ভিডিও গেম খেলায় যে মজা, স্বাধীনতা ও সহজ ইন্টারফেস রয়েছে, তা-ই টেনে আনছে নারীদের৷ বিশেষ করে এশিয়ায় যেভাবে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ছে, তা-ও এই ধারার জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷''
এছাড়া, নানা ধরনের প্রতিযোগিতা, স্পন্সরশিপ ও পুরস্কারের সূত্রে ভিডিও গেমের দুনিয়ায় নারী খেলোয়াড়রা আয় করেছে প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৭০ কোটি টাকা) মূল্যের অর্থ৷ নারীদের আকর্ষণক্ষমতা তাদেরকে ক্রমেইগেম জগতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে বলেও জানাচ্ছে প্রতিবেদনটি৷
পাশাপাশি, এশিয়ায় আজকাল দেখা যাচ্ছে নারীদের জন্য বিশেষ ভিডিও গেম লিগ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম ‘ফিমেল ই-স্পোর্টস লিগ'৷
এই লিগের খেলোয়াড় ২৫ বছর বয়েসি আমান্ডা লিমের ভিডিও গেমের জগতে প্রবেশ তার ভাই ও চাচার হাত ধরে৷ তিনি বলেন, ‘‘নারী খোলোয়াড়রা এখনও তুলনায় কম জনপ্রিয় হলেও এখন সময় এসেছে এই ধারণা পাল্টাবার৷ আমরা এক্ষেত্রে পুরুষদের সমান শক্তিশালী৷''
সিঙ্গাপুর ও মালয়শিয়ার নারী খেলোয়াড়দের দল ‘উই.বেটারস'-এর হয়ে খেলেন লিম৷
তবুও মূলধারার বাইরেই নারীরা
রেয়া আয়ুনান পেশাদার ভিডিও গেম খেলোয়াড়৷ ব্যাটল রয়ালের মতো গেম তিনি এক সময় দিনে টানা ছয় ঘন্টা ধরে খেলতেন৷ তিনিও লক্ষ্য করেছেন নারী খেলোয়াড়দের সংখ্যা৷ রেয়ার মতো ১৯ বছর বয়সি ভ্যালেরি ওং দিনে তিন থেকে সাত ঘন্টা ভিডিও গেম খেলেন৷ প্রথমবার ‘কল অফ ডিউটি' খেলতে গিয়েই তার চোখে পড়ে কতটা নারী-পুরুষ অসাম্য রয়েছে এই জগতে৷
সমাজের অন্তর্নিহিত লিঙ্গবৈষম্যের প্রভাব রেহাই দেয়নি ভিডিও গেমের দুনিয়াকেও৷ রেয়া বলেন, ‘‘আমি অনলাইনেগেম খেলতে গিয়েই একবার যৌন নিপীড়নের শিকার হই৷ আমাকে নিয়ে নানা ধরনে মিম বানানো হয়৷ কোনো নারী আজও গেম খেলতে গিয়ে জনসমক্ষে চলেএলেই মানুষ নেতিবাচক কথাবার্তা বলতে শুরু করে৷ অকারণ দোষ ধরে, বিরক্ত করে আমাদের অনুৎসাহিত করা হয়৷''
গেম বিশেষজ্ঞদের মতামত, এমন পরিস্থিতি এড়াতে নারী খেলোয়াড়দের এমন ‘ইউজার নেম' বাছা উচিত, যা খেলোয়াড়ের লিঙ্গপরিচয় প্রকাশ করে না৷
এসএস/এসিবি (সূত্র: বিবিসি)