1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার ‌জলদূষণও ঠেকাল কলকাতা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২০ নভেম্বর ২০২০

আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করে কলকাতার বৃহত্তম দুই প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছট পুজোর সমারোহ এবার আটকে দিল প্রশাসন৷ ঠেকানো গেল জলদূষণ৷

https://p.dw.com/p/3lb7m
Indien Entscheidung zu Seen in Kalkutta
ছবি: Sirsho Bandopadhyay/DW

বায়ুদূষণ রুখতে, আদালতের নির্দেশে দীপাবলির আতশবাজি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল এই বছর৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের তৎপরতায়, পুলিশের সতর্কতায় এবার প্রায় শব্দহীন ছিল আলোর উৎসব৷ কান–ফাটানো বাজির আওয়াজ প্রায় শোনাই যায়নি কলকাতা শহর ও সংলগ্ন অঞ্চলে৷ এবার জলদূষণও আটকে দিতে সফল হলো প্রশাসন৷ মূলত বিহার থেকে আসা কলকাতার অবাঙালি বাসিন্দারা প্রতিবছর এই সময় করেন, যার অন্যতম আচার হলো গঙ্গা, বা অন্য কোনও নদী, অথবা জলাশয়ে নেমে পুজোপাঠ৷ এর দরুণ প্রচুর ফুল, পাতা, সিঁদুর, ঘি, তেল মিশে যেত জলে, দূষণ ছড়াত৷ সরাসরি প্রভাব পড়ত জলবাসী প্রাণীর বেঁচে থাকায়৷ বেশ কয়েক বছর ধরেই এই নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা৷ গত বছরও আদালতের নির্দেশ ছিল, কলকাতার দুই বৃহত্তম প্রাকৃতিক জলাশয়, উত্তরে বেলেঘাটা লেক, বা সুভাষ সরোবর এবং দক্ষিণে ঢাকুরিয়া লেক, বা রবীন্দ্র সরোবরের জলে নেমে পুজো করা যাবে না৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতের সেই নির্দেশ মান্যতা পায়নি৷ রবীন্দ্র সরোবরের বন্ধ ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে জলাশয় নোংরা করেন পুণ্যার্থীরা৷

‘পরিবেশ সব কিছুর ওপরে’

এবারও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল দুটি লেকে ছট পুজো করতে না দেওয়ার পক্ষে৷ কলকাতা পুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একদিকে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে যেমন উচ্চতর আদালতে আপিল করেছিল, তেমনই ছট পুজোর বিকল্প বন্দোবস্তও করতে শুরু করেছিল৷ মোট ১,৩০০ কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে পুজো করা যাবে৷ শেষ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় হাত শক্ত হয় প্রশাসনের৷ রবীন্দ্র এবং সুভাষ সরোবরের সব ফটক তালাবন্ধ করে, তার সামনে বাড়তি বাঁশের বেড়া বানিয়ে, বাড়তি পুলিশ পাহারা বসিয়ে শুক্রবার দুটি লেককেই সুরক্ষিত রাখা হয়েছে৷ আদালতের নির্দেশে তার আগের রাত থেকেই একেবারে শনিবার বিকেল পর্যন্ত সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে দুটি লেক৷

২০১৪ সাল থেকে সুভাষ সরোবরের জলকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবেশবিদ সুদীপ্ত ভট্টাচার্য৷ তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন আদালতের হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনিক তৎপরতাকে৷ সুদীপ্তবাবু বিশদে বোঝালেন, ছটপুজোর কারণে কীভাবে জলে দূষণ ছড়ায়৷ ফুল, পাতা পচে, জলে তৈলাক্ত আবর্জনা ছড়িয়ে গিয়ে শুধু জলই নষ্ট করে না, জলচর প্রাণীদেরও অকালমৃত্যুর কারণ হয়৷ যদিও পুণ্যার্থীরা এত কিছু বুঝতে চান না৷ এদিনও তাঁরা কেউ কেউ রবীন্দ্র সরোবরের বন্ধ ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ এ ব্যাপারে সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাফ কথা, ‘‌‘‌ধর্মীয় ভাবাবেগ সব ধর্মেই আছে৷ হিন্দু ধর্মে আছে, আবার অন্য যে সমস্ত সংখ্যালঘু ধর্ম, তাদেরও আছে৷ কিন্তু পরিবেশ সব কিছুর ওপরে৷ পরিবেশ যদি ঠিকঠাক থাকে, তা হলেই কিন্তু আমরা, সব ধর্মের মানুষ, সবাই মিলে ঠিকভাবে বেঁচে থাকতে পারব৷ করোনা কিন্তু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, এই লাগামহীন দূষণ হলে কী ঘটতে পারে!‌ ফলে পরিবেশের বিষয়টা সব ধর্মের ঊর্ধ্বে৷ এখানে কোনও আবেগকে গ্রাহ্য করাটা ঠিক না৷’’