1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার চাঙা হবে ঈদ অর্থনীতি?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ এপ্রিল ২০২২

এবার আগেই জমে উঠেছে ঈদের বাজার। ব্যবসায়ীদের কথা রোজা শুরুর ১৫ দিন আগে থেকেই ঈদের শপিং শুরু হয়েছে। ফলে গত দুই ঈদে করোনার ধকল কাটিয়ে এবার ঈদের অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠবে বলে তারা আশা করছেন।

https://p.dw.com/p/49RHp
এবারের ঈদের বাজার পুরো অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে
এবারের ঈদের বাজার পুরো অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবেছবি: Mortuza Rashed/DW

অর্থনীতিবিদেরাও সেরকমই আশা  করছেন। তারা মনে করছেন, এবারের ঈদের বাজার পুরো অর্থনীতিতেও  ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে তাদের কথা করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বড় একটি অংশ হয়তো ঈদের কেনাকাটা তেমন করতে পারবেন না। তাই ঈদে বৈষম্য আরো প্রকটভাবে প্রকাশ হতে পারে।

কয়েক বছর আগে এফবিসিসিআই যে জরিপ করেছিলো তাতে ঈদের অর্থনীতির আকার  ২৫ হাজার কোটি টাকার বলা হয়েছিল। এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন মনে করেন সেটা এখন ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন,“গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদের বাজার  পুরোই মন্দা ছিলো। বিধিনিষেধের কারণে ঈদের বাজার জমেনি। তবে এবার নিষেধাজ্ঞা নেই। আর খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থাও কাটিয়ে উঠছে। তাই এবার রোজার ১৫ দিন আগে থেকে লোকজন ঈদের শপিং শুরু করেছে। আমরা  তাই আশার আলো দেখছি।”

‘‘রোজার ১৫ দিন আগে থেকে লোকজন ঈদের শপিং শুরু করেছে’’

ঈদের সাথে যদি রোজার বাজার ধরা হয় তাহলে লেনদেন এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার কম নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। এবার রাজনৈতিক দলসহ নানা ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইফতার পার্টিতে জোর দিয়েছে। যা অর্থনীতির জন্য ভালো।

ঈদের নতুন পোশাক ছাড়াও, খাবার দাবার, সোনার গয়না, জুতা এবং ঘরের আসবাবপত্রসহ আরো কিছু পণ্যের বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। এর বাইরে পর্যটন খাতেও মানুষ ব্যয় করে। এবার করোনার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় প্রতিটি খাতই চাঙা হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
হেলাল উদ্দিন জানান, এই ঈদ অর্থনীতির সাথে সরাসরি এক লোক কোটি লোক যুক্ত। তাদের সঙ্গে আছে পরিবারের সদস্যরা। ওই এক কোটি লোকের  মধ্যে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন। এবার ঈদে তারা গত দুই বছরের ধকল কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

‘‘ঈদের অর্থনীতি অনেকটাই পুনরুদ্ধার হবে’’

মানুষের আয় কমে যাওয়া ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন,“এই পরিস্থিতির কারণে মানুষ অস্বস্তিতে আছে সত্য, তবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে। সেটা না হলে এবার আগে থেকে শপিং মলে ভিড় হবে কেন? আমি ঢাকার বাইরে গিয়েছি সেখানেও কিন্তু এবারের ঈদ প্রস্তুতি ভালো। আমার মনে হয় যারা ঈদে কেনা কাটা করেন তারা করবেন। সেই দিক দিয়ে সমস্যা হবেনা। তবে ঈদের পরে আবার বাজারে সংকট হতে পারে। তার পূর্বাভাস আমরা পাচ্ছি।”

সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন এবার করোনা অনেক কমে আসায়  ঈদের অর্থনীতি অনেকটাই পুনরুদ্ধার হবে। তার মতে,“এটার সুফল অর্থনীতিতে পড়বে কিন্তু বৈষম্য কমবে বলে মনে হয় না। কারণ মূল্যস্ফীতির চাপ আছে সাধারণ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকের আয় কমে গেছে। তারপরও করোনা তেমন না থাকায় যারা ঈদে খরচ করেন তারা এবার খরচ করবেন।”


ঈদের সময় বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের একটা বড় প্রভাব থাকে। যারা প্রবাসে থাকেন তারা দেশে পরিবার পরিজনের কাছে বাড়তি টাকা পাঠান ঈদ খরচের জন্য। ঈদকে সামনে রেখে রেমিটেন্স প্রবাহও বাড়তে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ৩৭ কোটি ডলার বেশি রেমিটেন্স এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছে ১৪৯ কোটি ডলার। মার্চে ১৮৬ কোটি ডলার। চলতি মাসে তা আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন,“ এবার করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় ঈদের অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সাধারণ মানুষের অবস্থা যাই হোক না কেন যারা বিদেশে শপিং করতে যেতেন তারা যাবেন। যারা ভোগ করতেন তারা করছেন। এই রমজানে ইফতার সেহেরির বিলাসিতা হচ্ছে। তাই ঈদ অর্থনীতি চাঙা হলেও বৈষম্য থেকেই যাবে।”
তার কথা,“ দেশের মানুষ চায় অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক। সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বেকারত্ব বেড়েছে। দারিদ্র্য বেড়েছে। তার সমাধান প্রয়োজন।”