এফডিসি : বিলীয়মান ঢাকাই চলচ্চিত্রের বিবর্ণ সূতিকাগার
এক সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র এফডিসির বিভিন্ন ফ্লোরে একসঙ্গে কয়েকটি সিনেমার শুটিং হতো৷ তারকাদের ভিড়ে অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যেতো সেখানে৷ ঢাকাই চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘরের এখন কী অবস্থা দেখুন ছবিঘরে...
প্রবেশপথে শুরুর ইতিহাস
এফডিসির মূল প্রবেশপথের একপাশের দেয়ালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির নীচে এক টুকরো ইতিহাস৷ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে তৎকালীন শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের পেশ করা ‘চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ বিল ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়৷ তবে এখানে প্রথম শুটিং হয়েছিল ১৯৫৯ সালে৷ স্বাধীন দেশে প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’ ৷
প্রবেশ ফি ১০৫ টাকা
এক সময় এফডিসির মূল ফটকের সামনে দর্শনার্থীদের জটলা দেখা যেতো৷ রুপালি পর্দার তারকাদের একনজর দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমতো৷ এখন এফডিসিতে সাধারণ মানুষদের এত হুড়োহুড়ি নেই৷ প্রবেশপথের ভেতরে ডানদিকে অলস সময় কাটান নিরাপত্তাকর্মীরা৷ বাঁ-দিকের নিরাপত্তা শাখার কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে এফডিসি ঘুরে দেখা যায়৷ দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ১০৫ টাকা৷
স্মৃতিতে ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোর
সাত একরেরও বেশি এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা এফডিসিতে শুটিংয়ের জন্য ৯টি ফ্লোর ছিল৷ কিন্তু ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোরসহ পুরনো এডিটিং ভবন, সুইমিং পুল ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ সেই মাটিতে এখন ঘাসের সমাহার৷ এখানেই ৯৪ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠবে আধুনিক স্থাপনা বিএফডিসি কমপ্লেক্স৷ এফডিসির আয় বাড়াতেই এই উদ্যোগ৷ তবে অন্য ফ্লোরগুলোর ব্যাপারে যেন কর্তৃপক্ষ উদাসীন৷ বেশিরভাগ ফ্লোরে ময়লার আস্তর জমে গেছে৷
বেশিরভাগ ফ্লোরে তালা
বেশিরভাগ ফ্লোর এখন বন্ধ৷ এখানে সাধারণত শিফট অনুযায়ী ফ্লোর কিংবা স্পট ভাড়া দেওয়া হয়৷ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সকালের শিফট ৷ বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিকেলের এবং রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বিশেষ শিফট ৷ চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ২ লাখ টাকা জামানত দিয়ে ক্যামেরা ছাড়া সব যন্ত্রপাতি-যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা যায়৷ ক্যামেরাসহ যন্ত্রপাতি-যন্ত্রাংশ ব্যবহার করলে আরো ১ লাখ টাকা দিতে হয়৷
সবচেয়ে দামি ফ্লোর
একটি ফ্লোর ‘মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিমের নামে৷ আর কোনো অভিনয়শিল্পীর নামে এখনো কোনো ফ্লোর নেই৷ মুক্তিযোদ্ধা বলেই ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মৃত্যুর পর এই সম্মান পেয়েছেন তিনি৷ এফডিসির সবচেয়ে দামি এই ফ্লোরে সেট নির্মাণকালীন প্রতি শিফটের ভাড়া ৫ হাজার ১০০ টাকা৷ এর দোতলায় সেট বানালে প্রতি শিফটে গুণতে হয় বাড়তি ৩ হাজার ৫০০ টাকা৷ শুটিংয়ের সময় ২ নম্বর ফ্লোরের ভাড়া প্রতি শিফটে ১৮ হাজার ৫৪০ টাকা৷
৭ নম্বর ফ্লোরে ‘জয় বাংলা’
করোনা মহামারিতে থমকে গিয়েছিল এফডিসি৷ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এখন টুকটাক কাজ হচ্ছে৷ ৭ নম্বর ফ্লোরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে টানা একসপ্তাহ সরকারি অনুদানের ছবি ‘জয় বাংলা’র শুটিং হয়েছে৷ মুনতাসীর মামুনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে সাজানো হয়েছে এর চিত্রনাট্য৷ কাজী হায়াতের পরিচালনায় এতে কামাল চরিত্রে বাপ্পি চৌধুরী ও দোলার ভূমিকায় আছেন জাহারা মিতু৷
শুটিং কমার আরেক কারণ
দেশে একসময় যত চলচ্চিত্র তৈরি হতো তার সত্তর ভাগের কাজ এখানেই করতেন নির্মাতা ও কলাকুশলীরা৷ কিন্তু এখন উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন বাড়িঘর ভাড়া নিয়ে শুটিং হয়৷ এফডিসিতে সেট নির্মাণ করে আলাদা বিদ্যুৎ বিল, ক্যামেরা ও লাইট ভাড়া দিতে অনেক টাকা লাগে৷ তাই এফডিসির বাইরে কাজ করেন বেশিরভাগ নির্মাতা৷ অন্যত্র শুটিংয়ের সময় আসবাবপত্রসহ ভাড়া পাওয়া যায়৷ আলাদা বিদ্যুৎ বিলও দিতে হয় না৷
সেট নির্মাণের তোড়জোর
দুটি ফ্লোর ভেঙে ফেলায় এফডিসিতে ফ্লোর আছে ৭টি৷ এর মধ্যে ১ নম্বর ফ্লোরে সেট নির্মাণের তোড়জোর চোখে পড়েছে৷ বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ের প্রস্তুতি চলছিল৷ সেট নির্মাণকালে ১, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ফ্লোরের ভাড়া প্রতি শিফটে ২,৫৫০ টাকা৷ ৭ নম্বর ছাড়া এসব ফ্লোরে শুটিংকালীন প্রতি শিফটে গুণতে হয় ৬,৫০০ টাকা৷ ৭ নম্বর ফ্লোরে শুটিংকালীন ভাড়া প্রতি শিফটে ৯,২৭০ টাকা৷ ১, ৫ ও ৬ নম্বর ফ্লোরে শুটিংয়ের জন্য ভাড়া ৬,৫০০ টাকা৷
টেলিভিশন চ্যানেলের শুটিং বেশি
এফডিসিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্রের চেয়ে বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক কিংবা টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানের কাজ হচ্ছে বেশি৷ ৮ নম্বর ফ্লোর তো অঘোষিতভাবে ‘এটিএন বাংলা ফ্লোর’-এর পরিচিতি পেয়ে গেছে! চ্যানেলটি কয়েক বছর ধরে এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কাজ করছে৷ সেখানে সেট নির্মাণকালে প্রতি শিফটের ভাড়া ৩,৬৭২ টাকা৷ আর শুটিংকালীন প্রতি শিফটের ভাড়া ৭,৫০০ টাকা৷
মরচে ধরা নিরাপত্তা নির্দেশিকা
এফডিসির ৮ নম্বর ফ্লোরের করিডোর থেকে নামলেই দেখা যায় মরচে ধরে যাওয়া একটি নিরাপত্তা নির্দেশিকা৷ এর ভেতরে গাছগাছালির সান্নিধ্যে কয়েকটি বসার বেঞ্চ৷ ক্লান্ত হলে অনেকে বেঞ্চে বসে সময় কাটান৷ সাধারণত সিনেমার ‘এক্সট্রা’ শিল্পীদের আনাগোনা দেখা যেতো এখানে৷ তখন লোকেলোকারণ্য থাকতো এফডিসি৷ সব পথেও শুটিং হতো৷ পরিচালক ‘কাট’ না বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো সবাইকে৷ সুবর্ণ সেই সময় আর নেই বললেই চলে৷
রূপসজ্জা কক্ষ
এফডিসিতে রূপসজ্জার কক্ষ আছে মোট ১৪টি৷ প্রতিটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত৷ আলোকিত আয়নার সামনে বসে সাজগোজের জন্য আছে চেয়ার৷ আরো আছে আলাদা বসার ব্যবস্থা৷ রূপসজ্জা কক্ষগুলোর একেকটির ভাড়া ২ হাজার ১০০ টাকা৷ রূপসজ্জা কক্ষে শুটিং করলে প্রতি শিফটের ভাড়া ২ হাজার টাকা৷ অভিনয়শিল্পীরা শুটিংয়ের ফাঁকে বেশিরভাগ সময় রূপসজ্জা কক্ষেই কাটান৷ কিন্তু এখন এফডিসিতে কাজ কমে যাওয়ায় এগুলো প্রায় সবসময়ই ফাঁকা পড়ে থাকে৷
‘ভিআইপি’ ক্যান্টিন
এফডিসিতে সবার খাবারের জন্য আছে একটি ক্যান্টিন৷ এর সাইনবোর্ডে লেখা ‘বিএফডিসি-ভিআইপি ক্যান্টিন’৷ ক্যান্টিনটির স্বত্ত্বাধিকারী প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া দেন এফডিসি কর্তৃপক্ষকে৷ শুটিং কম এবং করোনার কারণে ব্যবসায় ভাটা পড়েছে৷ এখানে চা, সিঙ্গাড়া, ভাত, মাছ, মাংস, পিঁয়াজু, পুরি ইত্যাদি মেলে৷ ক্যান্টিনের ঠিক পাশেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন কলা-কুশলী ও কর্মচারী লীগের কার্যালয়৷
সমিতির গল্প
ক্যান্টিনের পাশের সরু পথ দিয়ে হেঁটে গেলেই পরিচালক সমিতি৷ চলচ্চিত্র পরিচালকদের সংগঠনের কার্যালয়ের বারান্দায় বসে পরিচালকরা খোশগল্প করেন৷ এফডিসিতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মোট সাতটি সমিতির কার্যালয়ের বাকিগুলো হলো- প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থা, সিনে ডিরেক্টোরিয়াল অ্যাসোসিয়েটস অব বাংলাদেশ (সিডাব), ফিল্ম এডিটরস গিল্ড এবং চলচ্চিত্র ব্যবস্থাপক সমিতি৷
শিল্পী সমিতির সামনে জলাবদ্ধতা
পরিচালক সমিতির পাশেই চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন ‘শিল্পী সমিতি’র কার্যালয়৷ এর সামনে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়৷ এ কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের৷ বিশেষ করে নারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় একটু বেশি৷ পানির কারণে পিছলে থাকা পথে হাঁটতে গিয়ে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে৷ ভারী বৃষ্টি হলে এফডিসির বেশকিছু জায়গায় এরকম জলাবদ্ধতা দেখা যায়৷
ফুলের বাগান
শিল্পী সমিতি কার্যালয়ের সামনে রয়েছে একটি বাগান৷ একপাশে কয়েকটি নারিকেল গাছ৷ এখানে সবুজের সমারোহে একসময় অনেক সিনেমার শুটিং হতো৷ বাগানে প্রতি শিফটে ২ হাজার টাকা করে সেট নির্মাণ ও শুটিংয়ের ভাড়া৷ হরেক রকমের ফুল রয়েছে বাগানে৷
কড়ই তলা
সিনেমা তৈরির কারখানা এফডিসির অন্যতম ব্যস্ত জায়গা ছিল এটি৷ এখন কড়ই তলায় নেই চিরচেনা কর্মচাঞ্চল্য৷ গাছের নীচে কয়েকটি বেড়া পড়ে আছে৷ একপাশে অনেকদিন না চালানো একটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকার রাখা৷ গাড়ি দুটিতে ময়লা জমে আছে৷ কড়ই তলায় সেট নির্মাণকালে প্রতি শিফটের ভাড়া ১ হাজার টাকা৷ পাঁচদিনের বেশি লাগলে তা দাঁড়ায় ৩ হাজার টাকায়৷ শুটিং চলাকালে প্রতি শিফটে গুনতে হয় ৩ হাজার টাকা৷
এফডিসি মানেই শুটিং
বিভিন্ন ভবনের সিঁড়ি, করিডোর, লবি, ছাদ, ৮ ও ৯ নম্বর ফ্লোরের মাঠসহ চারদিকে শুটিং হতো একসময়৷ এখন কালেভদ্রে এসব স্থানে নির্মাতা ও তারকাদের উপস্থিতি দেখা যায়৷ স্পট ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি এফডিসি কর্তৃপক্ষ জনবল সরবরাহ করে৷ নির্মাতার চাহিদার আলোকে ক্যামেরা ও লাইট শাখাসহ অতিরিক্ত জনবল দেওয়া হয়৷ কেউ চাইলে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষেও শুটিং করতে পারেন৷ এজন্য প্রতি শিফটে গুনতে হয় ১০ হাজার ৩০০ টাকা৷
জহির রায়হান কালার ল্যাব
এফডিসির কর্মকর্তাদের কর্মস্থল প্রশাসনিক ভবনের নীচতলায় প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে জহির রায়হান কালার ল্যাব৷ ১৯৮৩ সালের ১৪ মার্চ এর উদ্বোধন হয়৷ নেগেটিভ ফিল্মের যুগে চলচ্চিত্রের সূতিকাগার এফডিসির আয়ের সিংহভাগ ল্যাব থেকেই আসতো৷ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিনেমা নির্মাণ শুরুর পর ধীরে ধীরে ল্যাবে কাজ কমতে থাকে৷ এখন আর নেগেটিভ ব্যবহৃত হয় না৷ তাই কয়েক বছর ধরে ল্যাব প্রায় বন্ধ বলা চলে৷
মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স
সুস্থ বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়তা ও অনুপ্রেরণা দিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয় এফডিসি৷ ডিজিটাল যুগে এখানকার অন্যতম সংযোজন মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স৷ নায়ক মান্না স্মরণে এর নামকরণ হয়েছে৷ এখানে নীচতলায় আছে ডিটিএস হলরুম৷ ডিজিটাল প্রযুক্তি সংবলিত ভিডিও সম্পাদনা, রঙ বিন্যাস ও রেকর্ডিং স্টুডিওর সুবিধা রয়েছে এতে৷ ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই কমপ্লেক্সটির উদ্বোধন হয়৷
ঝরনা স্পট
এফডিসির এই জায়গাটা বেশ বিখ্যাত! অনেক চলচ্চিত্রে এই স্পট দেখেছেন দর্শকরা৷ কৃত্রিম উপায়ে বানানো ঝরনা থেকে এখন আর পানি ঝরে না৷ দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলায় পড়ে থাকা ঝরনা স্পটে শুটিং হয় না৷ এখানে সেট নির্মাণকালে প্রতি শিফটের ভাড়া নেওয়া হয় ২ হাজার ৮০০ টাকা৷ আর শুটিং চলাকালীন প্রতি শিফটের ভাড়া ৪ হাজার টাকা৷ ঝরনা স্পটে এখন বেশকিছু সিমেন্টের বস্তা, বাঁশ ও টিন ফেলে রাখা হয়েছে৷ চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবর্জনা৷
ঝরনা স্পটের পুকুর
গাছ-গাছালিতে ঘেরা ঝরনা স্পটের পুকুর দর্শকদের বেশ চেনা৷ রুপালি পর্দায় দেখা যাওয়া এই পুকুরের ওপর সবুজ শেওলার আস্তর জমে গেছে৷ ফোয়ারা নেই৷ পুকুরের ওপর ছোট্ট ব্রিজটি অযত্নে পড়ে আছে৷ পুকুর পাড়ের চারপাশে হাঁটাপথের বেহাল দশা৷ চারদিকে সাজিয়ে রাখা সিমেন্টের ছাতাগুলোর ওপর ময়লা জমে মলিন হয়ে আছে৷ কেউ এদিকে ফিরেও তাকায় না৷ পাশেই চলছে মসজিদ নির্মাণের কাজ৷ এ কারণে এই স্পটে ধুলোবালি আরো বেশি জমছে৷
রঙ-বেরঙের পাথর
অনেক জনপ্রিয় গানের শুটিং হয়েছে এখানে৷ নাচের দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য একসময় এটাই ছিল নির্মাতাদের ‘অটোমেটিক চয়েস’৷ স্বর্ণালি সেই যুগের সাক্ষী এই স্পটে জড়িয়ে আছে শিল্পীদের অনেক স্মৃতি৷ ঝরনা স্পটের একপাশে রঙ-বেরঙের পাথরের ছোট্ট টিলায় ময়লা জমে যাওয়ায় বিবর্ণ লাগছে৷ এক সময় তারকাদের অংশগ্রহণে রোমান্টিক গানের শুটিং হতো টিলার পাশে৷ এখন এই জায়গা নির্জন হয়ে পড়ে থাকে৷ এফডিসির চারপাশেই এমন সুনসান নীরবতা৷
সাউন্ড ডাবিং থিয়েটার ভবন
ঝরনা স্পটের উল্টো দিকেই ডিজিটাল সাউন্ড ডাবিং থিয়েটার ভবন ও এডিটিং ভবন৷ আগে ধারণকৃত দৃশ্যের সঙ্গে মিলিয়ে অভিনয়শিল্পীরা এখানে ডাবিং করেন৷ শব্দগ্রহণ মেশিনের মাধ্যমে ডাবিং করলে প্রতি শিফটের ভাড়া ৫ হাজার ২৫০ টাকা৷ ডিজিটাল ডাবিংয়ের জন্য নেওয়া হয় ৩ হাজার ১৫০ টাকা৷ ডিজিটাল যুগে এফডিসি বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রাংশ রেখেছে৷
মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না করা খাবার
শুটিংয়ের সময় রোজ দুপুরে এফডিসির খাবার উপভোগ করেন কলাকুশলীরা৷ তারকাদের কাছেও এর কদর আছে৷ এফডিসির কয়েক গজ দূরে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ গলিতে অবস্থিত হোটেল থেকে শুটিং স্পটে খাবার আসে৷ মাটির চুলায় কাঠের লাকড়ি দিয়ে রান্না করা খাবারের তালিকায় থাকে ভাত, গরুর কালাভুনা, মুরগির ঝাল ফ্রাই, ছোট ও বড় মাছ, ডাল ভুনা, পাঁচমিশালি সবজি, আলুভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, বেগুন ভর্তা, চিংড়ি ভর্তা, লাউয়ের সবজি, শুঁটকি ভর্তা৷