এপ্রিল ফুল’স ডে’র কাণ্ডকারখানা
পয়লা এপ্রিল মানে যে শুধু বন্ধুবান্ধবকে বোকা বানানো, এমন নয়৷ তার চেয়ে অনেক বড় আকারে লোকজনকে ফাঁকি দেওয়া যেতে পারে৷ বিবিসি কিংবা সুইস রেডিও, ডেইলি মেল থেকে ইজভেস্তিয়া, পয়লা এপ্রিলে ধোঁকা দিয়েছে সবাই৷
গুরুমারা বিদ্যে
১ এপ্রিল, ২০১৪৷ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকুইনাস কলেজের এক প্রফেসর নিয়ম করেন যে, ক্লাস চলাকালীন কোনো ছাত্র-ছাত্রীর মোবাইল বাজলে, তাকে স্পিকারফোনে কথা বলতে হবে৷ সেভাবেই এক ছাত্রীর টেলিফোন বাজে আর খবর আসে যে, ছাত্রীটি গর্ভবতী৷ লজ্জিত প্রফেসর ক্ষমা প্রার্থনা করলে ছাত্রীটি বলেন, তিনি তার প্রেগনেন্সি টেস্টের ফলাফল আশা করছিলেন৷ সন্তান জন্ম নিলে তিনি তার নাম রাখবেন: এপ্রিল ফুল! অর্থাৎ ফোনালাপটি সাজানো৷
রঙিন গন্ডোলা
ভেনিসে যে ধরনের নৌকো চলে, তার নাম গন্ডোলা৷ ষোড়শ শতাব্দীর এক প্লেগ মহামারীর পর থেকে গন্ডোলার রং কালো হয়ে থাকে৷ কাজেই ১৯৯৫ সালের পয়লা এপ্রিল যখন ভেনিসের গ্যাজেত্তিনো পত্রিকা তাদের প্রথম পাতায় খবর দেয় যে, এবার থেকে সব গন্ডোলা রঙচঙে হবে, বলে পৌর পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়৷ কেউই খেয়াল করেননি যে, দিনটা এপ্রিল ফুল’স ডে৷
মারাদোনা যাচ্ছেন মস্কোয়
সালটা ১৯৮৮, স্থান: সোভিয়েত রাশিয়া৷ সেই রাশিয়ার সরকারি ইজভেস্তিয়া পত্রিকা যখন ঘোষণা করে বসে যে, খোদ দিয়েগো মারাদোনা এবার স্পার্টাক মস্কোর হয়ে খেলতে আসছেন আর স্পার্টাক তাঁকে ৬০ লাখ ডলার পারিশ্রমিক দেবে – তখন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতো সংবাদ সংস্থাও সে খবর প্রচার করে৷ পাঠকরা অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে জানান, তারিখটা ১ এপ্রিল! ওদিকে এপি-র যুক্তি: ইজভেস্তিয়া যে ঠাট্টা করতে পারে, তা কে ভেবেছিল?
‘রোগ ব্রা’
১ এপ্রিল, ১৯৮২৷ ব্রিটেনের ডেইলি মেল পত্রিকা খবর দেয় যে, এক ধরনের বক্ষবন্ধনী বিক্রি করা হচ্ছে,যা-তে একটি তামার তার লাগানো থাকার ফলে, সেই তামা নাইলনের ঘষা আর শরীরের উত্তাপে চার্জড হয়ে পড়ে৷ সেই চার্জ থেকে নাকি কাছাকাছি যে সব রেডিও বা টেলিভিশন আছে, তাদের সম্প্রচার বিঘ্ন হয়৷ খবরটা পড়ে স্বয়ং ব্রিটিশ টেলিকমের চিফ ইঞ্জিনিয়ার তাঁর ল্যাবরেটরির নারী কর্মীদের জানাতে বলেন, তাঁরা ঐ ব্রা ব্যবহার করেন কিনা৷
ডিজিটাল বিগ বেন
১ এপ্রিল, ১৯৮০৷ বিবিসি-র ওভারিসজ নিউজ সার্ভিস জানায় যে লন্ডনের ওয়েস্টমিন্সটরের মাথায় বিগ বেন ঘড়িটি ডিজিটাল করে দেওয়া হচ্ছে৷ এমনকি পুরনো ঘড়ির কাঁটাগুলো নাকি প্রথম যে চারজন শ্রোতা টেলিফোন করবেন, তাদের দিয়ে দেয়া হবে৷ এক জাপানি নাবিক তখন অ্যাটলান্টিক মহাসাগর থেকে যোগাযোগ করেন, বিগ বেনের কাঁটা পাবার আশায়৷ তবে ব্রিটেনের লোকজন এতই চটেন যে, বিবিসি-কে বেশ ক’দিন ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়৷
অস্ট্রেলিয়ার মেট্রিক টাইম
পয়লা এপ্রিল, ১৯৭৫৷ অস্ট্রেলিয়ার ‘দিস ডে টুনাইট’ নিউজ প্রোগ্রাম খবর দেয় যে, দেশটি এবার ‘মেট্রিক টাইম’ চালু করতে চলেছে৷ এবার থেকে নাকি ১০০ সেকেন্ডে এক মিনিট, ১০০ মিনিটে এক ঘণ্টা আর ২০ ঘণ্টায় এক দিন হবে৷ এছাড়া সেকেন্ড, মিনিট আর ঘণ্টার নাম বদলে হবে মিলি-ডে, সেন্টি-ডে আর ডেসি-ডে৷ স্বয়ং উপ-প্রধানমন্ত্রী এই ঠাট্টায় যোগ দেন ও নতুন সিস্টেমটির প্রশংসা করেন৷ অ্যাডেলেইডের টাউন হলে সেই মেট্রিক ঘড়ি দেখানো হয়!
চাঁদে নামার আগেই চাঁদামামা
১ এপ্রিল, ১৯৬৭৷ সুইস বেতার তাদের নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ রেখে একটি নিউজ ফ্ল্যাশ দিয়ে জানায় যে, মার্কিন নভোচারীরা সদ্য চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেছেন৷ পরের এক ঘণ্টা নানা আপডেট, প্রতিনিধিদের রিপোর্ট, বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার ইত্যাদি প্রচার করে মশকরাটাকে প্রায় বাস্তব করে তোলা হয়৷ সুইজারল্যান্ডের মার্কিন কর্মকর্তারা নাকি সেলিব্রেট করতেও শুরু করেন৷ নিল আর্মস্ট্রং আর বাজ অলড্রিন চাঁদে নামেন তার দু’বছর পরে৷