1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এটা সংযমের সময়, নিজে বাঁচুন, অপরকে বাঁচতে দিন

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২০ মার্চ ২০২০

করোনা-আতঙ্কের সময়ে একদিকে যেমন কিছু দায়িত্বপূর্ণ আচরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তেমনই আবার দেখা যাচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। 

https://p.dw.com/p/3Zn8U
ছবি: DW/A. Ansari

দিন তিনেক আগে পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে এক দুধ বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরাধ, তিনি 'গোমূত্র খাও, করোনা ভাইরাস তাড়াও' পোস্টার লাগিয়ে গোমূত্র বোতলে ভরে  বিক্রি করছিলেন। এক শিসি পাঁচশ টাকা। ভারতে অবশ্য গোমূত্র বিক্রি করাটা অপরাধ নয়। চাইলেই অনলাইনে তা কেনা যায়। অনেক দোকানে তা বোতলে ভরে বিক্রি হয়। কিন্তু দুধ বিক্রেতা মাবুদ আলি শাস্তি পেয়েছেন তাঁর ওই বিতর্কিত দাবির জন্য, গোমূত্র খেলে করোনা হবে না। লোক ঠকানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। নিঃসন্দেহে পুলিশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য। করোনার আতঙ্ক যখন ছড়াচ্ছে, তখন এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কোনওভাবেই কাম্য নয়। বরং পুলিশ প্রথমেই ব্যবস্থা নিয়ে নেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে অন্ততপক্ষে করোনা-রোধের দাবি নিয়ে প্রকাশ্যে গোমূত্র বিক্রি বন্ধ হবে। সাধ করে জেলে যেতে অন্তত কেউ চাইবেন বলে মনে হয় না।

এরকমই দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মুরলীধরন। তিনি কেরলে একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কিন্তু সেখানে একজন চিকিৎসকের করোনা ধরা পড়ে। মুরলীধরন কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেন। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁর সংক্রমণ হয়নি। তারপরেও তিনি নিজেকে কোয়ারান্টিন করে রেখেছিলেন। 

কিন্তু মুশকিল হল , করোনার বাজারে এই ধরনের দায়িত্বশীল কাজের পাশাপাশি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজেরও বন্যা বইছে। এ এমন এক সময়, যখন সকলের সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করার কথা। করোনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য সচেষ্ট থাকার কথা। কিন্তু অনেকেই তাঁদের এই প্রাথমিক কর্তব্যে অবহেলা করছেন। গোমূত্রের কথাই ধরা যাক। মাবুদ আলির গোমূত্র-কাহিনি নিয়ে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, গোমূত্র খুব উপকারী, তিনি আগে খেয়েছেন, পরেও খাবেন। তিনি চাইলে খেতেই পারেন। গোমূত্র তো কোনও নিষিদ্ধ জিনিস নয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই তো নিজ মূত্র পান করতেন। কিন্তু কোনওরকম বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়াই গোমূত্র পান করলে করোনা হয় না, এই দাবি ভয়ঙ্কর। প্রত্যাশিত ছিল, তিনি গোমূত্রের জয়গান না করে মাবুদকে ভর্ৎসনা করবেন।

আর এই দাবি নিয়ে দিল্লির বুকে রীতিমতো গোমূত্র পার্টি করলেন চক্রাপানি মহারাজ এবং তাঁর সংগঠন অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভা। শ'দুয়েক লোক মাটির ভাড়ে দিব্যি গোমূত্র পান করলেন এবং দাবি করলেন, করোনা তাঁদের ছুঁতে পারবে না। অসমের বিজেপি বিধায়ক সুমন হরিপ্রিয়া তো আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে জানালেন, করোনা তো বটেই, গোমূত্র ও গোবরে ক্যান্সারও সেরে যায়। এই ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন উক্তি ও কাজের পরেও তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না? ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডঃ পার্থ প্রতিম বোস জানিয়েছেন, গোমূত্রে করোনা সারে এমন কোনও প্রমাণ নেই। বরং তাঁর কাছে উত্তরাখ থেকে রোগী এসেছেন, যিনি গোমূত্র পান করে গুরুতর রোগ বাঁধিয়েছেন। 

করোনার বাজারে প্রত্যেকের সতর্ক ও সজাগ থেকে এবং ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি পালন করাটা খুবই জরুরি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বারবার সংযমের ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর দলের বিধায়ক, নেতারা সংযম পালন করছেন না। সংযম পালন করেননি পশ্চিমবঙ্গের সেই যুগ্ম সচিব, যাঁর ছেলে লন্ডন থেকে ফিরেছিল। তাকে হাসপাতাল বলেছিল, বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে যেতে, যেখানে সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসা হয়। সেই হাসপাতালে যাওয়া দূরস্থান, উল্টে শপিং মল, বাজারে ঘুরে বেড়িয়েছে ছেলে। পরের দিন মা তাকে নিয়ে আইডি হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন নবান্নের সচিবালয়ে। মিটিং করলেন, কাজ করলেন, লোকের সংস্পর্শে এলেন। দেখা গেল, ছেলেটি করোনায় আক্রান্ত। আর যাঁদের সঙ্গে সেই যুগ্ম সচিবের দেখা হয়েছিল, তাঁরা সকলে গেলেন কোয়ারান্টিনে। তার মধ্যে রাজ্যের স্বারাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও আছেন।

একইরকম ভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছেন গায়িকা কণিকা কাপুর। তিনি লন্ডন থেকে ফিরেছেন। বিমানবন্দরে পরীক্ষা করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর তিনটি পার্টি করেন। সেখানে অনেকের সঙ্গে মিশেছেন। তার মধ্যে একজন সাংসদও আছেন। সেই সাংসদ আবার নিয়মিত সংসদে উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি কণিকার শরীর খারাপ হয়। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তিনি করোনায় আক্রান্ত। ফলে  তাঁর কাছ থেকে কতজন করোনায় আক্রান্ত হবেন কে জানে। একজনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে ভুগবেন অনেকে। 

Goutam Hore
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলেছবি: privat

দিল্লির শাহিনবাগে এখনও বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন মহিলারা। শুধু বাচ্চা ও বয়ষ্কদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু দলে দলে মহিলারা এখনও বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। মক্কা বন্ধ, মুম্বইয়ে সিদ্ধি বিণায়ক মন্দির, শিরডির সাই বাবা মন্দির বন্ধ, দিল্লিতে স্কুল, কলেজ, স্পা, জিম, নাইটক্লাব বন্ধ। ২০ জনের বেশি লোকের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা আছে। অনেক রাজ্যে বড় শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অথচ শাহিনবাগের আন্দোলনকারীরা সেই নিষেধাজ্ঞা না মেনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অন্তত এই কঠিন সময়ে শাহিনবাগের উচিত ছিল, হয় কয়েকজন মিলে প্রতীকী বিক্ষোভ দেখানো অথবা আপাতত প্রতিবাদ স্থগিত রেখে পরে অবস্থা স্বাভাবিক হলে, তখন আবার পথে নামা। 

করোনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য এই  সংযমটুকু দরকার, একেবারে প্রাথমিক দায়িত্ববোধের পরিচয়টা খুবই জরুরি। কারণ, একজনের থেকেই করোনা হাজার জনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যাঁরা বিদেশ থেকে আসছেন, তাঁরা মুলরীধরনকে অনুসরণ করুন। এটা বেপরোয়া হওয়ার সময় নয়। বরং নিজেকে বাঁচিয়ে অন্যদের বাঁচানোর সময়। এই সচেতনতাটুকু বজায় রেখে সঠিক আচরণ করার সময়।